বাংলাদেশের শোচনীয় হার
ম্যাচ শুরুর আগে প্রবাসী বাংলাদেশি যারা খেলা দেখার জন্য মাঠে প্রবশে করছিলেন, তাদের কপালে ছিল চিন্তার ভাঁজ। এই ভাঁজ বাংলাদেশের জয়-পরাজয় নিয়ে নয়, খেলা হবে কিনা—এ নিয়ে। সিডনির আকাশ থেকে মেঘ সরে গিয়ে সূর্যের দেখা মিললে, পরে তাদের সেই চিন্তার ভাঁজ দূর হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বাজে খেলার কোনো পরিবর্তন হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেনি। হেরেছে ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটি ছিল বাংলাদেশের রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় হার। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা রাইলি রোশোর ১০৯ রানের সুবাদে ৫ উইকটে ২০৫ রান করে। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে মাত্র ১০১ রানে। ওভার খেলেছে ১৬.৩টি। ম্যাচ সেরা হয়েছেন রাইলি রোশো।
ম্যচের ফলাফল সবাইকে হতাশ করলেও দুই ইনিংসের শুরুটা কিন্তু ছিল বাংলাদেশের। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে প্রথম ওভারেই তাসকিন তার শেষ বলে প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমাকে আউট করে ভালো সূচনা এনে দেন। আবার বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম ওভারে সৌম্য শেষ ২ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ১৭ রান তুলে নেন। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ওভারে উইকেট হারানোর পর ঘুরে দাঁড়ায়, সেখানে বাংলাদেশ ভালো সূচনার পর মুখ থুবড়ে পড়ে।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের যে কি পরিমাণ করুণ অবস্থা তা বুঝা যায় স্কোর কার্ডের দিকে দৃষ্টি ফেরালেই। সর্বোচ্চ রান আসে লিটন দাসের ব্যাট থেকে ৩৪। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সৌম্য সরকারের ১৫। এ ছাড়া মিরাজ ১১ ও তাসকিন ১০ রান করেন। আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অংকের রান করতে পারেনি। সব মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রোশো (১০৯) যে রান করেছেন, বাংলাদেশের সবাই মিলেও সেই রান করতে পারেননি। ফলে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জয় দিয়ে আসর শুরু করার পর বাংলাদেশ দল আবার ফিরে গেছে নিজেদের ব্যর্থতার ছাতার নিচে।
অস্ট্রেলিয়াতে বাংলাদেশ দল এমনিতেই দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলার সুযোগ পায় কম। ২২ বছরে মাত্র দুইবার খেলেছে। তাও অস্ট্রেলিয়ার অচেনা ভেন্যু ডারইউন ও কেয়ানর্সে। মূল ভেন্যু মেলবোর্ন, সিডনি, পার্থ, অ্যাডডিলেড কিংবা ব্রিসবেনে খেলার সুযোগ আসে আইসিসিরি আসরে। তারপরও সিডনিতে খেলা হয়নি আগে কখনো। তাই প্রথম খেলার সুযোগ পেয়েছিল। ১৭৪ বছরের পুরানো মাঠে খেলতে নেমে উপহার দিয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের বিপক্ষে এক গাদা রেকর্ড!
দক্ষিণ আফ্রিকায় সূচনায় যেমন তাদের রান দুইশ ছাড়ানোর কথা ছিল না, তেমনি বাংলাদেশের সূচনায়ও কিন্তু এভাবে শতরানের ব্যবধানে হারের কথা ছিল না। সবই হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রোশোর সঙ্গে ডি ককের ব্যাটিং আর বল হাতে অ্যানরিক নরকিয়া ও তাবারিজ শামসির বোলিং। ২ রানে প্রথম উইকেটে পতনের পর রোশো ও কক ১৩.৩ ওভারে ১৬৩ রান যোগ করে দলের রানকে দুইশ ছাড়ানোর পথ করে দেন। ডি কক ৩৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে আউট হন আফিফের বলে সৌম্য সরকারে হাতে ধরা পড়ে। তিনি মাত্র ৩৮ বলে ৬৩ রান করেন। রোশো হাফ সেঞ্চুরি করেন ৩০ বলে, সেঞ্চুরি ৫০ বলে। শেষ পর্যন্ত আউট হন ৫৬ বলে ৮ ছক্কা ও ৭ চারে ১০৯ রান করে সাকিবের বলে লিটনের হাতে ধরা পড়ে।
দক্ষিণ আফ্রিকার রান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সাকিব ৭ জন বোলার ব্যবহার করেও সফল হতে পারেননি। তিনি নিজে ৩ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল ছিলেন। কিন্তু উইকেট না নিয়েও নজর কেড়েছেন মোস্তাফিজ। ইদানিং উইকেট না পাওয়া, খরুচে বোলিং এই সব ছিল তার জন্য নিয়মিত। সেখানে তিনি আজ ৪ ওভারে মাত্র ২৫ রান দিয়ে নিজেকে ফির পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। উইকেট অবশ্য পাননি একটিও।
বাংলাদেশের উড়ন্ত সূচনায় ছেদ পরে অ্যানরিকের কারণে। কাগিসো রাবাদা ও পার্নেলের ওভার থেকে সৌম্য ও নাজমুল ২৬ রান সংগ্রহ করে পাল্টা জবাব দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু তা হতে দেননি প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমা। তিনি তৃতীয় ওভারেই নিয়ে আসেন অ্যানরিককে। সেখানে সফল। প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত হেনে দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দেন। পরের ওভারে ফিরিয়ে দেন সাকিবকেও। প্রথম ওভারে সৌম্য সরকারের হাতে জোড়া ছক্কা হজম করা রাবাদা আবার আক্রমণে এসে ফিরিয়ে দেন আফিফকে। ফলে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতেই বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট। রান ছিল ৪৭। পঞ্চম বোলার হিসেবে বল হাতে তুলে নিয়ে তাবারিজ শামসিও উইকেট পাওয়ার মিছিলে শামিল হলে বাংলাদেশের শোচনীয় হার নিশ্চিত হয়ে যায়। লিটন দাস এক প্রান্ত আগলে রেখে নিজের ধারার বিরুদ্ধে খেলে হারের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শামসির শিকার হয়ে তিনিও বিদায় নেন ৩১ বলে ৩৪ রান করে। বাংলাদেশের ইনিংসে ছয় ছিল ৪টি, চার ৩টি। আর ডট বল ছিল ৪৫টি।
এমপি/আরএ/