বাংলাদেশের ১০ উইকেট হার নতুন নয়!
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথ চলা শুরু হয়েছে সেই দুই হাজার সাল থেকে। প্রথম টেস্ট খেলেছিল ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। সেই শুরু। এরপর দীর্ঘ পথ চলায় তারা খেলেছে ১৩২টি টেস্ট। কিন্তু বনেদি এই জায়গায় যতটুকু এগুনোর কথা ছিল বাংলাদেশ তা করতে পারেনি। বলা যায় এখনো ধুকছে। কী পরিমাণ ধুকছে তা ধারনা পাওয়া যায় পরিসংখ্যানের দিক চোখ বুলালে। জয় পেয়েছে মাত্র ১৬টিতে। যার অধিকাংশ দূর্বল জিম্বাবুয়ে আর উইন্ডিজরে বিপক্ষে। বড় দলের বিপক্ষে জয় বলতে সবেধন নীলমনি অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি করে।
এই সব কিন্তু আবার বাংলাদেশের মানের উন্নতি ঘটায়নি তাৎক্ষণিক উল্লাস করার একটি উপলক্ষ এনে দিয়েছিল। যদিও বিসিবির পক্ষ থেকে এই সবকে খুবই বড় করে দেখা হয়েছিল। ক্রিকেটারদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। এই সব জয় যে বাংলাদেশের মানের কোনো উন্নতি ঘটাতে পারেনি তা ঢাকা টেস্টের পর দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন ঘরের মাঠে (শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় ছিল দেশের বাইরে) এই সব জয় (ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া) বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্ষতিই করেছে।
ডমিঙ্গোর এই কথা কিন্তু অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। ইংল্যান্ডকে হারানোর পর পরের চার টেস্টেই বাংলাদেশ হেরেছিল বড় ব্যবধানে। এরপর অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে পরের আট ম্যাচের সাতটিতেই হেরেছিল। একটি টেস্ট ড্র করতে পেরেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
বাংলাদেশ যে টেস্ট ক্রিকেটে কোনো উন্নতি করতে পারেনি তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জেতার পরও তারা একইভাবে হেরে চলেছে। হারের সর্বশেষ নজির ছিল ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে ঢাকায় ১০ উইকেটে হার। হারের ব্যবধানই বলে দেয় সাদা পোষাকে বাংলাদেশের কী দুরাবস্থা চলছে। ২২ বছর পরও বাংলাদেশ ধুকছে, হারছে বড় ব্যবধানে।
১০ উইকেটে বাংলাদেশ প্রথম হেরেছিল সেই ২০০৬ সালে, যখন টেস্ট ক্রিকেটে পথচলা শুরু করেছে। প্রতিপক্ষ ছিল এই শ্রীলঙ্কাই। বগুড়ায় বাংলাদেশ দুই ইনিংসে করেছিল ২৩৪ ও ২০১ রান। শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ৪৩৫ রান করাতে তাদের সামনে টার্গেট ছিল ১১৯ রানের। দুই ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার মাঝেও হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন হাবিবুল বাশার। প্রথম ইনিংসে ৬৯ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৩ রান
বাংলাদেশ এরপর ১০ উইকেটে হার মেনেছিল ঢাকায় ২০১০ সালে ধোনির ভারতের কাছে। এবার বাংলাদেশ প্রথমে ইনিংসে ২৩৩ রান করে ব্যাটিং ব্যর্থতার মুখে পড়লেও দ্বিতীয় ইনিংসে তা কাটিয়ে উঠেছিল তামিম ইকবালের ১৫১ রানের ইনিংসে ভর করে ৩১২ রান সংগ্রহ করে। কিন্তু ভারত প্রথম ইনিংসে আট উইকেটে ৫৪৪ রান করলে তাদের সামনে টার্গেট ছিল মাত্র দুই রানের।
বাংলাদেশের এরপরের দুইটি হার ছিল উইন্ডিজের কাছে ২০১২ ও ২০১৪ সালে। প্রথমে খুলনায়, পরেরটি কিংস্টনে। এবার বাংলাদেশ ১০ উইকেটে হারলেও প্রথমে ইনিংসে ৩৮৭ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮৭ রান করেছিল। যেখানে প্রথম ইনিংসে ছিল আবার দশম ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্যাট করেতে নেমে অভিষেকেই আবুল হোসেন রাজুর সেঞ্চুরি। ১১৩ রান করেছিলেন তিনি। একেতো ১০ নম্বারে নেমে সেঞ্চুরি। আবার অভিষেক ম্যাচ। এ রকম নজির টেস্ট ক্রিকেটে ছিল দ্বিতীয় নজির। ১৯০২ সালে অস্ট্রেলিয়ার রেডি ডাফ। কিন্তু উইন্ডিজ স্যামুয়েলসের ২৬০ ও চন্দরপলের অপরাজিত ১৫০ রানের ইনিংসে ৯ উইকেটে ৬৪৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল। ফলে তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়েছিল ২৭ রানের।
বাংলাদেশ ১০ উইকেটে হারা ম্যাচগুলোর মাঝে একমাত্র কিংস্টন টেস্টে ফলোঅনে পড়েছিল। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়লেও দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য উতরে গিয়েছিল। প্রথম ইনিংসে ১৮২ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিতে (১১৪) ৩১৪ রান করে। উইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটে ৪৮৪ রান করে ইনিংস ঘোষণার পর জয়ের জন্য ১৩ রানের দরকার ছিল।
এমপি/এমএমএ/