জয়ের পথে মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল, সৌম্য-জাকিরের সেঞ্চুরি
বাজে ফর্মের কারণে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া ক্রিকেটারদের ফর্মে ফেরার বিচরন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল)। প্রথম রাউন্ডের দ্বিতীয় দিন সেঞ্চুরি করেছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন। খেলেছিলেন ১৭৬ রানের ইনিংস। আজ সেখানে নাম লেখান সৌম্য সরকার। তিনি খেলেন অপরাজিত ১০৪ রানের ইনিংস। জাতীয় দলের এই দুই ক্রিকেটারের সঙ্গে দ্বিতীয় দিন সেঞ্চুরি করেছিলেন মিজানুরও (১৬২)। এই তিন জনের সেঞ্চুরিতে ভর করে ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল ৩ উইকেটে ৫৬৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে আছে ম্যাচ জয়ের পথে। চট্টগ্রামে প্রতিপক্ষ বিসিবি উত্তরাঞ্চল ৩৪৪ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে পড়েছে ব্যাটিং বিপর্যয়ে। দিন পার করেছে ৫ উইকেটে ১৭২ রানে। ইনিংস হার এড়াতে হলে কিংবা মধ্যাঞ্চলকে আবারো ব্যাটিংয়ে পাঠাতে হলে করতে হবে আরো ১৭২ রান।
চট্টগ্রামের মতো রাজশাহীতে বিসিবি উত্তরাঞ্চলও আছে জয়ের পথে। জাকিরের ১৫৮ রানের সুবাদে নিজেরা ৪২৯ রানে অলআউট হওয়ার পর এগিয়ে ছিল ১৬৯ রানে। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করেতে নামা ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল ৫ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করে নামের পাশে জমা করেছে ১৯৫ রান। এগিয়ে আছে মাত্র ২৬ রানে। এক প্রান্ত আগলে রেখে ৭৩ রানে অপরাজিত থাকা আফিফ হোসেন ব্যাট করতে নামবেন ১৮ রানে অপরাজিত থাকা ইরফান শুক্কুরকে সঙ্গে নিয়ে। এরপর আছেন লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। এদেরকে নিয়ে পূর্বাঞ্চল নিজেদের লিড কতোদূর বাড়িয়ে নিতে পারে সেটাই দেখার বিষয়।
দ্বিতীয় দিন সেঞ্চুরি হয়েছিল দুইটি। দুইটিই করেছিলেন মধ্যাঞ্চলের দুই ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন ও মিজানুর রহমান। তৃতীয় দিনও সেঞ্চুরি হয়েছে দুইটি। তবে একেই দলের নয়। মধ্যাঞ্চলের সৌম্য সরকার অপরাজিত ১০৪ রান করেন। অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চলের জাকির হোসেন আগের দিন ৯১ রানে অপরাজিত ছিলেন। আজ তিনি সেই ইনিংসকে নিয়ে যান ১৫৮ রানে।
চট্টগ্রামে মধ্যাঞ্চলের যে কয় ব্যাটসম্যান ক্রিজে গিয়েছেন সবাই রানের দেখা পেয়েছেন। তিন সেঞ্চুরিয়ান ছাড়া বাকি দুই ব্যাটসম্যান পেয়েছেন হাফ সেঞ্চুরির দেখা। সালমান ৫৩ রান করে আউট হন। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ৫০ রান করে অপরাজিত থাকেন।
আগের দিন সৌম্য সরকার ৩৯ ও সালমান ৪০ রানে অপরাজিত ছিলেন। সালমান তার ইনিংস খুব বেশি দূর নিয়ে যেতে পারেননি। হাফ সেঞ্চুরি করার পরই তিনি সাজ ঘরে ফিরেন ৫৩ রানে সানজামুলের শিকারে হয়ে। কিন্তু সৌম্য সেই ইনিংসকে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারে রূপ দেন। ৭৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি করার পর সেঞ্চুরি করেন ১৪১ বলে। প্রায় ২ বছর পর প্রথম শেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরি পেলেন সৌম্য। তার সর্বশেষ সেঞ্চুরি ছিল ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিলটনে। মোসাদ্দেকের সঙ্গে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৯৭ রান যোগ করে অবিচ্ছিন্ন থাকেন। মোসদ্দেক ৫৭ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কা মেরে ৫০ রানে অপরাজিত থাকেন। মুরাদ নেন ৩ উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে উত্তরাঞ্চল আবারও বিপদে পড়ে। যদিও ধ্বস নামেনি। কিন্তু লম্বা জুটি গড়ে উঠেনি। একপ্রান্তে ওপেনার তানজিদ হাসান ছাড়া আর কেউ উইকেটে দাঁড়াতে পারেননি। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে সানজিদ আউট হন ৯০ রানে।
রাজশাহীতে দক্ষিণাঞ্চল ৫ উইকটে ১৯৫ রান নিয়ে খেলতে নেমে জাকিরের সঙ্গে বলহাতে ৫ উইকেট পাওয়া নাসুম আহমেদের ব্যাটে ভর করে ইনিংস পেটমোটা করে ৪২৯ রানে। এই দুই জনে নবম উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১০৪ রান। জুটি ভাঙ্গে নাসুম আউট হলে। ৭৯ বলে ১ ছক্কা ও ১০ চারসহ তিনি করেন ৫৯ রান। ৯১ রানে নিয়ে খেলতে নেমে জাকির সেঞ্চুরি করে সেই্ ইনিংসকে ১৫৮ রানে টেনে নিয়ে আউট হন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। তার ২৭৬ বলের ইনিংসে ছিল ২টি ছক্কা ও ১৯টি চার। আশরাফুল, নাঈম ও মোহাম্মদ এনামুল ৩টি করে উইকেট নেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে পূর্বাঞ্চল প্রথম ইনিংসের মতোই মেহেদী ও নাসুমের আক্রমণের শিকার হন। পতন হওয়া ৫ উইকেটর ৪টি দুইজনে নেন সমান ২টি করে। এই দুই জনের কারনে ৯০ রানে ৪ উইকেট হারায় পূর্বাঞ্চল। পরে আফিফ এক প্রান্ত আগেলে রেখে হার বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। আফিফ দলপতি নাদিফ চৌধুরীকে নিয়ে হাল ধরে ৫২ রান যোগ করেছিলেন। নাদিফকে নাহিদুল ফিরিয়ে দেওয়ার পর ইরফান শুক্কুরকে নিয়ে ৫৩ রান যোগ করে আগামীকাল আবার ব্যাট করতে নামবেন। আফিফ ৯৭ বলে ৩ ছক্কা ও ৫ চারসহ ৭৩ রান করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বিসিবি উত্তরাঞ্চল বনাম ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল
উত্তরাঞ্চল- ২১৯ ও ১৭২/৬, ওভার ৫৮ (তানজিদ ৯০, মার্শাল ২৮*, তানবীর ১৮, নাঈম ১৮, মুরাদ ৩/৩৯ )।
মধ্যঞ্চল- ৫৬৩/৩ ডি ওভার ১৩০.১ (আগের দিন শেষে ৪৩০/২) ১৩০.১ ওভারে ( মিঠুন ১৭৬,মিজানুর ১৬২,সৌম্য ১০৪*, সালমান ৫৩, মোসাদ্দেক ৫০*; নাঈম ১/৬১,নোমান ১/৯৪, সানজামুল ১/১৬৮,)
ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চল বনাম বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল
পূর্বাঞ্চল- ২৬০ ও ১৯৫/৫, ওভার ৫৩ (আফিফ ৭৩*, ইমরুল ৩৯, আশরাফুল ২৫, ইরফান ১৮*; নাসুম ২/৬৫, মেহেদি ২/৪৭)।
দক্ষিণাঞ্চল- ৪২৯ (আগের দিন ২৮৮/৬) ওভার ১১৮.২ (জাকির ১৫৮, নাসুম ৫৯, মেহেদি ৩২, নাঈম ৩/১২৭ মোহাম্মদ এনামুল৩/৬৯, আশরাফুল ৩/৮২, আফিফ ৪-১-১১-০)
এমপি/এএস