বাঁচতে হলে জিততে হবে
'বাঁচতে হলে লড়তে হবে, এই লড়াইয়ে জিততে হবে'- রাজনীতির মাঠ গরম করা এই স্লোগান যেন মরুর বুকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের মাঝে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি আসরে টিকে থাকতে হলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আজকের ম্যাচে জিততেই হবে। হারলেই ধরতে হবে দেশে ফেরার বিমান।
আচ্ছা ধরুন বাংলাদেশ আজ শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে এশিয়া কাপের এবারের আসর থেকে বিদায় নিয়ে দেশে ফিরে আসল! এতে কী খুব অবাক হওয়ার কিছু থাকবে? কিন্তু এশিয়া কাপের কথা মাথায় আনলে এরকম বিদায় কিছুতেই মেনে নেওয়া যাবে না। কারণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্য বলতে যা কিছু তা এই এশিয়া কাপকে ঘিরেই (আয়ারল্যান্ডে ওয়ানডে তিন জাতির আসরে একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ)। তা হোক ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি। গত চার আসরের তিনবারই বাংলাদেশ রানার্স আপ। দুইবার ওয়ানডেতে, একবার টি-টোয়েন্টিতে। এমন দল যদি ফাইনালে যেতে না পারে, সেটাই তো মেনে নেওয়া কঠিন, সেখানে সুপার ফোরেই যেতে পারবে না?
এবার তো দেশ ছাড়ার আগে নতুন করে নেতৃত্ব ফিরে পাওয়া সাকিব আল হাসান বড় কোনো আশার বাণী শুনিয়ে যাননি। বাস্তবতা বিবেচনা করে তিনি শুধু বলেছেন অন্তত সুপার ফোরে খেলা উচিত। বলেননি কিন্তু সুপার ফোরে খেলবই? খেলোয়াড়রাই যদি আশা না দেখেন, সেখানে ভক্ত সমর্থকদের আর করার কী থাকতে পারে। তারপরও কিন্তু সমর্থকরা হাল ছাড়েন না। আশার তরী ভাসান। যদি লাইগ্যা যায়-এর মতো বাংলাদেশ যদি ভালো খেলে দিনটিকে নিজেদের মতো করে নিতে পারে তাহলে সুপার ফোরের ঘাটে তরী ভিড়তেও পারে!
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের অবস্থা এমনিতেই ভালো নয়। কিন্তু জিম্বাবুয়ের কাছে সিরিজ খুইয়ে আসার পর অবস্থা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। অন্তত এই ফরম্যাটে আপতত কোনো আশা না দেখাই যেন উত্তম-এমনই বার্তা দলের কাছ থেকে। তাইতো আজকের ম্যাচ নিয়ে গতকাল (বুধবার) দলের প্রতিনিধ হয়ে কথা বলতে আসা টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন জয়ের কোনো বাণীই শোনাননি। অধিকাংশ কথাই ছিল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে। যেখানে ঝরেছিল একরাশ হতাশা আর ক্ষুদ্ধ মনোভাব। শুধু একটা জায়গায় তিনি বলেছেন, ম্যাচটি হবে স্নায়ু চাপের। কারণ শ্রীলঙ্কাও প্রথম ম্যাচ হেরেছে। যে দল এই স্নায়ু চাপ কাটিয়ে উঠতে পারবে তাদেরই সম্ভাবনা বেশি থাকে।
তিনি বলেছিলেন, ‘কালকের (আজ) ম্যাচটা স্নায়ুচাপের। যে দল চাপ সামলে খেলতে পারবে তাদের সম্ভাবনাই বেশি থাকবে। স্কিল, ট্যাকটিক বা টেকনিক এগুলো নয়, কালকের খেলাটা হবে মানসিকতার লড়াই।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাও হেরেছে। শুধু আমরা নই, তারাও চাপে আছে। আমরা যেহেতু এই ধরনের উইকেটে অনুশীলন করেছি, দুবাইয়ের উইকেটে মনে হয় না আমাদের খুব একটা ঝামেলা হবে।’ তবে আফগানিস্তানের কাছে হারের পর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত বলেছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি হবে ‘ডু অর ডাই’।
খালেদ মাহমুদ যে মানসিক চাপের কথা বলেছেন দুই দলের প্রথম ম্যাচ হারা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলে বাংলাদেশই চাপে বেশি। এর কারণ তাদের হারের পাল্লা ভারী বেশি। যে তালিকায় আছে জিম্বাবুয়ের মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলও। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ১৭টি ম্যাচ খেলে জয় পেয়েছে মাত্র দুটিতে আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। আবার যেখানে হারলেই বিদায়, সেখানে চাপটা আরও জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসবে।
গত বিশ্বকাপ থেকে লঙ্কানদের পরিসংখ্যানও ভালো নয়। তারাও ১৭টি ম্যাচ খেলে জয় পেয়েছে চারটিতে। তাদের জয়গুলো বেশ বড় দলের বিপক্ষে। বাংলাদেশ ছাড়া অস্ট্রেলিয়াকে দুবার ও উইন্ডিজকে একবার হারিয়েছে। আবার নিজেরা হেরেছে অস্ট্রেলিয়া, ভারতের মতো দলের কাছে। আবার তাদের অবস্থা বাংলাদেশের মতো নাজুকও না।
বাংলাদেশ যেখানে সেরা একাদশে সাজাতে হিমশিম খাচ্ছে, কাকে রেখে কাকে নামাবে। সবারই একই অবস্থা। ভরসা রাখার মতো কেউ নেই। তাই সেরা একাদশে আসতে পারে একাধিক পরিববর্তন। দেখা যেতে পারে সাব্বির-মিরাজকে, এমনকি উদ্বোধনী জুটিতেও। সেখানে লঙ্কানরা নির্ভার। আর এখানেই এগিয়ে লঙ্কানরা। আবার মুখোমুখি লড়াইয়েও লঙ্কানরা এগিয়ে। ১২ বারের মোকাবিলায় তাদের জয় ৮টিতে, বাংলাদেশের ৪টিতে। সর্বশেষ মোকাবিলাতেও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে লঙ্কানরা জয় পেয়েছিল ৫ উইকেটে।
এমপি/এসজি