খেলতে নেমেই বাজিমাত ফাহিমার
আটচল্লিশ ঘন্টার ব্যবধানে বাংলাদেশের মেয়েরা দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলার পর বাংলাদেশ পেয়েছেন ৬ দিনের বিরতি। প্রথম দুই ম্যাচে হারলেও সেখানে ছিল ইতিবাচক অনেক কিছু।
ছয়দিনের বিরতিতে বাংলাদেশ দুই ম্যাচের ভুল-ত্রুটিগুলো ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ পায়। আবারপ প্রতিপক্ষ পাকিস্তান হওয়াতে তাদের নিয়েও গোম ওয়াক করার পর্যাপ্ত সময়ও পেয়েছিল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ মাঝের এই ৬ দিনকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান ‘বধ’ করে। ১২ বারের মোকাবিলাতে দুই দলেরই জয় সমান ৬টি করে।
বাংলাদেশের এই পরিকল্পনার একটি অংশ ছিল সেরা একাদশে লেগ স্পিনার ফাহিমা খাতুনকে খেলানো। তাকে খেলাতে গিয়ে বাদ দেওযা হয় পেসার লতা মন্ডলকে। এই ফাহিমাই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়া দলকে ফিরিয়ে এনে ঐতিহাসিক জয় এনে দেন। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকটে ২৩৪ রান করেও বাংলাদেশ লড়াইই করতে পারছিল না। পাকিস্তানের দুই ওপেনার নাহিদা খান ও সিদরা আমিন মিলে বাংলাদেশের বোলারদের আক্রমণকে ভোঁতা করে দলকে বড় জয়ের পথেই নিয়ে যান।
নাহিদা আউট হলেও অধিনায়ক বিসমা মারুফ এসেও সিদরা আমিনের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলের বড় জয়কে তরাণ্বিত করে দেন। এক প্রান্তে উইকেট পড়লেও আরেক প্রান্তে সিদরা আমিন ক্রিজে থাকায় পাকিস্তানের জয় নিয়ে কোন সংশয়ই ছিল না। কিন্তু সেখানেই ঘটে দূঘর্টনা। আর এর নেপথ্যে ছিলেন ফাহিমা খাতুন। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ১৬ রান দিয়ে উইকেট শূন্য থাকার পর দ্বিতীয় স্পেলে এসে করে বাজিমাত।
দ্বিতীয় স্পেলের দ্বিতীয় ওভারে তুলে নেন ১ উেইকটে। আউট করেন ওমাইমা সোহেলকে ১০ রানে। পরের ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে আউট করেন আলিয়া রিয়াজ ও ফাতিমা সানাকে। এই ওভারেরই শেষ বলে সিদরা নাওয়াজ রান আউট হন। এই চার উইকেটের সঙ্গে পাকিস্তান আরো এক উইকেট হারিয়েছিল। আর এতেই পাকিস্তান হারায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ। যেখানে পরে আর তারা নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। এমন জয়ে ভুমিকা রাখতে পেরে ফাহিমা বিশ্বকাপে প্রখম ম্যাচ খেলতে নেমেই হয়ে যান ম্যাচ সেরা।
প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে ফাহিমা জানান পাকিস্তানে হওয়াতে আমাদের মাঝে জয়ের একটা বাড়তি তাড়া ছিল। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সঙ্গে সবসময় আমাদের সবার জেতার জন্য একটা ক্ষুধা থাকে। আমরা চেষ্টা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আগে আমরা বলতাম যে, বোলাররাই সব সময় আমাদের ম্যাচ জেতায়, ব্যাটসম্যানরা সেভাবে অবদান রাখতে পারে না। কিন্তু এবার বিশ্বকাপ ব্যতিক্রম। এবার ব্যাটসমানরাই অবদান রাখছেন, বোলাররা সাপোর্ট দিচ্ছে অনেক বেশি।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় সব সময় দলের সবাইকে উজ্জীবিত করে। এই জয় আমাদের উজ্জীবিত করবে আগামীতে।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে আজকের ম্যাচ নিয়ে তিনি বলেন, ‘গত দুই ম্যাচে আমরা অনেক ভালো খেলেছি। পাকিস্তানের বিপক্ষে আমাদের লক্ষ্য ছিল, সেই খেলাটা খেলা। স্বাভাবিক খেলা। আমাদের যে পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিল তা কাজে লাগানোর। আমরা তা করতে পেরেছি।’
প্রথম স্পেলে ফাহিমা কোনো উইকটে পাননি। দ্বিতীয় স্পেলে আবার যখন বোলিং করতে আসনে, পাকিস্তান তখন নিশ্চিত জয়ের পথে। সেখান থেকে তিনি ম্যাচ বের করে আনেন। কী ছিল তার পরিকল্পনা।
তিনি বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা ছিল ঠিক জায়গায় বল ফেলব। শুধু ডট বল নেব। উইকেট আসবে। রানের চাপ থাকলে ওরাই আমাদের উইকেট দিবে। তখন ওদের ওভারপ্রতি ৬ বা ৭ রান করে দরকার ছিল । কয়েকটি বলে বৈচিত্র্য আনার ডাউন দা লেগে চলে গিয়েছিলাম। পরে তা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এ ছাড়া বিশ্বাস ছিল আমার বলটা ওভার হিট করতে পারবে না। সে জন্য ব্লকহোল করার চেষ্টা করেছি, যাতে তুলে মারতে না পারে।’
এমপি/এমএমএ/