অর্থ লিপ্সু সাকিব তোয়াক্কা করেন না বিসিবির অনুমতির!
সাকিবের খেলোয়াড়ি ইমেজ আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তায় টুইটুম্বর। যেখানেই তিনি যান সবাই তার সঙ্গে ছবি তুলতে কিংবা অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন। সাকিবের এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানও তাকে ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর করে তাদের পন্যের প্রসার ঘটান। সাকিবও তার খেলোয়াড়ি ইমেজকে কাজে লাগিয়ে কাড়ি কড়ি টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন।
অর্থের প্রয়োজন সবারই আছে। অর্থের প্রতি কম-বেশি লোভও সবার আছে। কিন্তু যখনই তা সীমা অতিক্রম করে, তখনই মানুষ অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ে। আইন ভঙ্গ করে, নিয়মের তোয়াক্কা করে না। সাকিবও তার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারেননি। অর্থের প্রতি সাকিবের মোহ সবারই কম বেশি জানা। এই অর্থের মোহে পড়ে তিনি সম্প্রতি বেটউইনারের মতো অনলাইনে বিশ্বব্যাপি জুয়া খেলার প্রতিষ্ঠানের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তি করে তুমুল বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছিলেন। পরে বিসিবির প্রচন্ড চাপে পড়ে তিনি শেষ পর্যন্ত বেটউইনারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু এতে করে সাকিব ও বেটউইনারের যে লাভ হওয়ার তা ঠিকই হয়েছিল। ক্ষতি হয়েছিল বাংলাদেশের সমাজের। চুক্তি বাতিল করলেও সাকিবকে টাকা ফেরত দিতে হয়নি বলে জানা গেছে, আবার বেটউইনারের নামই যেখানে বাংলাদেশের জনগন জানতেন না, সেখানে বেটউইনারের ব্যাপক পরিচিতি পেয়ে যায়। যেটা ছিল তাদের আসল উদ্দেশ্য। আর বেটউইনারের নাম জানার পর দেশে অনলাইনে জুয়া খেলার প্রবনতা বেড়ে গেছে বলে পুলিশ প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।
বেটউইনারের সঙ্গে চুক্তি করার আগে সাকিব কিন্তু বিসিবির অনুমতি নেননি। কারণ বিসিবির চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার হিসেবে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার আগে তাদের অনুমতি নিতে হয়। সাকিব জানতেন তিনি অনুমতি চাইলে বিসিবি তাকে অনুমতি দিবে না। তাই তিনি অনুমতি না নিয়েই চুক্তি করে নিজের ফেসবুক পেইজে দম্ভ করে প্রচার করছিলেন। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে এসে সাকিব একইভাবে বিসিবির অনুমতি না নিয়ে অর্থের বিনিময়ে সিডনিতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আবার সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন।
আইসিসির আসর চলাকালে এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কোনও নিয়ম নেই। তারপরও অংশ নিতে হলে অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু সাকিব জানতেন অনুমতি চাইলে তিনি অনুমতি পাবেন না। তাই তিনি তার নীতি অনুসরন করেন। 'অনুমতি না নিয়ে অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে একাউন্টে টাকা জমা করে নেই। তারপর যা হবার হবে। তখনতো আর টাকা ফেরত দিতে হবে না।' খুব বেশি হলে শোকজ করা হবে। তা ছাড়া সাকিব বেশ ভালো করেই জানেন বেটউইার কাণ্ডে যখন তাকে নুন্যতম শোকজই করা হয়নি, বরং পুরস্কৃত করা হয়েছে টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক করে। এখানে আরও আগে কিছুই হবে না। সেখানে তিনি সফল। এবার তিনি নিয়ম ভঙ্গ করেছেন অধিনায়ক হিসেবে। সঙ্গে আবার নিয়ে গেছেন তাসকিন আহমেদকে।
সাকিব যে অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেছেন সে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল না। ২৫ অক্টোবর ছিল সেই অনুষ্ঠানের তারিখ। আয়োজক অনিক জোয়ারের সঙ্গে কথা বলে এ সংক্রান্ত একটি বিশেষ প্রতিবেদন ঢাকা প্রকাশে ‘বিশ্বকাপ চলাকালীন সিডনিতে সাকিবদের অনুষ্ঠান, অতঃপর’ শিরোনামে ২২ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই অনুষ্ঠন হয়েছে একই তারিখে, শুধু ভেন্যু বদল হয়েছে আর একজন ক্রিকেটার কমেছে। আগের প্রচারনায় সাকিব ও তাসকিনের সঙ্গে লিটন দাসেরও নাম ছিল।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠান বাতিলের কথা বলে পরে আবার কেন করা হলো? এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ২৪ তারিখ হোবার্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেলে পরের দিন ২৫ তারিখ আসবে সিডনিতে। সেভাবেই অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল যদি বাংলাদেশ হেরে যায়. তা’হলে এ রকম অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া শোভনীয় হবে না। সমালোচনা হবে ব্যাপক। আয়োজকদের একটি সূত্রে জানা গেছে সাকিবের পরামর্শেই এমনটি করা হয়েছিল। বাংলাদেশ হেরে গেলে অনুষ্ঠান হবে না। জিতলে হবে। আয়োজকরা সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। যে কারণে ভেন্যুও বাতিল করা হয়েছিল। পরে অন্য ভেন্যুতে করা হয়।
সিডনির অনুষ্ঠানে সাকিব ছিলেন খুবই প্রাণবন্ত। দিলখোলে কথা বলেছেন, মিশেছেন। কারণ এখানে অর্থেরও লেনদেন ছিল। জানা গেছে ১৫ হাজার ডলার তিনি আয়োজকদের কাছ থেকে নিয়েছেন। কিন্তু ব্রিসবেনে গোটা বাংলাদেশ দলকে নিয়ে করা অনুষ্ঠানে সাকিব ছিলেন বিপরীত। কারণ সেখানে কোনও অর্থের লেনদেন ছিল না। এই অনুষ্ঠানে ক্রিকেটারদের যাওয়ার বিষয়ে বিসিবির অনুমতিও ছিল।
আবারও সাকিব নিয়ম ভাঙ্গলেন। আবারও বিসিবি নিশ্চুপ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অজুহাত দিয়ে ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ নীতি অবলম্বন করেছে বিসিবি। খেলা চলাকালীন তারা এ নিয়ে কোনও পদক্ষেপ বা কথা বলতে চান না। সাকিবের এ ঘটনায় বিসিবিও বিব্রত। কি করবেন যেন তারাও বুঝে উঠতে পারছেন না। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুসের জবাব ছিল অনেকটা দায়সারা। সাকিবকে যেতে তারা মানা করেছিলেন জানিয়ে কেন তারা গেল, তাদের জিজ্ঞেস করতে বলে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন?
এদিকে আয়োজকদের একজন অনিক জোয়ারের কাছে ঢাকাপ্রকাশ-থেকে 'অনুষ্ঠান হবে না জানানোর পর কেন পরে আবার তারা করলেন'-জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। এমন কি ক্ষুদে বার্তা দেওয়ার পরও কোনও জবাব মিলেনি।
এমপি/এএস