আতঙ্কের নাম সিকান্দার রাজা
সিকান্দার যদি রাজা হয়ে উঠেন তা যেমন জিম্বাবুয়ের জন্য আনন্দের তেমনি প্রতিপক্ষের জন্য আতঙ্কের। রাজা মানেই বাদশাহী ভাব। ২২ গজে এখন সিকান্দার তেমনই এক রাজা। ছোট দেশের বড় তারকা। রাজার বাদশাহী কাণ্ডে ভুপাতিত হয়েছে পাকিস্তান। তাও যেনতেন খেলায় নয়, একেবারে আইসিসির টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরে। টানটান উত্তেজনার ম্যাচ নিষ্পত্তি হয়েছে শেষ বলে। যেখানে জিম্বাবুয়ের জয় এসেছে সবচেয়ে কম ১ রানে। আর এই জয়ে জিম্বাবুয়ে এখন সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখছে তেমনি পাকিস্তানকে ফেলে দিয়েছে বিপাকে। ভারতের বিপক্ষে নিশ্চিত জয় হাতের মুঠো থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর জিম্বাবুয়ের কাছে হারে তাদের সেমিফাইনালে যাওয়ার পথে বিশাল এক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দিয়েছে। ২ ম্যাচ শেষে জিম্বাবুযের পয়েন্ট ৩ পাকিস্তানের ০।
জিম্বাবুয়ে-পাকিস্তানের দলগত শক্তির যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান তাতে পাকিস্তানেরই জয়ী হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি। পাকিস্তানকে এমন বিপদে ফেলে দিয়েছেন এই ‘রাজা’ সিকান্দারই। ব্যাটে-বলে আছেন দারুণ ফর্মে। ব্যাট হাতে ব্যর্থ হলে বল হাতে পুষিয়ে দিচ্ছেন। আবার বল হাতে ব্যর্থ হলে ব্যাট হাতে পুষিয়ে দিচ্ছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাট হাতে মাত্র ৯ রান করলেও বল হাতে ৪ ওভার বোলিং করে মাত্র ২৫ রান দিয়ে পাকিস্তানের শান মাসুদ, সাদাব খান ও হায়দার আলীর উইকেট নিয়ে দলকে অবিস্মণীয় জয় এনে দেওয়ার পাশাপাশি জিতে নেন ম্যাচ সেরার পুরস্কারও। শুধু এই ম্যাচ নয় এর আগে প্রাথমিক পর্বে তিনি আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও তিনি ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৮২ রান ও বল হাতে ৩ ওভারে ২২ রানে ১ উইকেট এবং স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ব্যাট হাতে ৪০ ও বল হাতে ৪ ওভারে ২০ রানে ১ উইকেট নিয়ে অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখান।
সিকান্দার রাজার বিষয়টি এভাবে নিয়ে আসার কারণ রবিবার (৩০ অক্টোবর) বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের ম্যাচ। সিকান্দার রাজার আগুনে পুড়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। জিম্বাবুয়ে সফরে বাংলাদেশ ৩ ম্যাচে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছিল ২-১ ব্যবধানে। বাজে খেলতে থাকা বাংলাদেশ দল এই সিরিজ হারের পর রেজিষ্ট্রার্ড হয়ে গিয়েছিল যে আসলেই বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খুবই বাজে খেলছে। আর বাংলাদেশের ললাটে এমন সিলগালা মেরে দিয়েছিলেন এই সিকান্দার রাজাই। ব্যাটে-বলের দ্যুতিতে একাই তিনি হারিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে।
৩ ম্যাচের সিরিজে তিনি ব্যাট হাতে রান করেছিলেন অপরাজিত ৬৫, ৬২ ও ০। প্রথম ম্যাচে তার অপরাজিত ৬৫ রানের ইনিংস ছিল মাত্র ২৬ বলে। পাশাপাশি বল হাতে ৪ ওভারে কোনও উইকেট না পেলেও রান দিয়েছিলেন মাত্র ২১। পরের ম্যাচে তিনি রান করেছিলেন ৬২। ৩ ওভার বোলিং করে ১৮ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। ম্যাচটি অবশ্য জিযম্বাবুয়ে জিততে পারেনি। ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ সিরিজে সমতা এনেছিল। ফলে সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচে অলিখিত ফাইনালে ব্যাটে হাতে কোনও রান করতে পারেননি। আবার বল হাতেও কোনও উইকেট পাননি। কিন্তু ৪ ওভারে রান দিয়েছিলেন মাত্র ২১। তাই বাংলাদেশকে আগামীকালকের ম্যাচে সিকান্দার রাজা আতঙ্কে ভুগতে হবে। আতঙ্ক আছে গোট দলকে নিয়েও। কারণ সিকান্দার রাজা যেমন শেষ ম্যাচে কোনও অবদান না রাখার পরও অন্যদের অবদানের কারণে জিম্বাবুয়ে ম্যাচ জিতেছিল। আর এখানেই জিম্বাবুয়ে ‘টিম’ হেরে উঠার গল্প। যা বাংলাদেশ দলের জন্য বাড়তি শঙ্কা!
শনিবার (২৯ অক্টোবর) ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর শ্রীধরন শ্রীর মের কণ্ঠে ঝরেছে জিম্বাবুয়েকে নিয়ে সম্মান। তিনি বলেন, ‘জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আমাদের অবশ্যই পরিকল্পনা আছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে তারা যে খেলা উপহার দিয়েছে তাতে তাদেরকে আমি অনেক সম্মান করি। পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের খেলা ছিল অবাক করার মতো। আমি তাদের প্রতিটি বল দেখেছি। পুরো কৃতিত্ব তাদের।’
এমপি/এসআইএইচ