‘খুব বাজে ব্যাটিং করেছি আমরা’
ডারবানের পর পোর্ট এলিজাবেথ-দুই টেস্টেই দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা বাজে ব্যাটিংয়ের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তা কেমন বাজে ব্যাটিং? ডারবানে ৫৩ ও পোর্ট এলিজাবেথে ৮০ রানে অলআউট। দুই টেস্টেই ৫ ব্যাটসম্যানের নামের পাশে কোনো রান নেই। এর মাঝে ব্যাটিং লাইনের নতুন সেনসেশন মাহমুদুল হাসান জয় ‘পেয়ার’ মেরেছেন।
দুই ইনিংসেই বাংলাদেশে খেলতে পেরেছে মাত্র ১৯ ও ২৩.৩ ওভার। অধিনায়ক মুমিনুল কোনো রকম রাখডাক না করেই সরাসরি বলেছেন তারা খুবই বাজে ব্যাটিং করেছেন।
সোমবার (১১ এপ্রিল) চতুর্থ দিনের প্রথম ঘন্টাই অলআউট হওয়ার পর ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ব্যাখ্যা একটাই-বাজে ব্যাটিং করেছি। আমার কাছেও মনে হয়, খুব বাজে ব্যাটিং করেছি আমরা। টিমওয়াইজ ভালো খেলতে পারিনি। আগের টেস্টগুলোও যদি দেখেন, প্রথম টেস্ট হেরেছি, কিন্তু প্র্রথম ইনিংসে ভালো ব্যাটিং করেছিলাম। সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করতে পারিনি। সেশন ধরে ধরে ব্যাটিং করা, লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং করা, ওই জিনিসগুলো হয়তো মিসিং ছিল।’
নিউ জিল্যান্ডের কন্ডিশনে বাংলাদেশ টেস্ট জিততে পারলেও দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে বাংলাদেশ নিজেদের মেলেই ধরতে পারেনি।
নিউ জিল্যান্ডে টেস্ট জয় ফ্লুক ছিল না-জানতে চাওয়া হলে মুমিনুল বলেন, ‘ওইখানের কন্ডিশনের সঙ্গে এখানকার কন্ডিশনের পার্থক্য অনেক। ফ্লুক বলবেন কি না, সেটা আপনার সিদ্ধান্ত। টেস্ট ম্যাচে পাঁচদিন খেলা ফ্লুক না, এটা আপনিও জানেন। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের সঙ্গে অনেক পার্থক্য, আপনি মেলাতে পারবেন না।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল পূর্ন শক্তির দলের বিপক্ষে। টেস্ট সিরিজে তাদের বেশ কয়েকজন সেরা ক্রিকেটার দলে না থাকাতে টেস্টও জেতার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু জিততে না পারাতে হতাশা হয়েছেন জানিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘ক্যাপ্টেন হিসেবে হতাশাজনক। অ্যাট লিস্ট একটা টেস্ট জেতার সুযোগ ছিল, প্রতিতপক্ষ হিসেবে তাদের কয়েকজন হয়তো ছিল না।’
ঘরের মাঠে সব সময় বাংলাদেশ স্পিনেই ভরসা। জাতীয় দলের যে চারজন ক্রিকেটার টেস্টে উইকেট প্রাপ্তির সেঞ্চুরি করেছেন তারা সবাই স্পিনার। এদের তিনজন সাকিব, তাইজুল আর মিরাজ এখন দলের প্রধান কান্ডারি। অথচ সেই স্পিনের বিপক্ষই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নাকানি-চুবানি খেয়েছেন। তাও আবার দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে। পসন হওয়া ৪০ উইকেটের ২৯টিই নিয়েছেন দুই স্পিনার কেশভ মহারাজ ও সাইমন হার্মার।
এভাবে পর্যুদস্ত হওয়া নিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘এমন না যে আমরা স্পিনিং উইকেট খেলি না, স্পিনিং উইকেটেই খেলি। আগে যেমন বলছিলাম, দুই-একটা জায়গায় এক্সিকিউশনে ভুল হয়েছে আমাদের। প্রথমে দুই-একটা আউট ছিল, কিছু করার ছিল না। আগে থেকে সবাই জানে, আমরা স্পিনে খুব বেশি ভালো প্লেয়ার। দুই-একজন ছাড়া কেউ স্পিনে ভালো না। খেলে হয়তো, কিন্তু স্কয়ার অব দ্য উইকেটে আরও ইম্প্রুভ করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘উপমহাদেশের উইকেটে যারা করে, সাইডস্পিন আমাদের দেশে খুবই কাজে দেয়। এখানে সাইডস্পিন খুব একটা কাজে দেয় না, ওভারস্পিনে ইউজফুল। আমাদের বোলাররা হয়তো সাইডস্পিনে বেশি অভ্যস্ত। আমাদের প্লেয়াররা এক-দুই দিনে ওভার স্পিন করবে, ওভার স্পিন করতে গেলে অনেক টেকনিক্যাল বিষয় চেঞ্জ করতে হয়। আর ডমেস্টিকের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের অনেক পার্থক্য, আপনারা আরও ভালো জানেন।’
টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করতে হলে প্রতিটি সেশন ভালো খেলতে হবে বলে জানান মুশফিক। একটি-দুইটি সেশন ভালো খেলে বা একদিন ভালো খেলে টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন কাপ্তান। তিনি বলেন, ‘টেস্টের মানসিকতা প্রতিদিনই ভালো খেলতে হবে। প্রতিটা সেশন ভালো খেলতে হবে। আরও উন্নতি করতে হবে।’
দলের বিপর্যয়ের মুখে মুশফিকের এভাবে রিভার্স সুইপ খেলে আত্মহত্যা করা নিয়ে চারিদিকে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। কিন্তু মুমিনুল মুশফিকের এ রকম শট খেলাকে সমর্থন দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ওনার টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি-যেখানেই হোক, রিভার্স সুইপ তো ক্রিকেটের একটা শট, তাই না? বাইরের কিছু না। এই শট খেলতেই পারেন, উনার (মুশফিক) প্লান থাকলে তো খেলবেনই। এমন না যে এটা খেলে এর আগে রান করেনি। বা সফল হননি। আমি উনাকে সাপোর্ট করি এটা নিয়ে।’ এ নিয়ে আর বিতর্ক যাতে না হয় সে ব্যাপারে অনুরোধ করেন মুমিনুল। তিনি বলেন, ‘ এটাতে সফল হয়েছেন উনি। আপনিও দেখেছেন, আমিও দেখেছি। এক সময় আমার সঙ্গেও ছিলেন। আপনাকে রিকোয়েস্ট করব জিনিসটা নিয়ে যদি অনেক বেশি জোর দেন আপনারা, বাংলাদেশ টিমের জন্য খারাপ, দেশের জন্য খারাপ, উনি তো এই শটটা খেলে সফলও হন।’
নিউ জিল্যান্ডে বাংলাদেশ চার বোলার নিংেয় খেললেও দক্ষিণ আফ্রিকাতে ব্যর্থ হয়েছে। এ নিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘পাঁচটা বোলার আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। ব্যাটিং অনেক দূর্বল হয়ে পড়ে। টেস্টে আমরা এক নম্বর টিম হয়ে যাইনি এখনো। হয়তো মাঝে মাঝে একটু সাফল্য আসবে, কিন্তু এক নম্বর দল হয়ে যাইনি। যখনোই চার-পাঁচ নম্বর দল হবো, ৫টা বোলার নিয়ে খেলতে পারব। আমার কাছে লজিক্যালি এটাই মনে হয়।’
এমপি/এমএমএ/