শিরোপা জিততে চায় বাংলাদেশের মেয়েরা
ফুটবলে পারে না, ক্রিকেটে পারে না। না পারার তালিকায় আছে হকিসহ আরো অনেক খেলাই। সেটা হোক নারী বা পুরুষ যেকোনো বিভাগের জাতীয় দল। ভারতের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের বাস্তবতা। কিন্তু একটি ক্ষেত্রে ব্যতীক্রম। আর সেটি হলো মেয়েদের বয়স ভিত্তিক ফুটবলের আসর। যেখানে বাংলার বাঘিনীরা জ্বলে উঠে আপন মহিমায়। হার মানায় ভারতকে। অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৮ আসরে বাংলাদেশের মেয়েদের আছে জয়ের রেকর্ড। ২০১৭ সালের আসরে নিজেদের মাটিতে বাংলাদেশের মেয়েরা ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। যদিও পরের দুই আসরে আবার এই ভারতের কাছে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয়েছিল।
অনূর্ধ্ব-১৮ আসরে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। এবার ভারতকে পায়নি আসরে। ফাইনালে নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল। এবার ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৯ আসর। এএফসি কাপের সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে এই আসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ করা হয়েছে। সেই হিসেবে এটি সাফের প্রথম আয়োজন। যেখানে লিগ পর্বে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়েছে মনিকা-রিপারা। সেই ভারতের বিপক্ষে আগামীকাল আবার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবে বাংলাদেশ দল। চোখে শিরোপা জেতার রঙিন স্বপ্নে বিভোর সবাই। বুধবার (২২ ডিসেম্বর) কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে ম্যাচ।
এবারের আসরে বাংলার মেয়েরা দুরন্ত দুর্বার। এই দুর্বার হয়ে উঠার চোট্ট গল্পও আছে। প্রথম ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে এক চেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করে খেলেও গোলশুন্য ড্র করে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। শুরুর এই হোচট দলের খেলোয়াড়দের অন্তরে ভালো করার আগুন দাউ দাউ করে জ্বালিয়ে দেয়। যে আগুনে পুড়ে একে একে ছাঁই হয়েছে ভুটান-শ্রীলঙ্কা। ভুটনাকে ৬-০ আর শ্রীলঙ্কাকে ১২-০ গোলে নত স্বীকার করিয়েছিল। ভারতও পার পায়নি। তবে গোল বন্যায় ভাসাতে পারেনি। জয় এসেছিল ১-০ গোলে। লিগ পর্বে এমন দাপট বাংলাদেশের মেয়েদের শিরোপা জয়ের স্বপ্নকে আরো রাঙিয়ে তুলেছে।
অপরদিকে ভারত বাংলাদেশের কাছে মাত্র এক গোলে হার মানলেও এই একটি হার তাদের ফাইনালে আসার রাস্তাকে কন্টকাকীর্ণ করে তুলেছিল। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৫-০ ও পরের ম্যাচে ভুটানকে ৩-০ গোলে হারানোর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে হার। ফাইনালে যেতে ভারতের শেষ ম্যাচে জয় অত্যাবশাকীয় হয়ে উঠে। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দুই দল খেলবে ফাইনালে। সে সময় ভারতের চেয়ে এক পয়েন্ট বেশি ছিল নেপালের। আবার এই নেপালের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ তাদের। নেপালের বিপক্ষে ড্র করলেই হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ড্র করা ছাড়াও নেপাল ৬-০ গোলে শ্রীলঙ্কাকে এবং ৪-০ গোলে ভুটানকে ধরাশায়ী করে নিজেদের অবস্থানকে খুবই শক্তিশালী করে তুলেছিল। দুই সমীকরণে দুই দল মাঠে নেমে। কিন্তু পেরে উঠেনি নেপাল। ড্র করার সুপ্ত ইচ্ছে ছিল তাদের। কিন্তু ভারত ম্যাচ জিতে যায় একমাত্র গোলে।
আসরে বাংলাদেশ ১৯ গোল দিয়ে হজম করেনি কোনো গোল। ভারতের গোল ৮টি। একটি গোল হজম করেছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। বাংলাদেশের শহিদা আক্তার রিপা ৫ গোল করে আছেন শীর্ষে। তিনটি করে গোল করেছেন আফিদা খাতুন ও ঋতুপর্না চাকমা। দুইটি গোল আছে তহুরা খাতুনের। এছাড়া একটি করে গোল করেছেন আরো ছয়জন উন্নতি খাতুন, আঁখি খাতুন, শামসুন্নাহার, মারিয়া মান্ডা, স্বপ্না রাণী ও আনুচিং মুগিনী। ভারতের হয়ে সর্বাধিক গোল প্রিয়াঙ্কা দেবীর চারটি। একটি করে গোল আছে তিনজনের।
পরিসংখ্যান প্রমাণ দিচ্ছে, বাংলাদেশের আক্রমণভাগ যেমন শক্তিশালী তেমনি রক্ষণভাগও। এদের যৌথ সমন্বয়ে আগামীকাল আবার ভারত ‘ বধ’ মিশনে নামবে মেয়েরা। কিন্তু এখানেই সাবধানী কোচ গোলাম রব্বানি ছোটন। তিনি বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন আমরা। এই আসরেও চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। লিগ পর্যায়ে ভালো খেলেছি। ফাইনালে আরো একটু ভালো খেলে শিরোপাটা নিজেদের করে নিতে চাই।’
ভারতের কোচ অ্যামবোক্স এলেক্স বাংলাদেশের বিপক্ষে পরিসংখ্যান নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না। তিনি বলেন, ‘আগের হিসেব কষতে চাই না। ফাইনাল ম্যাচে নিজেদের সেরাটা দিয়ে শিরোপা জিততে চাই।’
এমপি/এসআইএইচ