ডারবান টেস্ট
প্রথম দিন সমানে সমান
বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার দুই টেস্টের সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিন কোনো দলই নিজেদের করে নিতে পারেনি। দুই দলই ছিল সমানে সমান। তিন সেশনের প্রথম সেশন ছিল প্রোটিয়াদের। বিনা উইকেটে তাদের রান ছিল ৯৫।
দ্বিতীয় সেশনে দারুণভাবে বাংলাদেশ খেলায় ফিরে আসে। তুলে নেয় ৩ উইকেট। ২৮ ওভারে রান সংগ্রহ করতে দেয় ৭০। সফরকারীদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ১৬৫।
শেষ সেশন কোনো দলই নিজেদের করে নিতে পাারেনি। বাংলাদেশ দল তুলে নেয় আরো ১ উইকেট। আর স্বাগতিকরা রান করে ২৩.৫ ওভারে ৬৮। প্রথম দিন শেষে তাই তাদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৩৩ রান। আলোর স্বল্পতার কারণে দিনের খেলা ৭৬.৫ ওভারের পর বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে সাইট স্ক্রিনের সমস্যার কারণে টস হওয়ার পরও খেলা শুরু হয় ৩২ মিনিট বিলম্বে। যে কারণে লাঞ্চ বিরতিও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল আধ ঘণ্টা। ডারবানে এই সময়ে সন্ধ্যা নেমে আসে ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার দিকে।
টস জিতে বাংলাদেশ দল বোলিং বেছে নিয়েছিল সকালের আর্দ্রতা কাজে লাগিয়ে স্বাগতিকদের বিপাকে ফেলে ম্যাচের ড্রাইভিং আসনে বসে পড়ার জন্য। কিন্তু দলপতি মুমিনুলের এই পরিকল্পনা ভুল প্রমাণ করে দেন প্রোটিয়া দলপতি ডিন এলগার ও সারেল এরউই। দুইজনে যেভাবে খেলছিলেন, তাতে করে সফরকারিদের রানের পাহাড়ে চাপা পড়ারই কথা ছিল। কিন্তু এই জুটি ১১৩ রানে ভেঙে যাওয়ার পর দারুণভাবে খেলায় ফিরে আসে বাংলাদেশ দল। ৬৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে প্রোটিয়াদের ড্রাইভিং আসন থেকে ছিটকে ফেলে নিজেরা বসে পড়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারাও বসে থাকতে পারেনি। আবার প্রোটিয়ারাও বসতে পারেনি। দিনটি দুই দল ভাগাভাগি করে নেয়।
প্রথম দিন শেষে দুই দলই যেখানে সমানে সমান, সেখানে দিনের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্য খুবই হতাশার। টস জেতা ছাড়া দিনটি আসলে বাংলাদেশের জন্য ভালোভাবে শুরু হয়নি। দীর্ঘ ১১ মাস পর যে তামিম ইকবাল আবার সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ফেরা নিশ্চিত ছিল, সেখানে ঘটে ছন্দপতন। হঠাৎ করে প্রচণ্ড রকমের পেটের পীড়ার কারণে তার আর খেলাই হয়নি। এমনকি হোটেল থেকে মাঠেই আসা সম্ভব হয়নি। হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা বাংলাদেশ দলের জন্য বিরাট এক ধাক্কা। এমন নয় যে তামিম ইকবাল ছাড়া বাংলাদেশ খেলেনি। তাকে ছাড়াই গত পাঁচ টেস্ট খেলেছে। জয়ও পেয়েছে নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে। কিন্তু এখানে নিশ্চিত খেলার কথা, সেখানে না খেলতে পারাটা বিরাট ধাক্কা। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয়ের খেলোয়াড় বাঁহাতি পেসার শরিফুলও ছিটকে পড়েন আগের দিন ইনজুরির কারণে।
তারপর দিনের প্রথম বলই তাসকিন করেন ফুলটস। ব্যাটসম্যান ছিলেন এলগার। এমন বলের যে রকম সাজা হওয়ার কথা, তেমনটিই হয়েছে। সোজা বাউন্ডারি পার। সেই শুরু। পরে আর তাসকিন যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি, তেমনি অন্য দুই পেসার এবাদত ও খালেদও। এমনকি পেসারদের ব্যর্থতায় দলপতি মুমিনুল দ্রুতই স্পিনার মিরাজকেও আক্রমণে নিয়ে আসেন। এখানে সফল হতে পারত বাংলাদেশ। লাঞ্চের আগের ওভারে মিরাজের বলে এরউই ক্যাচ দিয়েছিলেন উইকেটের পেছনে। কিন্তু লিটন দাস গ্লাভসবন্দি করতে পারেননি। তাই সব মিলিয়ে প্রথম সেশন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য মন্দই ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় সেশন থেকেই বাংলাদেশের বোলারার দারুণভাবে ফিরে আসে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ প্রোটিয়াদের কব্জা মুক্ত করতে থাকেন।
প্রথম সেশন হতাশায় কাটানোর পর দ্বিতীয় সেশনটা আর হতাশায় কাটেনি বাংলাদেশের। দক্ষিণ আফ্রিকার তুলে নেওয়া হয় ৩ উইকেট। জগদ্দল পাথরের মতো বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসা দুই ওপেনার কাপ্তান ডিন এলাগর ও সারেল এরউইসহ সাজঘরে ফিরে যান পিটারসন ও অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা রায়ান রিকেলটন। মিরাজ, খালেদ, এবাদত ১টি করে উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি অপরটি ছিল রানআউট। তাইতো বিনা উইকেটে ১১৩ রান থেকে স্বাগতিকদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১৮০।
দলীয় ১১৩ রানে বাংলাদেশে শিবিরে উল্লাস করার উপলক্ষ এনে দেন খালেদ। লাঞ্চের পর দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে দ্বিতীয় বলেই পেয়ে যান উইকেট। তার আচমক লাফিয়ে উঠা বল এলগারের গ্লাভস ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের হাতে জমা পড়ে। এলগার আউট হন ৬৭ রানে। ৪ রান পরে এলগারের পথ দেখান এরউইকে মিরাজ। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়ে প্লেইডঅন হন ৪১ রানে। শেষ হয় তার ১০২ বলের ধৈর্য্যশীল ইনিংসের। বাংলাদেশের তৃতীয় উইকেট ছিল মিরাজের কল্যাণে রানআউট করে। তাসকিনের বল পিটারসন পয়েন্ট খেলে রান নিতে ছুটেন। মিরাজ ঝাঁপিয়ে পড়ে বল আটকে পরে সরাসরি থ্রোতে পিটারসনের (১৯) স্ট্যাম্পে আঘাত হানেন। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয়ের নায়ক এবাদত দেশকে চতুর্থ উইকেট উপহার দেন অভিষিক্ত রিকেলটনকে (২১) আউট করে। তার অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল পুল করতে গিয়েং টাইমিংয়ে গড়বড় করে ফেলায় মিড অনে সহজ ক্যাচ নেন মুমিনুল। দিনের বাকি সময় পার করে দেন টেম্বা বাভুমা ৫৩ ও ভেরেইনা ২৭ রানে অপাজিত থেকে। বাভুমা ক্যারিয়ারে ১৮তম ফিফটি তুলে নেন ১০৪ বলে। এ দিন বাংলাদেশ ২টি রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ২৩৩/৪, ওভার ৭৬.৫ (এলগার ৬৭, টেম্বা বাভুমা ৫৩*, সারেল এরউই ৪১, ভেরেইনা ২৭*, রিকেলটন ২১, পিটারসন ১৯, তাসকিন ১৮-৩-৫৮-০, এবাদত ১৭-৬-৫৮-১, খালেদ আহমেদ ১২.৫-০-৪৯-১, মিরাজ ২৬-৪-৫৭-১, মুমিনুল ৩-০-৮-০)।
এমপি/এসএন