বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম দিনের টুকিটাকি
রিভিউতে রক্ষা লিটনের
রিভিউ নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ করে ফিল্ডিংয়ের সময় বাংলাদেশ দল খুবই ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। অধিকাংশ সময় তাদের রিভিউ আলোর মুখ দেখতে পারে না। এ রকম ব্যর্থতার কারণ কখনো কখনো রিভিউ নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধায় পড়ে যায়। আউট হবে, কী হবে না এ শঙ্কা জেগে উঠে মনে। ফলে এই দ্বিধা থেকে অনেক সময় দেখা যায় রিভিউ না নেওয়ায় বাংলাদেশ দল নিশ্চিত উইকেট পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। কিন্তু ব্যাটিংয়ের সময় বাংলাদেশ দল আবার সফল। ইনিংস হারের মুখে পড়ে পঞ্চম দিন লড়াইয়ে নামা দুই ব্যাটার একজন লিটন দাস বেঁচে যান এই রিভিউ নিয়ে। কাসুন রাজিথার করা দিনের ষষ্ট ওভারের শেষ বলে আম্পায়ার আউট দিয়েছিলেন বল ব্যাটে লেগে উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকভেলার হাতে জমা পড়াতে। কিন্তু লিটন নিশ্চিত ছিলেন বল তার ব্যাটে লাগেনি। তাই নেন রিভিউ। পরে সেটিই সত্য প্রমাণিত হয়। আল্ট্রা এজে দেখা যায় তাই। লিটনের রান ছিল তখন ৯, দলের রান চার উইকেটে ৫২।
লিটনের দুই হাজার রান
তিন ফরম্যাটেই সময়টা বেশ ভালো যাচ্ছে লিটনের। তবে বেশি ভালো যাচ্ছে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে। খেলতে নামলেই হয় সেঞ্চুরি, না হয়তো হাফ সেঞ্চুরি করছেন। এ বছর ঢাকা টেস্ট নিয়ে মোট টেস্ট খেলেছেন ছয়টি। যেখানে সেঞ্চুরি আছে দুইটি, হাফ সেঞ্চুরি দুইটি। আজও দলের ক্রান্তিকালে শক্ত হাল ধরে তিনি ৫২ রান করেন। আর এই ইনিংস খেলার পথে ৪১ রানের সময় তিনি বাংলাদেশের অষ্টম ব্যাটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে দুই হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। এ জন্য তিনি খেলেছেন ৩৩ টেস্টে ৫৬ ইনিংস। তার চেয়ে কম ইনিংস খেলে দুই হাজার রান করেছেন মুমিুনল হক (৪৭ ইনিংস) ও তামিম ইকবাল (৫৩ ইনিংস)।
১০ উইকেটে বাংলাদেশের পঞ্চম হার
আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রীলঙ্কার কাছে বাংলাদেশের ১০ উইকেট হার ছিল ২২ বছরে টেস্ট ক্রিকেটে পথ চলায় পঞ্চমবার। আর শ্রীলঙ্কার কাছে দ্বিতীয়বার। প্রথম হারও ছিল এই শ্রীলঙ্কার কাছে ২০০৬ সালে বগুড়ায়। এ ছাড়া বাকি তিনবারের দুইবার উইন্ডিজের কাছে, একবার ভারতের কাছে। ২০১০ সালে মিরপুরে ভারতের কাছে হারের পর ২০১২ সালে খুলনা ও ২০১৪ সালে কিংস্টনে হেরেছিল উইন্ডিজের কাছে।
খালেদের পেয়ার
ঢাকা টেস্টে পেয়ার (উভয় ইনিংসে শূন্য রানে আউট) মেরেছেন পেসার খালেদও। একই টেস্টে তামিম ইকবালও পেয়ার মারেন। খালেদ প্রথম ইনিংসে দুই বলে ফার্নান্ডোর শিকার হয়েছিলেন উইকেটের পেছনে ডিকভেলার ক্যাচে পরিণত হয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি প্রথম বলেই ফার্নান্ডোর শিকার হন বোল্ড হয়ে। তামিম ৬৬ টেস্টের ১২৬ ইনিংসে পেয়ার মেরেছিলেন আর খালেদ নিয়মিত খেলার সুযোগ পান না। আবার সুযোগ পেলেও নিয়মিত ব্যাটিং করার সুযোগ মিলে না। সব মিলিয়ে সাত টেস্টের ১১ ইনিংসের ক্যারিয়ারে তিনি প্রথম পেলেন এই নোনা স্বাদ।
বাংলাদেশের শূন্য রানে আউটের লজ্জার রেকর্ড
টেস্ট ক্রিকেট মানেই যেন বাংলাদেশের জন্য অর্ধেক গ্লাস পানি ভরা নয়, খালি। নিজেরা যা রেকর্ড করবে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি নিজেদের বিপক্ষে রেকর্ড হয়। ঢাকা টেস্টে তারা এমনই এক লজ্জার রেকর্ডের সম্মুখীন হয়েছে। এই বিব্রতকর রেকর্ড ছিল সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ব্যাটার শূন্য রানে আউট হওয়া। দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের নয়জন ব্যাটার শূন্য রানে আউট হয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ছয়জন এবং দ্বিতীয় ইনিংসে তিনজন ব্যাটার শূন্য রানে আউট হয়েছেন। বাংলাদেশের আগের রেকর্ড ছিল আটজন।
আশিথার প্রথম ৫ ও ১০
ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে কাসুন রাজিথা ক্যারিয়ারে সেরা বোলিং করেছিলেন প্রথমবারে মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়ে। এবার দ্বিতীয় ইনিংসে সেই কাজটি করে দেখিয়েছেন আরেক পেসার আশিথা ফার্নান্ডো। তিনিও ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেন। পরে সেটি ছয়ে উন্নিত করেন ৫১ রান দিয়ে। এই ছয়ে উন্নিত করে তিনি টেস্টেও প্রথমবারের মতো ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন ১৪৪ রানের খরচায়। প্রথম ইনিংসে তিনি চার উইকেট পেয়েছিলেন ৯৩ রানে। আবার মিরপুরে ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তি ছিল এটি দ্বিতীয়। প্রথম ১০ উইকেট নিয়েছিলেন ভারতের বাঁহাতি পেসার জহির খান ২০১০ সালে।
২১ বছর পর
টেস্ট ক্রিকেটে লঙ্কান পেস বোলার হিসেবে ১০ উইকেট নেওয়া রাজিথার কীর্তি ছিল দেশটির হয়ে ২১ বছর পর। তার আগে এই কীর্তি ছিল বাঁহাতি পেসার চামিন্দা ভাসের। তিনি দুইবার নিয়েছিলেন টেস্টে ১০ উইকেট। প্রথমে ১৯৯৬ সালে নেপিয়ারে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর ২০০১ সালে কলম্বোতে উইন্ডিজের বিপক্ষে। দুই ইনিংসেই তিনি সাতটি করে উইকেট নিয়েছিলেন যথাক্রমে ১২০ ও ৭১ রানে।
এমপি/এসজি/