গুজরাট যেন আইপিএলের ভিনি ভিডি ভিসি
গুজরাটের আইপিএল জয়কে ‘ভিনি, ভিডি, ভিসি’ বলা যায়। এলাম, দেখলাম, জয় করলাম। আইপিএলের নামী-দামি তারকা সমৃদ্ধ দলগুলোর ভিড়ে গুজরাটের আইপিএলের শিরোপা জয়তো আক্ষরিক অর্থে ভিনি, ভিডি, ভিসিই।
বিশ্ব ক্রিকেটের রঙ্গমঞ্জে কুড়ি ওভারের ক্রিকেট যেন সুন্দরী যুবতী। সবাই দেখার জন্য যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সেই কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে মায়াবী আকর্ষণ তৈরি করেছে আইপিএল। এ যেন সুন্দরী যুবতীকে মেকআপ দিয়ে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলা। আইপিএলের মোহনীয় আকর্ষণ এতোই বেশি যে এর স্বাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে চান না কোনো ক্রিকেটার। আইপিএল শুরু হলে বিশ্ব ক্রিকেট অনেকটা থমকে যায়। অনেক ক্রিকেটারই জাতীয় দল ছেড়ে আইপিএলের মায়াজালে জড়িয়ে পড়েন। সবাই অপেক্ষায় থাকেন আইপিএলের ঘণ্টা বাজবে কখন, খেলব কোন দলে। সঙ্গে ব্যাংক অ্যাকাউন্টও ফুলে ফেঁপে উঠা।
দিন যতই যাচ্ছে, আইপিএলের কদর ততই বাড়ছে। আইপিএলের রুপের পসরার শেষ নেই। এবার সেই রুপে আরও বেশি লাবণ্যতা আনতে আট দলের জায়গায় বাড়িয়ে ১০ দল করা হয়। নতুন দুই দল ছিল গুজরাট টাইটানস ও লৌক্ষনাউ সুপার জায়ান্টস। আগে থেকেই সেখানে আছে কোহালির ব্যাঙ্গালুরু, ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস, রোহিত শর্মার মুম্বাই ইন্ডিয়ানস, ভুবেনেশ্বর কুমারের সানরাইজার্স হায়দরাবাদ, শেখর ধাওয়ানের পাঞ্জাব কিংস, অশ্বিনের রাজস্থান রয়্যালস, রিশাভ পন্থের দিল্লি ক্যাপিটালস, অজিঙ্কা রায়ানের কলকাতা নাইট রাইডার্স। এখানে এক একটি দল যেমন ব্যাপক জনপ্রিয়, তেমনি দলের ক্রিকেটারও। দেশি-বিদেশি ক্রিকেটারদের মিলন মেলায় তারকাদের ভিড়। এরই মধ্যে প্রথমবার খেলতে এসেই গুজরাটের চমক। সবাইকে টেক্কা দিয়ে চ্যাম্পিয়ন।
গুজরাট যে শুধু প্রথমবার খেলতে এসেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তা কিন্তু নয়, দলের ক্রিকেটারদের দিকে দৃষ্টি ফেরালেও অবাক হওয়ার মতো! কারণ তারকা ক্রিকেটার বলতে যা বুঝায় তা ছিল না দলটিতে। দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সেরা ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। তার হাতেই ন্যস্ত করা হয়েছিল নেতৃত্বের ভার। দেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে গুজরাট যে দল গড়েছিল তার মধ্যে একমাত্র এই হার্দিক পান্ডিয়া ছাড়া আর কেউই ভারতীয় জাতীয় দলে নিয়মিত নন। সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল ফাইনালে খেলা দেশি সাতজনের মধ্যে হার্দিক পান্ডিয়া ছাড়া শুধুমাত্র পেসার মোহাম্মদ সামির জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা আছে। বাকি পাঁচজনের দুই জন জাতীয় দলে খেললেও কখনই টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেননি। অপর তিনজন জাতীয় দলে খেলার সুযোগই পাননি।
মোহাম্মদ সামি ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে নিয়মিত নন। শুভমান গিল, ঋদ্ধিমান সাহা এই দুইজনতো জাতীয় দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের স্বাদই নিতে পারেননি। এদের বাইরে ফাইনালে খেলা দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে রাহুল তিওয়াতিয়া, ইয়াস দিওয়াল, রবিশ্রীনিবাসন সাই কিশোর জাতীয় দলের হয়ে কোনো ফরম্যাটেই খেলার সুযোগ পাননি। এর বাইরে দেশি ক্রিকেটার যারা ছিলেন তাদের নাম না বলাই উত্তম। কারণ তাদের সে রকম কোনো পরিচিতি নেই। এই সব ক্রিকেটারদের মধ্যে শুধু বরুন আরুনই জাতীয় দলের হয়ে ৯টি করে টেস্ট ও ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। তবে গুজরাটের বিদেশি কালেকশন বেশ ভালো ছিল। অবশ্য সবাই নন। টি-টোয়েন্টির আদর্শ ক্রিকেটার বলতে যা বুঝায় সেই হিসেবে সবার থেকে এগিয়ে ছিলেন আফগানিস্তানের রশিদ খান ও দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলার। এরা গুজরাটের হয়ে সবকটিই ম্যাচই খেলেছেন। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু ওয়েড ১০টি ও নিউ জিল্যান্ডের লুকি ফার্গুসন ১৩টি ম্যাচ খেলেছেন। এই এগারজন মিলে গুজরটের হয়ে আইপিএল জয় করেন।
গুজরাটের বিদেশি চারজনের বাইরে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে উইন্ডিজের আলজারি জোসেফ ৯টি ম্যাচ খেলেছেন। বাকি যাদের নেওয়া হয়েছিল তাদের একটি ম্যাচও খেলানো হয়নি। তারা ছিলেন আফগানিস্তানের রহমতউল্লাহ গুরবাজ ও নুর আহমেদ, উইন্ডিজরে ডমিনিক ডারকেস।
গুজরাট আসর শুরু করেছিল আরেক নতুন দল লৌক্ষনউকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে। টানা তিন ম্যাচ জেতার পর সানরাইজার্সের কাছে হেরেছিল প্রথম। এরপর আবার টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে। যেখানে আবার সানরাইজার্সকে হারিয়ে প্রতিশোধও নিয়েছিল। তাদের দ্বিতীয় হার ছিল পাঞ্চাব কিংসের কাছে। পরের ম্যাচে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কাছেও হেরে যায়। যেখানে তারা প্রথম মোকাবিলাতে আবার জয়ী হয়েছিল। এরপর তারা লিগ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে হেরেছিল ব্যাঙ্গালুরুর কাছে।
গুজরাটের চার হারের মধ্যে দুইটি ছিল পরপর। যে কারণে তারা আসরের শুরু থেকেই পয়েন্ট টেবিলেরর্ শীর্ষে থেকে সবার আগে কোয়ালিফায়ার রাউন্ডে খেলা নিশ্চিত করে। ১৪ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ছিল ২০। প্রথম কোয়ালিফায়ারে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল রাজস্থান রয়্যালস। ছয় উইকেটে ১৮৮ রান করেও রাজস্থান রয়্যালস জিততে পারেনি। গুজরাট ফাইনালের মতো করেই ম্যাচ জিতেছিল সাত উইকেটে। ফাইনালসহ রাজস্থান রয়্যালসের সঙ্গে এবারের আসরে চারবারের মোকাবিলাতে চারবারই তারা জয়ী হয়েছে।
গুজরাটের শিরোপার তরী নিয়ে সফলতার সঙ্গে তীরে ভেড়াতে ব্যাট হাতে সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছেন হার্দিক পান্ডিয়া (৪৮৭), ডেভিড মিলার (৪৮১), শুভমান গিল (৪৮৩)। বল হাতে এ কাজটি আবার করে দেখিয়েছেন মোহাম্মদ সামি (২০), রশিদ খান (১৯), লুকি ফার্গুসন (১২), অশ্বিন (১২), ইয়াস দিয়াল (১১)।
গুজরাটের তিন ব্যাটসম্যানই সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের তালিকায় আছেন যথাক্রমে চার,পাঁচ ও ছয়ে। সবার উপরে ৮৬৩ রান করে আছেন ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ রাজস্থানের ইংলিশ ব্যাটসম্যান জস বাটলার। তিনি হয়েছেন আসরের সেরাও। এরপর আছেন লৌক্ষনাউ সুপার জায়ান্টসের দুই ব্যাটসম্যান লুকেশ রাহুল ( ৬১৬) ও ডি কক (৫০৮)। বল হাতে আবার সামি-রশিদ খানের সম্মিলিত তালিকায় একটু পেছনেই আছেন। সামির অবস্থান সাতে। রশিদ খান আছেন নয়ে। ফার্গুসন ২৯, অশ্বিন ৩০ ও দিয়াল ৩১তম স্থানে আছেন।
এমপি/আরএ/