সিরিজই গচ্ছা গেল বাংলাদেশের
বুমেরাং হয়ে গেল বিসিবির তরুণদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। টি-টোয়েন্টি সিরিজে জিম্বাবুয়েকে দুর্বল ভেবে এক ঝাঁক তরুণদের পাঠানো হয়েছিল মিশনে। কিন্তু সিরিজ নির্ধারণী অলিখিত ফাইনালে বাংলাদেশ ১০ রানে হেরে সিরিজই ২-১ ব্যবধানে গচ্ছা দিয়েছে। জিম্বাবুয়ের ৮ উইকেটে করা ১৫৬ রানের জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ করে ৮ উইকেটে ১৪৬ রান। গতবার বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে।
তরুণদের নিয়ে প্রথম পরীক্ষায় বিসিবি ফেল করে। দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা আনার পর অলিখিত ফাইনাল জিততে অধিনায়ককে সরানোর পাশাপাশি বিশ্রামে দেওয়া মাহমুদউল্লাহকে আবার ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু তাতেও পিঠ বাঁচেনি।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের যে ব্যর্থতা তার অন্যতম কারণ ব্যাটিং। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচেও তার ছাপ ছিল। বের হয়ে আসতে না পারার কারণে সিরিজ হারাতে হয়েছে। জিম্বাবুয়ের ইনিংসে মড়ক লেগেছিল। তিন ওভারে বিনা উইকেটে ২৯ রান থেকে দলে রান পরিণত হয়েছিল ১৩ ওভারে ৬ উইকেটে ৬৭। ১০ ওভারে ৩৮ রানে নেই ৬ উইকেট। সেখান থেকে রায়ান বার্ল ও জংওয়ে মাত্র ৫ ওভারে ৭৯ রান যোগ করে দলের রানকে ১৫৬ পর্যন্ত নিয়ে যেতে বড় ভূমিকা পালন করেন। দলও পায় লড়াই করার মতো সংগ্রহ। রায়ান ২৮ বলে ছয় ছক্কা ও দুই চারে ৫৬ রান করে হন ম্যাচ সেরা। জংওয়ে করেন দুই ছক্কা ও চার চারে ২০ বলে ৩৫ রান।
জিম্বাবুয়েও লড়াই করার মতো পুঁজি পায়। পরে দেখা যায় রায়ান-জংওয়ে জুটির এই রানই জিম্বাবুয়ের ভাগ্য খুলে দেয়। বাংলাদেশের ইনিংসে জিম্বাবুয়ের মতো মড়ক লাগেনি। উইকেট পড়েছে, তবে বেশ বিরতিতে। বাংলাদেশের ষষ্ঠ উইকেট যখন পড়ে, তখন দলের রান ১৪.৩ ওভারে ৯৯। বল আটটি বেশি হলেও রান বেশি ছিল ৩৩টি। কিন্তু পরবর্তীতে কেউ রায়ান বার্ল বা জংওয়ে উঠতে না পারার কারণে বাংলাদেশকে থেমে যেতে হয় ১৪৬ রানে।
জিম্বাবুয়ে টার্গেট দিয়েছিল ১৫৬ রান অতিক্রম করার। কিন্তু এই রান তাড়া করতে গিয়ে বাংলাদেশ শুরুতেই হোঁচট খায়। লিটনের সঙ্গে অভিষিক্ত পারভেজ হোসেন ইমনকে নতুন উদ্বোধনী জুটি করে নামানো হয়। কিন্তু দলের ব্যর্থতার মতো উদ্বোধনী জুটির ব্যর্থতাও কাটেনি। দলীয় ১৩ রানে লিটন (১৩) ও ২৪ রানে পারভেজ ইমন (২) বিদায় নিয়ে বাংলাদেশকে চাপে ফেলেছিলেন। ৩৪ রানে ব্যর্থতার পাল্লা ভারী করে এনামুল হক বিজয়ও (১৪) ফিরে গেলে সেই চাপ আরও ঘনীভূত হয়। এনামুল আজো ১৪ রান করতে বল খেলেন ১৩টি। যে কয়টি ম্যাচই খেলেছেন তার স্ট্রাইক রেট ছিল এমনই। নাজমুল-মাহমুদউল্লাহ জুটি বাঁধলেও স্ট্রাইক রেট কেউ সচল রাখতে পারেননি। ২৬ রান আসে ২৬ বলে। নাজমুল ২০ বলে অমাজর্নীয় ১৬ রান করেন। মাহমুদউল্লাহ ২৭ রান করলেও বলের ব্যবহারে তিনিও সচেষ্ট ছিলেন না। ২৭ বল খেলেন। দলীয় ৬০ রানে নাজমুল ও ৯৯ রানে মাহমুদউল্লাহ ফিরে গেলেও ম্যাচে কিন্তু ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। উইকেটে তখন আফিফ। যোগ দেন দায়িত্ব পাওয়া অধিনায়ক মোসাদ্দেক। ব্যাট হাতে যিনি বেশ পাক্কা। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ আউট হওয়ার পরের বলেই তিনিও ফিরে গেলে বাংলাদেশ সত্যিকারভাবে চাপে পড়ে। এই চাপকে সামাল দিয়ে আফিফ ও শেখ মেহেদি হাসান অষ্টম উইকেট জুটিতে আবার আশার আলো দেখাতে থাকেন। চার ওভারে তারা ৩৪ রান যোগ করার পর মেহেদি ১৭ বলে ২২ রান করে ফিরে গেলে বাংলাদেশের সম্ভাবনার আলো শেষ হয়ে যায়। টেল এন্ডারদের নিয়ে শেষ দুই ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় ২৬ রান আর করা সম্ভব হয়নি। আফিফ ২৭ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত থাকেন।
জিম্বাবুয়ের হয়ে ভিক্টর নিয়াউচি ২৯ রানে নেন ৩ উইকেট। ব্র্যাড ইভানস ২৬ রানে নেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট নেন ওয়েসলি মাধেভেরে, লুক জংওয়ে ও শন উইলিয়ামস। সিরিজ সেরা হয়েছেন সিকান্দার রাজা।
এমপি/এসজি/