জিতলেও বাংলাদেশ হারলেও বাংলাদেশ
ব্রিসবেনে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা ৩ হাজারের মতো। আর ব্রিসবেনের গ্যাবা স্টেডিয়ামের ধারণ ক্ষমতা ৪২ হাজার। যে কারণে আজ বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ গ্যাবা স্টেডিয়াম ফাঁকাই থাকার কথা। হয়েছেও তাই। উপস্থিত দর্শকদের অধিকাংশ বাংলাদেশি থাকার পরও স্টেডিয়ামের অধিকাংশ আসনই ছিল ফাঁকা। বাংলাদেশের হাজার খানিক দর্শক সারাক্ষণ মাতিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশ বাংলাদেশ ধ্বনি তুলে।
দর্শক সংখ্যা আরও বেশি হতে পারত অনেক দর্শক টিকিট ফেরত দিতে অনলাইন রি সেইল দিয়ে রেখেছেন। মাঠে যে দর্শকরা এসেছিলেন তাদের সবাই কিন্তু ব্রিসবেনে বসবাসরত নন। সিডনি থেকেও অনেকেই এসেছেন। আবার বাংলাদেশে থেকেও প্রায় একশর মতো দর্শক মাঠে উপস্থিত ছিলেন। আবার ব্রিসবেনের অনেক দর্শক বাংলাদেশ দলের বাজে খেলার পাশাপাশি তাদের একটি অনুষ্ঠানে এসে সাকিবের তাচ্ছিল্য মনোভাবের কারণে খেলা দেখার ইচ্ছে বাদ দিয়ে দেন।
আসলে ব্রিসবেনে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশেন ম্যাচ ছিল আনন্দ-বেদনার অম্ল-মধুরতা। সাকিবকাণ্ড ভুলে গিয়ে যারা মাঠে এসেছিলেন তাদের কণ্ঠে ছিল ‘জিতলেও বাংলাদেশ হারলেও বাংলাদেশ।’ ব্রিসবেনে প্রায় ২৫ বছর ধরে বসবাস করছেন ঢাকার ফার্মগেট এলাকার বাসিন্দা একেএম মুন্না। পরিবার-স্বজনদের প্রায় বিশাল এক বহর নিয়ে এসেছেন খেলা দেখার জন্য।
তার স্ত্রী রাত্রি ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’ গাানটি গাইতে গাইতে জানান, বাংলাদেশের খেলা মাঠে বসে দেখব এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। খেলা দেখার জন্য সাংসারিক অনেক কাজ আগে থেকেই গুছিয়ে রাখতে হয়েছে তার। খেলা দেখতে আসা মুক্তির মাঝে দেখা গেছে ‘মুক্তি’র আনন্দ। মাঠে ঢোকার আগে তার উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশে ছিল যেন বাংলাদেশ জিতে গেছে। আজ বাংলাদেশ জিতবে এই আশা তার অন্তরে প্রবলভাবে বিরাজ করছে।
তাদের সঙ্গেই এসেছেন তাদের আত্মীয় পলা। তারাও এসেছেন সিডনি থেকে স্বপরিবারে। সিডনিতেও তারা খেলা দেখতে গিয়েছিলেন। সেখানে হারলেও ব্রিসবেনে বাংলাদেশ জিতবে বলে তার দৃঢ় বিশ্বাস। পলার সঙ্গে এসেছেন সিডনিতেও খেলা দেখা প্রাপ্য, নাবিলও।
ঢাকা থেকে বাংলাদেশের খেলা দেখার জন্য এসেছেন তপু, সাজ্জাদ, ফটিক, সাইফুল, মোহাম্মদ আলীসহ আরও অনেকে। দেশের বাইরে প্রায় সময় তারা বাংলাদেশের খেলা দেখতে ছুটে যান। সবাই দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত। জয়-পরাজয়ের ঊর্ধ্বে উঠে মাঠে বসে দেশকে সমর্থন দিতে, খেলা দেখতে তাদের ভালো লাগে।
ব্রিসবেন শহর থেকে একটু দূরে থাকেন নাজিম। এসেছেন বন্ধুবান্ধব নিয়ে। ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ বৃষ্টির কারণে তার দেখা হয়নি। তাই এবার আর সে সুযোগ মিস করতে চাননি।
ফারহানা এসেছেন ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে। বাচ্চাকে নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশকে চিনাতে, বাংলাদেশকে জানতে। তার কাছে আজ ঈদের আনন্দের মতো লাগছে।
২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের খেলা দেখতে এসেছিলেন আলম। কিন্তু বৃষ্টির কারণে খেলা পরিত্যক্ত হওয়াতে আর খেলা দেখার সুযোগ হয়নি। এবার আর না হওয়ার কোনো শঙ্কা তার মাঝে নেই। খেলা হবে এবং বাংলাদেশ জিতবে-এটি তার দৃঢ বিশ্বাস।
এমপি/এসএন