বিজয়কে নিয়ে মাতামাতির নেপথ্যে কী?
বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এনামুল হক বিজয় লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে হাজার রান করেন। ঢাকা প্রিমিয়ার বিভাগ ক্রিকেটে লিগে ৩ সেঞ্চুরি ও ৯ হাফ সেঞ্চুরিতে তার রান ছিল ১১৩৮। লিগে বিজয়ের এমন চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্যের পর নির্বাচক থেকে শুরু করে বিসিবির কর্তা, সবার কাছেই ছুটে গিয়েছিল এই প্রশ্ন- জাতীয় দলে ফিরবেন কবে? তার এমন নৈপুণ্যে জাতীয় দলে ফেরার দরজা খুলে দেয়। কিন্তু তারপরও বিজয়ের জাতীয় দলে জায়গা নিয়ে সমস্য ছিল। তিনি খেলবেন কোথায়? খেলানো হবে কার জায়গায়? জবাব এসেছিল এ রকমই। বিজয় ওপেনার। টেস্ট দলে তামিম ইকবালের সঙ্গে মাহমুদুল হাসান জয় আর ওয়ানডেতে তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। বাকি ছিল টি-টোয়েন্টি। সেখানে তামিম ইকবাল খেলছেন না। আবার যারা খেলছন তারাও নিজেদের প্রমাণ করতে পারেননি। তাই বিজয়ের খেলার সুযোগ ছিল এ একটি জায়গাতেই। তবে একাদশে সুযোগ পাওয়ার আগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল তার দলে সুযোগ পাওয়াটা। নির্বাচকরা তার প্রতিদান দেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে রেখে। এদিকে তিন ফরম্যাটেরই দলে থাকা ইয়াসির আলী সিরিজ শুরুর আগে ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে গেলে এনামুল হক বিজয়কে পরে টেস্ট দলেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যদিও তার এই টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল?
উইন্ডিজ সফরে ইতিমধ্যে এনামুল হক বিজয় দ্বিতীয় টেস্ট ও তিনম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছেন। সেখানে তিনি আশাব্যাঞ্জক কিছু করে দেখাতে পারেননি। টেস্টের দুই ইনিংসে রান ছিল ২৩ ও ৪ আর তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ করেছিলেন ১৬, ৩ ও ১০। এই দুইটি সিরিজেই বাংলাদেশ খুবই বাজে খেলেছিল। তাই ভালো করার আশায় বিজয়ের উপর নির্ভর করা হয়েছিল, ‘যদি লাইগা যায়।’ কিন্তু লাগেনি। যদিও বিজয়ের টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়া, পরে সেরা একাদশে খেলা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছিল। কারণ এই ফরম্যাটে তিনি একেবারেই ব্যর্থ ছিলেন। আগের চার টেস্টের আট ইনিংসে তার রান ছিল মাত্র ৭৩। তাকে খেলানোর যৌক্তিকতা নিয়ে তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন।
টেস্টের ব্যর্থতার পর ফাঁক থাকায় খেলেন পুরো টি-টোয়েন্টি সিরিজ। কিন্তু এখানেও চরমভাবে ব্যর্থ। সঙ্গে দলও। এরপর একদিনের সিরিজে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করেছে। কিন্তু এই দুই ম্যাচে তাকে না খেলানোতে প্রশ্ন উঠেছে এবং সেই প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশের দাপুট দেখিয়ে ম্যাচ জেতার পরও। যদি বাংলাদেশ হেরে যেত, তখন এ প্রশ্ন উঠাটা ছিল যৌক্তিক। কিন্তু জেতার পরও প্রশ্ন উঠা দেখে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের ফলাফল যাই হোক না কেন বিজয়কে খেলানোটা ছিল জরুরি। না খেলানোটা বিশাল অন্যায় হয়ে গেছে টিম ম্যানেজমেন্টের। অথচ তাকে কেন খেলানো হয়নি তার সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। অধিনায়কের কথার প্রতিচ্ছবি যেন ভেসে উঠে কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর কথাতেও। তারপরও থেমে নেই বিজয়য়ের প্রসঙ্গেটি। এখন শেষ ম্যাচে তাকে যাতে খেলানো হয়, সেটি সামনে চলে এসেছে। যদিও যারা খেলেননি তাদের পরখ করে নিতে তামিমের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিজয়ের খেলার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ডোমিঙ্গোর কথাতে আবার সেখানে পানি ঢেলে দেওয়া হয়েছে। ডোমিঙ্গোর প্রয়োজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এবং সংখ্যায় যতো বেশি হবে তত ভালো। সেখানে বিজয় ডানহাতি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো বিজয়কে না খেলানো নিয়ে কেন এতো মাতামাতি। স্টেডিয়াম পাড়ায় গুঞ্জন প্রিমিয়ার লিগে বিজয়ের এবারের পারফরম্যান্সে তাকে আগামী মৌসুমে বিশেষ একটি দলে খেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জাতীয় দলে খেলার টোপ দিয়ে। বিজয়ও নাকি এতে রাজি হয়েছেন। যে কারণে আরও কয়কটি দল বিজয়কে বেশ মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আগামী মৌসুমের জন্য দলে নিতে চাইলেও তিনি রাজি হননি। এ কারণেই নাকি তার টেস্ট দলে ডাক পাওয়া অতঃপর সেরা একাদশে খেলা। এবার একদিনের ম্যাচে তাকে খেলানো নিয়ে শুরু হয়েছে অদৃশ্য নাটক! এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সংগঠক বলেন, ‘এটি আর নতুন কী? লিগের সেরা পারফরমারকে এভাবে জাতীয় দলে খেলার লোভ দেখিয়ে নিজেদের ক্লাবে টেনে নেওয়া হয়। জাতীয় দলে খেলার সুযোগ কে হাতছাড়া করতে চায়। আর্থিক ক্ষতি হলেও অনেক ক্রিকেটার তা মেনে নেন।’
নাম প্রকাশ না করে বিসিবির এক পরিচালক বলেন, ‘এ রকম প্রস্তাব অনেকটা ওপেন সিক্রেটের মতোই। কোনো খেলোয়াড়কে এভাবে প্রস্তাব দিলে সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না কেউ। আর কেউ যদি এভাবে না যেতে চায়, তাহলে সেই ক্লাবের রোষানলে পড়তে হয় ক্রিকেটারকে। তাই অনেকে ইচ্ছায় হোক, আর না হোক, খেলে থাকে।’
বিজয় নাটকের শেষ দৃশ্য জানা যাবে আজই সন্ধ্যায়?
এমপি/এসএন