চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় হারের মুখে বাংলাদেশ
ম্যাথিউস ও চান্দিমাল যেভাবে উইকেটে যেভাবে জমে গিয়েছিলেন, দুইটি শেসন তারা পার করে দেন। বাড়ছে তাদের লিড। তাতে করে চিত্রনাট ফুটে উঠছিল ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে যাচ্ছে। চাপে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সেই আরো ঘনিভুত করতে লঙ্কানরা যদি অলআউট না হয়,তা’হলে দিনের খেলার শেষভাগে গিয়ে তারা ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে চাইবে উইকেটর মুখ দেখতে। এখানে তারা সফল হলে পঞ্চম দিন জয়ের জন্য চেষ্টা চালাবে। এই চাপ ঘনিভুত যাতে না হয়, সে জন্য বাংলরাদেশের সামনে দুয়ার খোলা ছিল একটিই দ্রুত লঙ্কানদের অলআউট করা। সেই কাজটি বাংলাদেশ চা বিরতির পর বেশ ভালোভাবেই করতে পেরেছিল।
তৃতীয় নতুন বল নেয়ার পর ৮.২ ওভারে ৪১ রানে তুলে নেয় পাঁচ উইকেট। ফলে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে থাকে ১৪১ রানে। দিনের হিসেবে বেশিই। পেছনে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের স্মৃতি। যেখানে দুই টেস্টেই বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয়েছিল মাত্র ৫৩ ও ৮০ রানে। তাই অনেকটাই চাপে বাংলাদেশ। এই চাপকে হালকা করার রেসিপি ছিল একটিই- দিনের বাকি সময় নির্বিঘ্নে কোনো উইকেট না হারিয়ে পার করে দেয়া। কিন্তু সেই কাজটি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সুচারুরূপে করতে পারেননি। মাত্র ১৩ ওভার খেলে দিন শেষে করেছে চার উইকেটে ৩৪ রানে। ইনিংস হার এড়াতে হলে এখনো তাদের করতে হবে ১০৭ রান।
ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের দুই ইনিংসে দারুণ মিল। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ শুরুতেই পড়েছিল ব্যাটিং বিপর্যয়ে। এবার চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ছড়ি ঘোরাচ্ছেন দুই পেসার কাসুন রাজিথা ও আশিথা ফার্নান্ডো। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২৪ রানে হারিয়েছিল পাঁচ উইকেট। এবার ২৩ রানে চার উইকেট। প্রথম ইনিংসে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস হাল ধরে জুটিতে ২৭২ রান যোগ করে ত্রাতা হয়েছিলেন। দুই জনেই করেছিলেন সেঞ্চুরি। লিটন ১৪১ রান করে আউট হলেও মুশফিক ১৭৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে কে ধরবে সেই হাল। হারের মুখে যে দল। পতন রোধ করা সম্ভব না হলে ইনিংস হার হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না! আশার আলো হয়ে আছেন সেই মুশফিক-লিটনই। মুশফিক ১৪, লিটন ১ নিয়ে আবারো ত্রাতা হতে শেষ দিন মাঠে নামবেন। পরে আসবেন সাকিব, মোসাদ্দেক, তাইজুলরা। শুক্রবার খেলার পঞ্চম দিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য তাই অগ্নি পরীক্ষা। টিকে থাকতে হবে। পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার রান অতিক্রম করতে হবে। খেলা শুরু হবে সকাল সাড়ে নয়টায়।
ঢাকা টেস্টে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বোলাররা ফায়দা পাবেন বেশি। সেটি আবার বেশি পাবেন স্পিনারার। পূর্বাভাসের এই সততা মিলেছে পঞ্চম দিনের শেষ শেসনে। এই শেসনে দুই দলের মিলে উইকেট পড়েছে নয়টি। শ্রীলঙ্কানদের পাঁচটি, বাংলাদেশের চারটি। ২৩.১ ওভার খেলে রান উঠে ৮১। লঙ্কানরা ১০.১ ওভার খেলে ৪৭ রান করে। আর বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ১৩ ওভারে ৩৪ রান। এই নয় উইকেটের পাঁচটি নিয়েছেন পেসাররা, দুইটি স্পিনার আর দুইটি ছিল রান আউট। পঞ্চম দিন পিচের চরিত্র আরো ভায়বহ হয়ে উঠার কথা। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সেই বিপদ সংকুল পথই পাড়ি দিতে হবে?
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য বিপদ সংকুল পথ পাড়ি দেয়া যে সকজ হবে না তা আজকের চার উইকেটের পতনের মাঝেই বুঝা যাচ্ছে। নাজমুল হোসেন শান্তর রান আউট হওয়া বাদ দিলে বাকি ব্যাটসম্যানের করা কিছুই ছিল না। আশিথা ফার্নান্ডোর বল রক্ষাণাত্বক খেলতে গিয়েও পারেননি তামিম। ব্যাটের কানায় লেগে তৃতীয় স্লিপে কুশাল মেন্ডিসের হাতে জমা পড়ে। তিনবারের চেষ্টায় ক্যাচ ধরেন তিনি। প্রথম ইনিংসের মতো এই ইনিংসেও তিনি রানের খাতা খুলতে পারেননি। ক্যারিয়ারে এবারই তিনি প্রথম পেয়ারের স্বাদপেলেন। শুরুতে যেখানে তামিম ফিরে গেছেন। বাকিদেরসতর্ক হওয়া উচিত। মুমিনুল হক যেন ব্যর্থতার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। তখনই অহেতুক রান নিতে গিয়ে জয়াবিক্রমার সরাসরি থ্রোতে রান আউট হয়ে যান নাজমুল (২)। রাজিথার বল ড্রাইভ করতে গিয়ে টাইমিং মেলাতে পারেননি।
উইকেটের পেছনে জমা পড়ে বল। তিনিও তামিমের মতো কোনো রান করতে পারেননি। টানা সাত ইনিংসে আউট হলেন দুই অংকের নিচে। দুইবার জীবন পেয়েও মাহমুদুল হাসান জয় ইনিংসকে বড় করতে পারেননি। আশিথা ফার্নান্ডোর বাউন্সারে পরাস্ত হন। । হঠাৎ করে বল লাফিয়ে উঠে। নিজেকে বাঁচাতে ব্যাট সামনে ঠেলে দেন। বল গিয়ে জমা পড়ে দ্বিতীয় স্লিপে কুশাল মেন্ডিসের হাতে। দলের রান তখন চার উইকেটে ২৩। প্রথম ইনিংসের পূনরাবৃত্তি! কিন্তু পরে আর কোনো উইকেটর পতন হতে দেননি প্রথম ইনিংসের দুই ত্রাতা মুশফিক ও লিটন।
এমপি/এএজেড