বাংলাদেশকে বাজে টি-টোয়েন্টি খেলার ‘সনদ’ দিয়েছিল জিম্বাবুয়েই
এক দেশ, এক মহাদেশ অস্ট্রেলিয়া। এমনিতেই লোক সংখ্যা আয়তনের তুলনায় অনেক কম। প্রবাসীদের কারণে সিডনি কিংবা মেলবোর্নে সেটি খুব বেশি নজরে না পড়লেও ব্রিসবেনে যেন তা প্রকটভাবে নজরে পড়ে। চলতি পথে লোকজন চোখে খুবই কম পড়ে। এর কারণে এখানে লোক সংখ্যাও কম। প্রবাসীদের বসবাসও কম। বাংলাদেশিদের সংখ্যাও কম।
তাইতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে উত্তাপ খুব একটা চোখে পড়েনি। এর একটি অন্যকম কারণ হতে পারে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে দুই খর্ব শক্তির দলের লড়াই। আবার বাংলাদেশ খেলছেও খুবই বাজে। যে কারণে ব্রিসবেনে দুটি প্রীতি ম্যাচ নিয়ে যে রকম আগ্রহ ছিল প্রবাসী বাংলদেশিদের মধ্যে, আগামীকালের ম্যাচে সেরকমটা নেই, অনেক ভাটা পড়েছে।
আবুশ কাসেম মুন্না নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি জানালেন অনেকেই ম্যাচের টিকিট পুনরায় বিক্রি করার জন্য অনলাইনে জানিয়েছেন। এই হলো ম্যাচ নিয়ে খণ্ড চিত্রের একটি। দর্শক কম হোক আর বেশি হোক খেলা কিন্তু যথাসময়েই শুরু হবে গ্যাবায় সকাল ৯টায়।
বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ নিয়ে দর্শক আগ্রহে ভাটা পড়লেও দুই দলের মধ্যে কিন্তু আগের সেই উত্তেজনা ফিরে এসেছে, যখন নিচের সারির এই দুই দল একে অপরের একে হারতে চাইতো না। এই দৃশ্য ফিরে এসেছে বাংলাদেশ দলের সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে সফরে। যেখানে বাংলাদেশ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজই খুইয়ে ছিল। ওয়ানডে সিরিজ হারানো অপ্রত্যাশিত হলেও টি-টেয়েন্টি সিরিজ হারানো কিন্তু প্রত্যাশিত ছিল না। এই সিরিজ হারানোর মাঝে জিম্বাবুয়ে চূড়ান্ত সনদ দিয়েছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ আসলেই বজে সময় পার করছে।
টি-টেয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের পতন শুরু হয়েছিল ২০২১ সালের বিশ্বকাপ থেকে। সেটিরই যেন চূড়ান্ত মঞ্চায়ন হয় জিম্বাবুয়ের কাছে সিরিজ খোয়ানোর পর। এরপরই যায় যায় রব উঠে। সেখান থেকে কিন্তু বাংলাদেশ এখনো বের হয়ে আসতে পারেনি। আগামীকাল যে জিম্বাবুয়েকে বাংলাদেশ পাবে, সেই জিম্বাবুয়ে আরও শক্তিশালী, মনোবল তুঙ্গে। তাদের এ রকম তুঙ্গে থাকার কারণ আগের ম্যাচেই পাকিস্তানকে হারিয়ে চলতি আসরেও সবচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দিয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের মনোবল তলানিতে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে কোনো রকম ৯ রানে জয় পেলেও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরেছিল ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। যদিও এমন হারের পরও টেকনিকাল ডিরেক্টর শ্রীধরন শ্রীরাম খেলোয়াড়দের মনোবল ঠিক আছে বলে আজ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন! এটি যে তার কথার কথা, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
আগামীকালকের ম্যাচ নিয়ে অবশ্য বাংলাদেশ দল নির্ভার থাকতে চাচ্ছে। ব্রিসবেনে এসেছে বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পরদিনই। এখানে আসার পর বিমানবন্দর থেকে সরাসরি মাঠে চলে গিয়েছিল। তারপর আজ আর অনুশীলন করেনি। ঐচ্ছিক অনুশীলনে যো দিয়েছিল শুধুমাত্র নুরুল হাসান সোহান ও ইয়াসীর আলী রাব্বি। শ্রীধরন অবশ্য আশা করছেন ম্যাচের ফলাফল নিজেদের অনুকূলে নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ দুই ম্যাচে তা কাজে লাগাতে। কিন্তু আসরে এখন পর্যন্ত অপরাজিত থাকা জিম্বাবুয়ের সামনে সেমি ফাইনালে উঠার হাতছানি। কারণ তাদের ভান্ডারে জমা হওয়া ৩ পয়েন্ট এসেছে পাকিস্তানকে হারানো ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়া থেকে ১ পয়েন্ট পেয়ে। বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচ জিতলে তারা সেমির পথে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এরপর তাদের সামনে থাকবে ভারত ও নেদারল্যান্ডস। ভারতের বিপক্ষে না পারলেও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয়ের পাল্লা তাদেরই ভারী থাকবে।
একেতো বাংলাদেশের অবস্থা ভালো নয়। মূল কারণ ব্যাটিং নড়বড়ে। সেখানে আবার খেলা হবে গ্যাবায়। গ্যাবার উইকেট মানেই পেসাদের স্বর্গ রাজ্য। তবে তা সাদা পোষাকের ক্রিকেটের জন্য। রঙিন পোষাকের দুনিয়ায় ততোটা ভয়ংকর নয়। কিন্তু বাংলাদেশের নড়বড়ে ব্যটিং লাইনের জন্য কোনো উইকেট যে মানানসই তা হয়তো স্বয়ং ব্যাটসম্যানারও বলতে পারবেন না। গ্যাবার উইকেট নিয়ে দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর শ্রীধরন বলেন, ‘গ্যাবার উইকেট সব সময় যে রকম থাকে সে রকমই মনে হচ্ছে। গতি, বাউন্স সবই থাকবে। শুরুতে থাকতে পারে মুভমেন্টও। তারপরও আমার মনে হচ্ছে ব্যাটিং উইকেট হবে।’ তিনি আশা করছেন আগে ব্যাট করলে ৬০ থেকে ১৭০ রান জমা করা সম্ভব।
গ্যাবায় এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হয়েছে ৬টি। অস্ট্রেলিয়া তাদের প্রথম ম্যাচ খেলেছিল ২০০৬ সালে এইমাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। জিতেছিল ৯৫ রানে। সেই ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া করেছিল ৩ উইকেটে ২০৩ রান। আবার একই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার করা মাত্র ১১৪ রানও সর্বনিম্ন। এই মাঠে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ম্যাচ খেলবে। ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে ভেসে গিয়েছিল।
এমপি/আরএ/