পাকিস্তানের রেকর্ড গড়া জয়
ছবি : সংগৃহীত
ভাঙাচোরা দল নিয়ে পাকিস্তানকে রেকর্ড ২০৭ রান করে বিশাল চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু দুর্দান্ত ফর্মে থাকা পাকিস্তান দলের সামনে এখন কোনো বাধাই যেন বাধা না। তাইতো সেই রানও তারা টপকে গেছে ৭ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখে। সঙ্গে ছিল বেশ কয়েকটি অর্জনও। সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়। রিজওয়ান ও বাবর আজমের উদ্বোধনী জুটিতে সবচেয়ে বেশি শতরানর রেকর্ড গড়ে পাকিস্তান। তা ছাড়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক পঞ্জিকা বর্ষে দুই হাজার রান করেন রিজওয়ান। এই ম্যাচ জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান সফরকারি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল। ম্যাচ ও সিরিজের সেরা হয়েছেন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ান।
দলে একাধিক ক্রিকেটার করোনা আক্রান্ত হলে শেষ টি- টোায়েন্টি ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেরা একাদশ নামানোই কঠিন হয়ে পড়ে। করোনার কারণে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেরা একাদশ নামালেও সেখানে স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান ছিলেন মাত্র চারজন- শামার ব্রুকস, নিকোলাস পুরান, ব্র্যান্ডেন কিং ও ড্যারেন ব্রাভো। এই চার জন মিলেই পাকিস্তানকে কঠিন চ্যলেঞ্জে ফেলে দিয়েছিলেন। চার ব্যাটসম্যানকে নিয়ে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন দলপতি নিকোলাস পুরান। রানও করেন এই চারজন। পাওয়ার প্লেতেই উদ্বোধনী জুটিতে শামার ব্রুকস ও ব্রান্ডেন কিং করেন ৫৬ রান। পাওয়ার প্লের শেষ বলে আউট হন কিং। তিনি ২১ বলে করেন ৪৩ রান। তার ইনিংসে ছিল ২টি ছক্কা আর ৭টি চার। দলীয় ৯৯ রানে ব্রুকস ফিরে যান ৩১ বলে ৪টি ছক্কা আর ২টি চারে মোট ৪৯ রান করে। পরবর্তিকালে তৃতীয় উইকেট জুটিতে নিকোলাস পুরান ও ব্রাভো ৯৩ রান যোগ করেন মাত্র ৮ ওভারে। দলপতি পুরান ২৭ বলে ৬ ছক্কা ও ২ চারে ৬৪ রান করে ফিরে যান। এই জুটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর শেষের বলগুলো থেকে আর সেভাবে রান সংগ্রহ করতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। ব্রাভো ও রভম্যান পাওয়েল মিলে শেষ ১৪ বলে যোগ করেন মাত্র ১৫ রান। ব্রাভো ২৭ বলে ৩৪ ও পাওয়েল ৬ বলে ৬ রান করে অপরাজিত থাকেন। মোহাম্মদ ওয়াসিম ৪৪ রানে নেন ২ উইকেট।
বিশাল টার্গেট। এত বেশি রান তাড়া করে জয়ের নজির অতীতে নেই পাকিস্তানের। আগেই সিরিজ নিশ্চিত করা পাকিস্তান দল কি তাহলে ভাঙাচোরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলের কাছে হেরে যাবে? দলটি যখন পাকিস্তান। আগে আনপ্রেডিকটেবল দল ছিল। এক ম্যাচে আকাশে উড়ে, পরের ম্যাচে ধপাস। এখন সেই শব্দ মুছে গেছে দলীয় নৈপুণ্যের কারণে। তারই ভালো খেলার আরেকটি প্রদশর্নী হয়ে গেল করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গোটা আসর জুড়ে দলের দুই ওপেনার- দলপতি বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান দেখিয়েছেন দারুন ব্যাটিং শৈলী। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে সেটা ছিল আবার উধাও। এমন কি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আগের দুই ম্যাচে রিজওয়ান সফল হলেও বাবর ছিলেন পুরোই ব্যর্থ। এবার দুই জনে মিলে আবার দ্বৈত কণ্ঠে গান গাওয়া শুরু করলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের বলে সুরের মূর্ছনা তৈরি করলেন। আসতে থাকে রান। বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো। পাওয়ার প্লেতেই আসে ৬০ রান। ১০০ রান আসে ১০.১ ওভারে। যেভাবে খেলছিলেন দুই ব্যাটসম্যান, তাতে মনে হচ্ছিল তারাই খেলা শেষ করবেন। কিন্তু জুটিতে ১৫৮ রান আসার পর বিচ্ছেদ আসে দলপতি বাবর আউট হয়ে গেলে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটি ছিল তাদের ষষ্ঠ শতরানের জুটি। পেছনে ফেলে দেন পাঁচটি শতরানের জুটি করা লুকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মাকে। ৪০ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা বাবর আউট হন ৫৩ বলে ৭৯ রান করে। ওডেন স্মিথের বলে শেফার্ডের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তার ইনিংস ছিল ২ ছক্কা ও ৯ চারের। মোহাম্মদ রিজওয়ান ছিলেন বেশি আক্রমণাত্মক। ২৬ বলে তুলে নেন ফিফটি। আউট হওয়ার আগে ৪৫ বলে করেন ৮৭ রান। ৩ ছক্কার সঙ্গে ছিল ১০ চার। তাকে ফিরিয় দেন ড্রেকস। উইকেটের পেছনে তার ক্যাচ ধরেন নিকোলাস। এই ইনিংস খেলার পথে রিজওয়ান এক ক্যালেন্ডার ইয়ারে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দুই হাজার রান করার নজির গড়েন। তার বর্তমান রান ২ হাজার ৩৬। তার পেছনে আছেন তারই দলপতি বাবর আজম। তার রান ১ হাজার ৭৭৯। দলীয় ১৯৫ রানে ফখর জামান (১২) আসিফ আলীর ৭ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় অপরাজিত ২১ রানের সুবাদে পাকিস্তান জয়ের নাগাল পেয়ে যায় ৭ বল বাকি থাকতেই ৩ উইকেট হারিয়ে। পেছনে পড়ে যায় এ বছরই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ২০৪ রান তাড়া করা ম্যাচটি।
এমপি/টিটি