একাদশ সাজাতে কন্ডিশন ভাবাচ্ছে বাংলাদেশকে
কনকনে ঠাণ্ডায় আগের দিনই বাংলাদেশের দলপতি সাকিব আল হাসান জানিয়ে দিয়েছেন তারা এখানে শিরোপা জিততে আসেননি। ভারত এসেছে শিরোপা জিততে। সেমি ফাইনালের সম্ভাবনা জাগ্রত থাকার পরও সাকিব বলেছিলেন ভারতকে হারাতে পারলে হবে আপসেট।
কিন্তু আপসেট ঘটনোর জন্য প্রয়োজন একটি ভালো কম্বিনেশন। সেই কম্বিনেশন সাজাতে বাংলাদেশকে বার বার সিদ্ধান্ত বদলাতে হচ্ছে। এ রকমটি হওয়ার কারণে অ্যাডিলেডের আবহাওয়া। ম্যাচের আগের দিন যখন সাকিব এ কথা বলেছিলেন তখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। প্রচণ্ড বাতাস। হাড় কাঁপানো শীত। যদিও সংবাদ সম্মেলনে সাকিব একাদশ নিয়ে কোনো কথা জানাননি। সরাসরি কিছু জানাননি। মনে মনে হয়ত একটি পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন। কিন্তু আজ তাকে আবার সে পকিল্পনা পরিবর্তন করতে হচ্ছে! কারণ আজকের আবহাওয়া সম্পূর্ণ বিপরীত। রোদের দেখা মিলেছে। তাপমাত্রাও বেশ ভালো। ১৫ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়ায় নাতিশীতোষ্ণ ভাব। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য অনেকটাই আদর্শ। এটি সকালের আবাহাওয়া। কিন্তু অ্যাডিলেডের আবাহাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। যখন তখন পরিবর্তন আসতে পারে এবং সেটির পূর্বাভাসও আছে। ম্যাচ চলাকালীন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হতে পারে কার্টেল ওভারের ম্যাচ। কাজেই সেরা একাদশ নির্বাচন করতে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে। এ এক মধুর সমস্যা।
কন্ডিশন যদি মেঘাচ্ছন হয়, কিংবা বৃষ্টিবিঘ্নিত হয়, তা’হলে এক রকম একাদশ, সে ক্ষেত্রে চার পেসার খেলার সম্ভাবনা বেশি। মোস্তাফিজ-তাসকিন-হাসানের সঙ্গে শরিফুল অথবা এবাদতের যে কোনো একজনকে দেখা যেতে পারে। বৃষ্টি না হলে আরেক রকম। সে ক্ষেত্রে ৮ ব্যাটার নিয়ে খেলা একাদশে একজন ব্যাটসম্যান কম খেলিয়ে একজন বাঁহাতি স্পিনার বাড়ানো হতে পারে। তখন সুযোগ হয়ে যাবে নাসুম আহমেদের। নাসুমকে খেলানোর আরকেটি কারণ হলো ভারতের সংখ্যাধিক ডানহাতি ব্যাটসম্যানের প্রাধান্য। এই সব মারকুটে ব্যাটাররা আবার বাঁহাতি স্পিনের বিপক্ষে কিছুটা অস্বস্তিবোধ করে থাকেন। সাকিবের সঙ্গে নাসুম যোগ হলে এখানে ভারতীয় ব্যাটমম্যানদের অস্বস্তিটা আরেকটু বেড়ে যাবে। নাসুম কিংবা একজন পেসার বেশি খেলানো হলে সে ক্ষেত্রে বাদ পড়বেন ইয়াসির আলী। আবার এমনও হতে পারে ‘আপসেট’ ঘটানোর লক্ষ্য থাকা বাংলাদেশ দল জয়ী একাদশে কোনো পরিবর্তন নাও আনতে পারে।
যে চিন্তায় মগ্ন বাংলাদেশ দল, ভারতীয় দলও তার বাইরে নয়। দুই দলেরই পয়েন্ট সমান। নেট রানে ভারত এগিয়ে। সেমিতে যেতে হলে তাদেরও জয় প্রয়োজন। সাকিব আপসেটের কথা বললেও ভারতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড় অবশ্য বাংলাদেশকে মোটেই হালকাভাবে দেখছেন না জানিয়ে সমীহ করার কথা বলেছেন। দুই দলকেই তাই একে অপরের কথা ভাবার পাশাপাশি কন্ডিশন নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। দুই দলের লড়াইটা এখন প্রথমে ক্রিকেটের আজন্ম শত্রু বৃষ্টির সঙ্গে।
প্রকৃতির এ রকম বৈরি আচরণের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারতে দ্বৈরথে মাঠের বাইরে যে উত্তেজনার পারদ ছড়িয়ে পড়ে, এবার সেখানে ভাটা পড়েছে। সাকিবতো আগেই জানিয়ে দিয়েছেন ভারতকে হারানোর কথা ভাবছেন না। হারাতে পারলে হবে আপসেট। সাকিবের প্রেস কনফারেন্সে ভারতকে নিয়ে একাধিক প্রশ্ন হলেও রাহুল দ্রাবিড়ের প্রেস কনফারেন্সে বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতীয় সাংবাদিকরা একটিও প্রশ্ন করেননি। যে একটি মাত্র প্রশ্ন হয়েছিল তা করেছিলেন এক বাংলাদেশি সাংবাদিক। এই দুই প্রেস কনফারেন্সই বুঝিয়ে দেয় ম্যাচের সেই উত্তেজনাকর আবহ অনুপস্থিত।
বাংলাদেশ-ভারত এখন পর্যন্ত ১১ বার মোকাবিলা করেছে। যেখানে বাংলাদেশের জয় মাত্র একটি, ভারতের জয় ১০টিতে। ২০১৯ সালে ভারত সফরে ৩ ম্যাচের দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে দিল্লিতে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটে জিতে চমক দেখিয়েছিল। কিন্তু পরের ২ ম্যাচ হেরে সিরিজ হেরেছিল।
এমপি/আরএ/