নেদারল্যান্ডস কী বাংলাদেশের জন্য শাপেবর না শাঁখেরকরাত
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যেন বাংলাদেশের জন্য অথৈ সাগর। কুল নাই , কিনার নাই। ভাসছে সাগরে। খাচ্ছে হাবুডুবু। কোথায় গিয়ে, কিভাবে ভীড়বে তরি কেউ জানে না? তারপর ভীড়বে তরী। হয়তো বা ডুবতে ডুবতে। আবার ভাসতে ভাসতেও হতে পারে। এটি যেহেতু কোটি কোটি বাঙালির আবেগের তরি, সবারই প্রত্যাশা তরির মাঝি-মাল্লারা জয়ের সাগরে ভাসতে ভাসতেই তরি নিয়ে ভীড়বে তীরে।
কিন্তু জয় যে বাংলাদেশের আকাশের চাঁদ হয়ে উঠেছে। একটি জয়ের জন্য সে কি প্রাণান্তকর চেষ্টা। সেই জয় বাংলাদেশের কাছে এডমন্ড হিলারির হিমালয় জয় করার চেয়েও কঠিন হয়ে উঠেছে। জয় যতই কঠিন হোক, আজ না হোক কাল বাংলাদেশকে চুড়ায় উঠতেই হবে। সেই দিনটি কী তাহলে সোমবার (২৪ অক্টোবর) আসতে পারে? প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস হওয়াতে আশার পালে ঢেউ লেগেছে খুব বেশি করে। এই ম্যাচ দিয়েই বাংলাদেশ তাদের এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মিশনও শুরু করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দলের যে করুণ অবস্থা তাতে করে এত তাড়াতাড়ি এ রকম আশা করা ভুলেও কেউ করতেন না। প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস হওয়াতে মরা নদীতে যেন বান ডেকেছে। কিন্তু সেই মরা নদীতে জোয়ার আনতে হলে সাকিব বাহিনীকে ভালোভাবে সাঁতার কাঁটতে হবে। সেই সাঁতার কাঁটতে গিয়ে যদি আবার ডুবে যাওয়া হয় তাহলে কিন্তু আরও ভয়াবহ সর্বনাশ হয়ে যাবে? শেষ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসের কাছেও হার!
চলতি আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ যে নেদারল্যান্ডসকে পেয়েছে তা পাওয়ার কথা ছিল না। প্রাথমিক রাউন্ডের ‘এ’ গ্রুপে শেষ ম্যাচে নামিবিয়াকে ৭ রানে সংযুক্ত আরব আমিরাত হারিয়ে দিলে দুই দলই বাদ পড়ে যায়। ফলে শ্রীলঙ্কা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন, নেদাল্যান্ডস গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে সুপার টোয়েলভে উঠে আসে। নামিবিয়া না হারলে বাদ পড়ত নেদারল্যান্ডস। শ্রীলঙ্কা হতো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন, আর নামিবিয়া হতো গ্রুপ রানার্সআপ।
শ্রীলঙ্কা হলে বাংলাদেশ হারকে মেনে নিয়েই খেলতে নামত। এটা সবাই প্রত্যাশিত ভেবেই মেনে নিতেন। জয়টা আসলে হতো অপ্রত্যাশিত। এখন নেদারল্যান্ডস প্রতিপক্ষ হওয়াতে জয়টা ‘অত্যাবশাকীয়’ জরুরি হয়ে উঠেছে। এখানে হারটা মেনে নেওয়া যেকোনো ক্রিকেট প্রেমি বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য হবে অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। এটা সত্য টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের সময়টা মোটেই ভালো যাচ্চে না। তাই বলে নেদারল্যান্ডসের কাছেও যদি হারতে হয়, তাহলে আর বাকি থাকে কী? নেদারল্যান্ডস তাহলে বাংলাদেশের জন্য শাপেবর, না শাখেকরাত!
নেদারল্যান্ডসকে দুর্বল দল হিসেবে ভাবা হলেও দল নায়ক সাকিব কিন্তু মোটেই সেই পথে হাঁটতে চান না। তার মতে, বিশ্বকাপে কোনো দলকেই তিনি দুর্বল হিসেবে ভাবতে চান না।
রবিবার (২৩ অক্টোবর) হোবার্টে ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এ বিশ্বকাপে কোনো দুর্বল ও সহজ দল নেই, যেমনটা আপনারা কোয়ালিফায়ারে (প্রথম রাউন্ড) দেখেছেন। যে দলকে আপনারা হয়তো ভেবেছেন জিতবে, তারা জিততে পারেনি। আপনারাই (মিডিয়া) হয়তো এই পারসেপশন্টা আমাদের উপর দিচ্ছেন। তবে আমরা কখনো এভাবে প্রস্তুতি নেইনি। নিজেদের সেরা প্রস্তুতি নেওয়াই একমাত্র পথ। যাতে আমরা সামর্থ্যের সেরাটা দিয়ে খেলতে পারি।
এদিকে নামের কারণে নেদারর্যান্ডসকে দুর্বল দল বলে মনে হলেও আসলে কিন্তু তাদের দুর্বল ভাবার কারণ নেই। প্রাথমিক রাউন্ডের বৈতরনি পার হয়েছে দাপুটে খেলে। খেলছে বেশ ভালো। আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে আছে জয়ের স্মৃতিও। ২০১২ সালে বাংলাদেশ গিয়েছিল নেদারল্যান্ডসে ২ ম্যাচের সিরিজ খেলতে। সেখানে প্রথম ম্যাচ ৮ উইকেটে জিতলেও পরের ম্যাচ ১ উইকেটে হেরেছিল। কাজেই ভয় কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। হারের কালো মেঘ যদি শেষ পর্যন্ত বাংলার আকাশে এসে ভর করে তখন কিন্তু সেই প্রশ্নই উঠবে শেষ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডসের কাছেও হার। ২০১২ সালে বাংলাদেশের হার কিন্তু অঘটন ছিল। যেমনটি বাংলাদেশ অঘটন ঘটিয়েছিল ২০০৫ সালে কার্ডিফে ওয়ানডে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে। এরপর কিন্তু বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আর কোনো ম্যাচই জিততে পারেনি। ১৪টি ম্যাচ খেলে ১৩টিতেই হেরেছি। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নিয়মিত খেলেনি। ২০১২ সালের পর ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথামিক রাউন্ডে ভারতের হিমাচল প্রদেশে খেলেছিল একটি ম্যাচ। জিতেছিল মাত্র ৮ রানে।বাংলাদেশের ৭ উইকেটে করা ১৫৩ রানের জবাব নেদারল্যান্ডস দিয়েছিল ৭ উইকেটে ১৪৫ রান করে।
এমপি/এসআইএইচ