পোর্ট এলিজাবেথ টেস্ট
ব্যাটিং ধসে ফলোঅনের মুখে বাংলাদেশ
যে উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডার থেকে লোয়ার অর্ডার পর্যন্ত ব্যাটসম্যানরা রান করেছেন, যারা রান করতে পারেননি, তারা ঠিকে ছিলেন। অর্ধশতরানের জুটি হয়েছে পাঁচটি। অর্ধশত রানের ইনিংস আছে তিনটি। সেই উইকেটে চা বিরতির পর ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা দাঁড়াতেই পারছেন না। ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে ফলোঅনের মুখে পড়েছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, যে উইকেটে বাংলাদেশের স্পিনার তাইজুল একাই তুলে নিয়েছেন ৬ উইকেট, সেই উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা করছেন রাজত্ব। পতন হওয়া ৫ উইকেটই দুই পেসার মুল্ডার ও অলিভার ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। যে কারণে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৫৩ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে মলিন বদনে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৯ রানে। ফলোঅন এড়াতে হলে হাতে থাকা ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে করতে হবে আরও ১১৫ রান। তবেই সম্ভব হবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আবার ব্যাট করতে পাঠানো। নতুবা নিজেরাই আবার নামবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে। মুশফিকুর রহিম ৩০ ও ইয়াসির আলী ১১ রান নিয়ে তৃতীয় দিন ব্যাট করতে নামবেন।
বোলাররা ভালো-মন্দের মিশেলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪৫৩ রানে আটকে রাখার পর দায়িত্ব পড়ে ব্যাটসম্যানদের উপর। যদিও সেই কাজটা শুরুতে একেবারেই ভালো হয়নি। বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনের নতুন ভরসা মাহমুদুল হাসান জয় কোনো রান না করে মাত্র ২ বল খেলে শুরুতেই অলিভারের বলে ফিরে গেলেও দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর সাদা পোশাকে খেলতে নামা ওপেনার তামিম ইকবাল ওয়ান ডাউনে নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে সেই ধাক্কা সামলে বেশ ভালোই এগুচ্ছিলেন। দুইজন খুবই স্বাভাবিক খেলে যাচ্ছিলেন। তাদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে বাংলাদেশও ভালো জবাব দেবে? জুটিতে পঞ্চাশ রানও চলে আসে। কিন্তু ৭৯ রান যোগ হওয়ার পরই বড় ধাক্কা খায়। এই ধাক্কা দেন পঞ্চম বোলার হিসেবে মুল্ডার বল হাতে তুলে নেওয়ার পরই। দুই পেসার অলিভার ও উইলিয়ামস এবং দুই স্পিনার হার্মার ও মহারাজকে সফলভাবে মোকাবিলা করার পর মুল্ডারে এসে ধরা খায় বাংলাদেশ। মুল্ডার তার প্রথম দুই ওভারেই ফিরিয়ে দেন উইকেটে জমে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্তকে। প্রথমে হাফ সেঞ্চুরির কাছাকাছি যাওয়া তামিম ইকবালকে ৪৭, পরে নাজমুল হোসেন শান্তকে ৩৩ রানে। দুইজনেই এলবিডব্লিউর শিকার হন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। অল্প সময়ের ব্যবধানে মুল্ডার আবারও আঘাত হানেন এবং কাপ্তান মুমিনুলকে একইভাবে এলবিডব্লিউ করে। মাত্র ৬ রান করেন কাপ্তান। প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে তার রান ছিল ২ ও ০। এই তিনজনেকেই মুল্ডার রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে ফাঁদে ফেলেন। ১ উইকেটে ৮২ থেকে ৪ উইকেটে ১০০। বাংলার আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। সেই ঘনঘটা আরও গভীরে চলে যায় ফর্মে থাকা লিটন দাসের বিদায়ে। ব্যক্তিগত ১১ রানে তাকে বোল্ড করেন অলিভার। ৪০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ অকুল দরিয়ায় ভাসছে। লিটন যখন আউট হন, তখনও দিনের খেলা শেষ হতে বাকি আরও ৮ ওভার। যেভাবে উইকেট পড়ছিল, তাতে করে আরও উইকেট পড়া অস্বাভাবিক ছিল না। এ সময় মুল্ডার থেমে যান। কিন্তু অলিবভার এবং দুই স্পিনার মহারাজ ও হার্মারকে মুশফিক ও ইয়াসির অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করলে বাংলাদেশের আর কোনো উইকেট পড়েনি।
শেষ সেশনে ব্যাটসম্যানরা যেমন অস্বস্তিতে রেখেছেন দলকে, তেমনি প্রথম দুই সেশনে বোলাররা। ২৭১ রানে ৫ উইকেট ফেলে দেওয়ার পরও লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তায় সেই রান গিয়ে ঠেকে ৪৫৩ রানে। শেষ ৫ ব্যাটসম্যান মিলে যোগ করেন ১৮২ রান। লোয়ারের অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা যেভাবে উইকেটে জমে গিয়েছিলেন, তাতে করে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ৫০০ ছাড়িয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। কিন্তু আজ চা বিরতির আগে বাংলাদেশের বোলারদের জন্য বাধার প্রাচীর হয়ে উঠা কেশভ মহারাজসহ শেষ ২ উইকেট দ্রুত তুলে নিয়ে হাফ ছেড়ে বাঁচেন বাংলাদেশের বোলাররা।
কেশভ মহারাজের আগমন ঘটেছিল লাঞ্চের আগে। আর বিদায় ঘটেছে চা বিরতির আগে। কিন্তু যাওয়ার আগে তিনি দলকে নিয়ে গেছেন উপরে, আর তলানিতে ঠেলে দেন সফরকারি বাংলাদেশকে। কেশভ মাহরাজের মূখ্য পরিচয় অফ স্পিনার। যা দিয়ে তিনি ডারবানে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে একাই ঘায়েল করেছিলেন। এবার তিনি ব্যাট হাতে বাংলাদেশ দলকে পেরেক ঢুকিয়ে দেন। আগ্রাসী ব্যাটিং করে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ৮৪ রান করে তবেই ফেরেন তিনি। তার এই ইনিংসের কারণে অনেকটা আড়ালে পড়ে গেছে তাইজুল ইসলামের দশমবার ক্যারিয়ারে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তিও। পরে সাইমন হার্মারকে (২৯) ফিরিয়ে তাইজুল তার উইকেট সংখ্যা ছয়ে উন্নিত করেন। ষষ্ঠ উইকেট নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাইজুল বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম বোলার হিসেবে ৩৬ টেস্টে দেড়শ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন। তার আগে এই মাইলফলক ছিল সাকিবের। তিনি ৪৩ ম্যাচ খেলেছিলেন এই মাইলফলক র্স্পশ করতে। শেষ ব্যাটসম্যান উইলিয়ামসকে (১৩) ফিরিয়ে দিয়ে মিরাজ ইনিংসে তার একমাত্র শিকার ধরেন। প্রথম দিন কাপ্তান ডিন এলগার ৭০, টেম্বা বাভুমা ৬৭, কিগান পেটারসেন ৬৪, রিকেলটন ৪২ রান করেছিলেন। তাইজুল ১৩৫ রানে নেন ৬ উইকেট। খালেদ ৩ উইকেট নিতে খরচ করেন ১০০ রান। মিরাজের ১ উইকেটের পেছনে ব্যয় হয় ৮৫ রান।
এমপি/টিটি