১৪ ডিসেম্বর শুরু এশিয়ান হকি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি
একটা সময় বিশ্ব হকিতে একচেটিয়া দাপট ছিল এশিয়ার। হোক অলিম্পিক কিংবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। এশিয়াই ছিল সেরা। এই রাজত্ব গড়ে উঠেছিল ভারত ও পাকিস্তানের হাত ধরে। সময়ের পরিক্রমায় সেই রাজত্ব এখন আর নেই। দুই দলই শক্তি হারিয়ে রাজত্ব হারিয়েছে। শিরোপা এখন দূর আকাশের চাঁদ। কিছুদিন আগেই টোকিওতে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে পাকিস্তান খেলার সুযোগই পায়নি। তবে ভারত সেই সুযোগ পেয়েছিল। জিতেছিল ব্রোঞ্জ। এখন ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে কোরিয়া অনেক শক্তিশালী। মালয়েশিয়াও উঠে আসছে। জনপ্রিয়তাও অনেক হ্রাস পেয়েছে। এশিয়ার হকি চলে এখন ঢিলে তালে। এবার বাংলাদেশে শুরু হতে যাচ্ছে এশিয়ান হকি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আসর।
পাঁচ দলের অংশগ্রহণে এবারের আসরের পর্দা উঠবে ১৪ ডিসেম্বর। ভারত, পাকিস্তান, জাপান, কোরিয়ার সাথে খেলবে বাংলাদেশও। বিদেশি সব দলই চলে এসেছে।
যদিও এই আসর হওয়ার কথা ছিল ছয় দলের। কিন্তু শেষ মুহুর্তে দলের দুজন খেলোয়াড়ের করোনা পজেটিভ হওয়াতে মালয়েশিয়া নাম প্রত্যাহার করে নেয়। এর ফলে দলের সংখ্যা নেমে আসে পাঁচে। মালয়েশিয়া না আসাতে এখন সূচিতেও পরিবর্তন আসছে। কারণ সূচি আগেই চূড়ান্ত ছিল।
উদ্বোধনী দিনেই দ্বিতীয় খেলায় তাদের (মালয়েশিয়া) বিপক্ষে মাঠে নামার কথা ছিল লাল-সবুজের বাংলাদেশের। এখন সূচিতে আনতে হচ্ছে পরিবর্তন। প্রথম দিন আর বাংলাদেশের মাঠে নামা হচ্ছে না। পর দিন তারা মাঠে নামবে। প্রতিপক্ষ ভারত। বাংলাদেশের পরের তিনটি ম্যাচ খেলবে ১৭ ডিসেম্বর কোরিয়ার বিপক্ষে, ১৮ ডিসেম্বর জাপানের বিপক্ষে ও ১৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিপক্ষে।
বাংলাদেশের খেলা একদিন পিছিয়ে গেলেও আসর শুরু হবে ১৪ ডিসেম্বরই। ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার ম্যাচ দিয়ে। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের খেলা অনুষ্ঠিত হবে ১৭ ডিসেম্বর। এর আগে ঢাকায় হকির বড় আসর বসেছিল ২০১৭ সালে এশিয়া কাপ।
মালয়েশিয়া না আসার বিষয়টি গতকাল শনিবার জানতে পেরেছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। দুই খেলোয়াড়ের কোভিড পজেটিভ হওয়াতে পুরো দলকেই বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে চলে যেতে হয়েছে। এজন্য এবারের আসরে অংশ নিতে মালয়েশিয়ার হকি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দেশটির সরকারের কাছে কোয়ারেন্টিনের সময় কমিয়ে দেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু সম্মতি পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ। তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়া জাতীয় হকি দলের একজন খেলোয়াড়ের করোনা পজিটিভ এসেছে। ওদের ওখানকার নিয়ম হলো একজনের পজিটিভ হলে গোটা দলকেই কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এই নিয়মের কারণে মালয়েশিয়া হকি দল এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে নাম প্রত্যাহার করেছে।’
এদিকে এবারের আসরে স্বাগতিকদের (বাংলাদেশ) অংশগ্রহণ শুধুই অভিজ্ঞতা অর্জন। তাদের হারানোর কিছু নেই। আজ মাওলানা ভাসানি জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে দলপতি আশরাফুল ইসলাম রানা বলেন, ‘স্বল্প সময়ের মধ্যে আমাদের দলটা প্রস্তুত করেছেন কোচ। এ প্রতিযোগিতায় আমাদের হারানোর কিছু নাই। আমরা কিন্তু অনেক কিছু অর্জন করতে পারি। প্রতিপক্ষ দলগুলো র্যাংকিয়ে আমাদের চেয়ে ভালো। আমি যদি বলি শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে আমরা জিতব বা ড্র করব তা বাস্তবসম্মত হবে না। আমরা ম্যাচগুলোতে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাই। নিজেদের সেরাটা দিতে চাই। এটাই প্রতিযোগিতায় আমাদের লক্ষ্য।’
উল্লেখ্য, করোনার পর বাংলাদেশ দলের এটিই হবে প্রথম আসর। করোনার কারণে ১৪ মাস খেলাই ছিল না। খেলা বলতে ঘরোয়া প্রিমিয়ার বিভাগ হকি লিগ। এই আসর শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ দলকে তালিম দিচ্ছেন ভারতীয় কোচ গোপীনাথ কৃষ্ণমূতি। এই আসরকে সামনে রেখে মাত্র ১০ দিন সময় পেয়েছেন তিনি।
কোচ গোপীনাথ কৃষ্ণমূতি বলেন, ‘দল নিয়ে আমি মাত্র ১০ দিন কাজ করেছি। ১৪ মাস দল আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা খেলেনি। এখানে যে দলগুলো এসেছে তারা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। তাই আমাদের কাজটা বেশ কঠিন। একটা বিষয়ে নিশ্চয়তা দিতে পারি, আমাদের দল ও খেলোয়াড়রা ম্যাচগুলোতে নিজেদের সেরাটা দিবে। এ প্রতিযোগিতায় আমাদের সামনে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ আছে। আমি দলে কিছু নবীন খেলোয়াড় রেখেছি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্যই তাদের দলে রাখা। কারণ আগামী বছর বেশ কিছু প্রতিযোগিতা রয়েছে। সে আসরগুলোর জন্য নতুনরা এখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে। আশা করছি, এ প্রতিযোগিতা দিয়ে নতুনরা বিশ্বমানের প্রতিযোগিতার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সুযোগ পাবে।’
আজ পাকিস্তানের সঙ্গে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। হেরেছে ১-৩ গোলে।
এমপি/এসআইএইচ/