পরিবর্তনে বাংলাদেশই ফল পায় না!
বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের অনেক আগে থেকেই জিম্বাবুয়ের পথ চলা শুরু। তাদের পরে এসে শামিল হয় বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে প্রথম টেস্ট খেলে ১৯৯২ সালে, বাংলাদেশ ২০০০ সালে। বাংলাদেশের আগমনের পর জিম্বাবুয়ের কাছে এক সময় নিয়মিত হারত। সময়ের পরিক্রমায় এক সময় বাংলাদেশ নিজেদের অবস্থানের উন্নতি করতে থাকে। জমে উঠে বিশ্ব ক্রিকেটে নিচের দিকে থাকা এ দুই দলের লড়াই।
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রথম জয় পেয়েছিল এই জিম্বাবুয়েকে হারিয়েই ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে। বহতা নদীর মতো এক সময় বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েকে পেছনে ফেলে দেয়। পরিবেশটা এমন হয়ে উঠে যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলতে নামলেই বাংলাদেশ জয় পেত। বাংলাদেশের উন্নতির বিপরীতে জিম্বাবুয়ের মান নিচের দিকে নামতে থাকে। এতোটাই নিচে নামে যে এক পর্যায়ে তারা টেস্ট ক্রিকেট থেকে স্বেচ্ছায় নির্বাসন নিয়ে নেয়। ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হারারেতে ভারতের বিপক্ষে খেলে সর্বশেষ টেস্ট। এরপর আবার ফিরে আসে ২০১১ সালে। প্রায় ছয় বছর পর ২০১১ সালের আগস্টে ফিরে এসে বাংলাদেশকে পেয়েই তারা বধ করে বসে ১৩০ রানে জিতে।
বাংলাদেশকে বধ করলেও তারা কিন্তু খুব একটা উন্নতি করতে পারেনি। এরপর তারা খেলেছে ৩২টি টেস্ট। জয় পেয়েছে পাঁচটিতে। যার তিনটিই ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। অপর দুইটি ছিল পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। বর্তমানে দেশটিতে ক্রিকেটাররা খুব একটা ভালো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না। তারপরও উন্নতি করতে তারা নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সুযোগ-সুবিধার অভাব নেই। প্রধান কোচ ছাড়াও আলাদা আলাদা ব্যাটিং কোচ, পেস বোলিং কোচ, স্পিন কোচ, ফিল্ডিং কোচ, সবাই বিদেশি। পাচ্ছেন মোটা অংকের বেতন। ক্রিকেটাররাও কাড়ি কাড়ি অর্থ পাচ্ছেন। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফুলে-ফেঁপে উঠছে। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্স শেয়ার বাজারের পতনের মতো নিম্নমুখী। ঊর্ধ্বমুখী করতে অদল-বদল হচ্ছে অহরহ। কিন্তু তাতে কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও এই অদল-বদল নিয়ে হাজারো প্রশ্ন আছে? কে কখন কিসের ভিত্তিতে দলে ঢুকে পড়ছেন তার কোনো জবাবদিহি নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে একজন ভালো করছে এক ফরম্যাটে, তাকে খেলানো হচ্ছে আরেক ফরম্যাটে। ফলাফল অশ্বডিম্ব।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নতুনদের বাজিয়ে দেখতে সিনিয়রদের বাইরে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানেও বিসিবি স্থির থাকতে পারেনি। তিনটি ম্যাচে একই একাদশ নিয়ে খেলানোর সাহস দেখাতে পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। প্রথম ম্যাচে হারের পর বিসিবির পায়ের তলার মাটি নড়বড়ে হয়ে পড়ে। ফলে দ্বিতীয় ম্যাচে আনা হয় দুইটি পরিবর্তন। এবার ম্যাচ জিতে। কিন্তু সিরিজ নির্ধারণী শেষ ম্যাচ জিততে মরিয়া বিসিবি শেষ ম্যাচে আনে তিনটি পরিবর্তন। এবার ফল পাকেনি। ১৫ জনের স্কোয়াডের তিন ম্যাচে খেলেছেন ১৪ জন। শুধু খেলার সুযোগ পাননি মেহেদি হাসান মিরাজ। এর বাইরে শেষ ম্যাচ ওয়ানডে দল থেকে নিয়ে এসে খেলানো হয় মাহমুদউল্লাহকে। কিন্তু বাংলাদেশের এসব পরিবর্তনে দুইজন ছাড়া আর কেউ সফল হতে পারেননি। একজন হলেন পেসার হাসান মাহমুদ ও স্পিনিং অলরাউন্ডার শেখ মেহেদি হাসান। বাকিরা ছিলেন চরমভাবে ব্যর্থ। বিপরীতে জিম্বাবুয়ে প্রথম দুই ম্যাচে অপরবর্তিত একাদশ খেলানোর পর শেষ ম্যাচে আনে তিনটি পরিবর্তন। তিনজনই সফল। ম্যাচ জয়ে ছিল তাদের ভূমিকা।
উইন্ডিজের বিপক্ষে খেলা সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সেরা একাদশের সঙ্গে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা সেরা একাদশে ছিল তিনটি পরিবর্তন। ফিরিয়ে আনা হয় মুনিম শাহরিয়ার, তাসকিন আহমেদ ও নাজমুল হোসেন শান্তকে। নাজমুল হোসেন শান্ত ২৫ বলে ৩৭ রান করে মোটামুটি উতরে গেলেও তাসকিন ও মুনিম ভয়াবহ রকমের ব্যর্থ হন। মুনিম করেন চার রান। তাসকিন চার ওভারে ৪২ রান দিয়ে থাকেন উইকেট শূন্য। দ্বতীয় ম্যাচে তাসকিন ও নাসুম আহমেদকে বাদ দিয়ে হাসান মাহমুদ ও শেখ মেহেদি হাসানকে খেলানো হয়। এই দুইজন বেশ ভালোভাবে উতরে যান। মেহেদি হাসান তিন ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে উইকেট শূন্য থাকেন। হাসান মাহমুদ চার ওভারে ২৬ রান দিয়ে নেন এক উইকেট। শেষ ম্যাচে বাদ পড়নে মুনিম ও শরিফুল। অধিনায়ক সোহান ইনজুরিতে ছিটকে পড়েন আগেই। এ তিনজনের পরিবর্তে খেলানো হয় পারভেজ হোসেন ইমন, নাসুম আহমেদ ও মাহমুদউল্লাহকে। তিনজনেই চরমভাবে ব্যর্থ বলা যায়। দলের হারে তাদের ভূমিকাই ছিল মূখ্য নাসুম মাত্র দুই ওভারে ৪০ রান দেন। প্রথম বলে উইকেট পাওয়ার পরও দ্বিতীয় ওভারে তিনি দেন ৩৪ রান। এরপর তাকে আর আক্রমণেই আনেননি অধিনায়ক। মাহমুদউল্লাহ নাসুমের মতোই প্রথম বলে উইকেট পাওয়ার পর বল হাতে ভালোই করেন দুই ওভারে আট রান দিয়ে এক উইকেট নিয়ে। কিন্তু আসল কাজে গিয়ে তিনি দলকে ডুবান ২৭ বলে ২৭ রান করে। পারভেজ হোসেন ইমন মাত্র দুই রান করে অভিষেকটাকে অন্ধকারচ্ছন্ন করে তুলেন। আর উইন্ডিজ সিরিজ দিয়ে আবার জাতীয় দলে ফিরে আসার পর এনামুল হক বিজয়ের ব্যর্থতার ভার তো বহন করেই চলেছে দল।
সিরিজ জিততে মরিয়া ছিল জিম্বাবুয়েও। তাই তারা একাদশে আনে তিনটি পরিবর্তন। ওয়েলিংটন মাসাকাদজা, রিচার্ড এনগারাভা ও তানাকা চি ভাংগার পরিবর্তে একাদশে সুযোগ দেয় ভিক্টর নিউয়াচি, ব্র্যাড ইভানস ও জন মাসারাকে। বাংলাদেশের পতন হওয়া আট উইকেটের পাঁচটিই নেন নিউয়াচি ও ইভানস। ইভানস চার ওভারে ২৬ রানে নেন দুই উইকেট। তার দুইটি শিকারই ছিল বড়বড় পরপর দুই বলে মাহমুদউল্লাহ ও অধিনায়ক মোসাদ্দেকের। নিউয়াচি শুরুতেই দুই ওপেনার লিটন ও পারভেজকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। পরে ফিরিয়ে দেন শেষের দিকে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে থাকা শেখ মেহেদি হাসানকে। এভাবেই তারা দলের জয়ে রাখেন বড় ভূমিকা। এদের তোপের কারণে আরেক বোলার জন মাসার মাত্র এক ওভার বোর্লিং করার সুযোগ পান। রান দেন পাঁচটি।
এভাবেই জিম্বাবুয়ের পরিবর্তনে ফল পাকে, সূর্য উঠে। বাংলাদেশের পরিবর্তনে হতাশা বাড়ে অন্ধকারে নামে!
এমপি/এসএন