‘সাকিবকে সাসপেন্ড করা উচিত ছিল’
বেটউইনারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের সঙ্গে সাকিব চুক্তিতে জড়িয়ে দেশের ক্রিকেটে লঙ্কা কান্ড বাজিয়ে দেন। তুলকালাম কান্ড। সর্বত্র সমালোচনা আর বিতর্ক। কোটি কোটি মানুষের আদর্শ ক্রিকেটার হয়ে সাকিবের এ রকম কান্ডে সর্বত্র ছিঃ ছিঃ পড়ে যায়। দেশের সব গণমাধ্যমে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে নিউজ করা হয়। সংবাদ মাধ্যমে প্রতিদিনই এ সংক্রান্ত নিউজ প্রচার ও প্রকাশ হচ্ছে আর বেট উইনারের পরিচিতি বাড়ছে। বিসিবিও নড়ে-চড়ে বসে। সাকিবকে চুক্তি বাতিল করতে বলা হয়। কিন্তু সাকিব নিজের অবস্থানে অনঢ়। অবশেষে বিসিবির পক্ষ থেকে দেওয়া হয় হুংকার। তাতে কাজ হয়। নরম হন সাকিব। সায় দেন চুক্তি বাতিল করার। এরই মাঝে বেটউইনার যে একটি অন লাইন জুয়া খেলার প্রতিষ্ঠান, তা দেশবাসী জেনে যান। যে কারণে বেটউইনার সাকিবকে তাদের ‘দূত’ বানিয়েছিল, সেখানে তারা অতি দ্রুততম সময়ে কল্পনাতীত প্রচার পেয়ে যায়।
সাকিব যখন চুক্তি বাতিল করেন কিংবা এই ঘটনা জানাজানি হয়, তখন তিনি দেশের বাইরে। সব কিছু হয় ই-মেইল আর মুঠোফোনে। সাকিব চুক্তি বাতিল করার জন্য প্রথমে মৌখিকভাবে সম্মত, পরে বিসিবির ইচ্ছায় লিখিতভাবে চুক্তি বাতিলের কথা জানান। কিন্তু বিসিবির সভাপতি তাতেও সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি সাকিবকে জরুরিভাবে দেশে ফিরে আসতে বলেন। যে কারণে সাকিব ১৪ আগস্টের পরিবর্তে ১২ আগস্ট দিবাগত রাতেই ফিরে আসেন দেশে। এসেই তার বিসিবির সভাপতির সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা।
সবারই ধারনা ছিল এমন একটি ঘটনায় সাকিব ভেঙ্গে পড়বেন। তাকে মলিন দেখা যাবে। কিন্তু তিনি ছিলেন বিপরীত। বিসিবির সভাপতির গুলশান বাসভবনে তিনি যখন প্রবেশ করেন, তার হাতে ছিল কফি। চুমুক দিতেক দিতে হাস্যোজ্জল মুখে লিফটের দিকে এগিয়ে যান। ঘন্টা দুইয়েক সভা শেষে তিনি যখন সেই লিফট দিয়েই নেমে আসেন, তখন ছিলেন আরও বেশি উৎফুল্ল। যেন বিজয়ী বীর। হাসতে হাসতে অপেক্ষামান শতাধিকেরও বেশি সাংবাদিকদের ফ্লাইং চুমু দিয়ে নিজ গাড়িতে উঠে চলে যান। সাকিবের এ জাতীয় ঘটনা অনেকেই অবাক করেছে। নুন্যতম কোনো অনুশোচনা নেই। যেখানে পরাজিত সৈনিক হয়ে বের হয়ে আসার কথা, সেখানে বিজয়ী কাপ্তান হয়ে বের হয়ে এসেছেন। সাকিব চুক্তি বাতিল করার আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপন যেভাবে হুংকার দিয়ে সাকিবকে জরুরিভাবে তলব করে নিয়ে এসেছিলেন, তাতে করে অনেকেই ধারনা করেছিলেন, সাকিব এশিয়া কাপের দলে থাকলেও নেতৃত্ব পাবেন না। সেখানে নেতৃত্বও পেয়েছেনই, সঙ্গে বোনাস হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত আরও দুই আসরের। আসা-যাওয়ার মাঝে সাকিবের শারিরীক ভাষা দেখে ধারনা করা যায় যে তিনি জানতেনই বিজয়ী হবেন। অধিনায়ক হবেন।
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা আবার বিসিবির এ রকম সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘বেটিং করলে, বেটিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকলেতো সাসপেন্ড করা উচিত ছিল। এই অফারতো তামিমের কাছেও এসেছিল। কিন্তু সে রাজি হয়নি। এখানে তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড, ব্যক্তিগত ইমেজ সব মিলিয়ে সে মনে করেছে রাজি হওয়া ঠিক হবে না। তাই ফিরিয়ে দিয়েছে। এখানে শিক্ষারও একটা ব্যাপার আছে। পড়াশুনা নেই। ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। আমার সময় আমি যখন অধিনায়ক, তখন আমার দলে নয় জন ছিলেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের। ফ্লুয়্ন্টে ইংলিশ বলতে পারতো। রকিবুল, ইশতিয়াক, সৈয়দ আশরাফুল হক, ওমর খালেদ রুমি, মাইনু, জাহাঙ্গীর শাহ বাদশা সবাই উচ্চশিক্ষিত। অনর্গল ইংলিশে কথা বলত। ফ্যামিলি ব্যাক গ্রাউন্ড ছিল ভালো।’ শফিকুল হক হীরা বলেন, ‘এ রকম ঘটনা ঘটানোর পরও সাকিব দলে এসেছে, অধিনায়ক হয়েছে দলের বর্তমান পরিস্থিতিতে। সাকিব এখন এতো বড় প্লেয়ার হয়ে গেছে, বাংলাদেশের বাকি ১০ জন যেন আর প্লেয়ার না। শুধু সাকিব, সাকিব আর সাকিব। আসলে সে ক্রিকেট বোর্ডের কাউকে পাত্তা দেয় না।’
আরেক সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান মনে করেন এখানে সাকিব ও বিসিবির মাঝে সমঝোতা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখানে একটা সমঝোতা হয়েছে। এখানে আমি ধন্যবাদ দিব ক্রিকেট বোর্ডকে। বিশেষ করে সভাপতিকে। তিনি একটা শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। হয় তুমি ক্রিকেট বেছে নেবে, না হলে বেটিংয়ের সঙ্গে থাকবে। এতে সে (সাকিব) ভুল বুঝতে পেরেছে। তবে এটাও ঠিক এ মুহুর্তে ভঙ্গুর অবস্থা ক্রিকেটের। দেশের ক্রিকেটের এ রকম একটি অবস্থায় একজন শক্ত ক্রিকেটীয় দৃষ্টি কোন থেকে সাকিবকে বেছে নেয়া হয়েছে। এই কথা আমি যেমন বলছি, তেমনি বলবো সাকিব একজন রোল মডেল। একজন রোল মডেল হলে আগামী প্রজন্মকে তিনি কী ম্যাসেজ দিলেন? কাজেই তার আরও সংযম হওয়া উচিত।’
এমপি