মুশফিককে হারালেও লিড নিয়েছে টাইগাররা
দিনটি শুরু হয়েছিল ভয়ে। চোখের সামনে হারের শঙ্কা। সেটা হতে পারে আবার ইনিংস ব্যবধানেও। তা থেকে রক্ষা পাওয়া খুবই কঠিন। দিতে হবে ২২ গজে উত্তাল সাগর পাড়ি। থাকতে হবে টিকে। পার করতে হবে সময়। নিতে হবে লিড। সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কাকে আবারও ব্যাট করতে নামতে হবে। সময় থাকলে তখন তারা জয়ের চেষ্টা করবে। কিন্তু সরল অংকের যোগফল মেলানোর মতোই কঠিন এই সমীকরণ। কিন্তু যোগফল মেলাতে হলে ধাপে ধাপে এগুতে হবে। বাংলাদেশও এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এগুচ্ছে। প্রথম সেশনটা পার করেছে শুধুমাত্র মুশফিকুর রহিমের উইকেট হারিয়ে।
মুশফিক আগের দিনের ১৪ রানের সঙ্গে ৯ রান যোগ করে ২৩ রানে ফিরে যাওয়ার পর লিটনের সঙ্গে জুটি বেঁধে সাকিব ৮ রানের লিড নিয়ে পার করে দিয়েছেন প্রথম সেশনের বাকি সময়। দুইজন মিলে ২৫.৩ ওভার খেলে যোগ করেছেন ৯৬ রান। বাংলাদেশের রান পাঁচ উইকেটে ১৪৯। সাকিব ক্যারিয়ারের ২৭তম হাফ সেঞ্চুরি করে ৫২ রানে ও হাফ সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা লিটন ৪৮ রানে অপরাজিত আছেন। আড়াই ঘণ্টার প্রথম শেসনে বাংলাদেশ ৩৩ ওভার খেলে যোগ করেছে এক উইকেট হারিয়ে ১১৫ রান।
চতুর্থ দিনে ৩৪ রানে চার উইকেট হারিয়ে হারের মুখে পতিত হওয়া বাংলাদেশের জন্য ভয়ের কারণ ছিল পঞ্চম দিনের প্রথম সেশন। কারণ অতীতে এমন অনেক বাজে অভিজ্ঞতা আছে যে দিনের প্রথম সেশনই বাংলাদেশ টিকতে পারেনি। চতুর্থ দিন শেষে সাকিব সেই শঙ্কার কথাই জানিয়েছিলেন দিনের শুরুতে তাদের দুই পেসার ষাড়াশি আক্রমণ আনবে। আবার আশার বাণিও শুনিয়েছিলেন দুই পেসারকে সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারলে বিপদ কাটানো যাবে। দুই পেসার সর্বোচ্চ না হয় ১০ ওভারই বল করবে।
সাকিবের কথাই সঠিক হয়েছে। দিনের শুরুতে দুই পেসার আশিথা ফার্নান্ডো আর কাসুন রাজিথা মিলে শুরু করেছিলেন কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে। এক একটি বল নয়, যেন কামানের গোলা। বিশেষ করে কাসুন রাজিথার বোলিং। তার বলেই মুশফিক আউট হন। যে বলটিতে মুশফিকের করার কিছুই ছিল না। কাসুন রাজিথার করা দিনের অষ্টম ওভারের তৃতীয় বলটি কিছুটি নিচু হয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। নিজেকে বাঁচাতে মুশফিক আপ্রাণ চেষ্টা করেন ব্যাট দিয়ে ঠেকাতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বল গিয়ে তার স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলে। প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ১৭৫ রান করা মুশফিকের এই বিদায় ছিল বাংলাদেশের জন্য বড় ধাক্কা। আগের দিনের ১৬ বলে ১৪ রানের সঙ্গে আজ আরো ২৩ বল খেলে ৯ রান যোগ করে তিনি ফিরে যান ২৩ রানে। জুটিতে তিনি লিটনের সঙ্গে যোগ করেন ৩০ রান। মুশফিককে আউট করার আগে রাজিথা লিটনকেও আউট করেছিলেন। তার বল লিটনের ব্যাটের কানায় লেগে উইকেট কিপারের হাতে জমা হয়েছে বলে মনে করে আম্পায়ার আউট দিয়েছিলেন। কিন্তু দারুণ ফর্মে থাকা আত্মবিশ্বাসী লিটন রিভিউ নিয়েছিলেন। রিভিউয়ে দেখা যায় বল ব্যাটে লাগেনি। পরে তিনিই বিজয়ী হন। তখন তার রান ছিল ৯। রাজিথার বল খেলতে ব্যাটসম্যাদের সমস্যা হওয়াতে অধিনায়ক করোনারত্নে তাকে দিয়ে টানা ছয় ওভার বোলিং করান। যেখানে আশিথা ফার্নান্ডোকে দিয়ে করিয়েছিলেন মাত্র তিন ওভার। কিন্তু রাজিথাকে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে দেননি সাকিব। তাকে ভোতা বানিয়ে দেন এসেই। সাকিব রাজিথার ওভার মোকাবেলা করে তিন বাউন্ডারি হাঁকান। এরপর তাকে আক্রমণকে থেকে ফিরিয়ে নেন করোনারত্নে।
আশিথা ফার্নান্ডো আগেই আক্রমণ থেকে সরে গিয়েছিলেন। পরে রাজিথাও চলে যাওয়ার পর আবার তাকে আক্রমণে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু তার উপরও চড়াও হন সাকিব-লিটন দুইজনেই। ফলে চার ওভার করানোর পর তাকেও আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেন করোনারত্নে। এরপর লঙ্কানরা স্পিন নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। কিন্তু এই সিরিজে তাদের স্পিনাররা মোটেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য আতঙ্ক হয়ে উঠতে পারেননি। আজও পারেননি। এজন্য সাকিব-লিটন দুইজনেই খেলেছেন নির্ভার। তাদের এক একটি রান বাংলাদেশের ইনিংসে হারের ব্যবধান কমিয়ে আনতে থাকে, যা গিয়ে ঠেকেছে ৮ রানের লিডে। লিটন রক্ষণশীল হলেও সাকিব ছিলেন বেপরোয়া। তাইতো লিটনের পরে ক্রিজে এসে আগেই হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লাঞ্চের আগে শেষ বলে ধনাঞ্জায়াকে বাউন্ডারি মেরে। এটি ছিল তার ৬১ বলের ইনংসে সপ্তম চার। লিটন ১২৭ বলে তিন চারে ৪৮ রানে অপরাজিত। এই ইনিংস খেলার পথে লিটন অষ্টম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেট দুই হাজার রানের মাইলফলক ছুলেন।
এসআইএইচ