ফিরতি পথেই আক্রান্ত হন দুই নারী ক্রিকেটার!
ছবি : সংগৃহীত
আগেই ধারণা করা হয়েছিল জিম্বাবুয়ে ফেরত বাংলাদেশের দুই নারী ক্রিকেটারের অমিক্রন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সেই ধারণাই সত্য হয়েছে।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক নিজে এই কথা জানান সাংবাদিকদের। দুই ক্রিকেটার আক্রান্ত হলেও তারা শঙ্কামুক্ত। কোনো উপসর্গ নেই। হোটেল সোনারগাঁওয়ে আইসোলেশনে আছেন তারা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাশাপাশি বিসিবিও দুই ক্রিকেটারের বিষয়টি দেখা-শুনা করছে।
এদিকে, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন জিম্বাবুয়ে থেকে আসা দলটির সবার অমিক্রন না হওয়াটা ছিল অনেক বড় সুখবর। করোনার নতুন ধারা অমিক্রন দক্ষিণ আফ্রিকাতে প্রথম ধরা পড়ে ২৬ নভেম্বর। যখন ধরা পড়ে সে সময় জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বাছাইপর্ব। পাকিস্তানকে হারিয়ে দারুণ সূচনা করেছিল বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের দুটিতে জয় নিয়ে ছিল চুড়ান্ত পর্বে যাওয়ার লড়াইয়ে। কিন্তু স্বাগতিক জিম্বাবুযের বিপক্ষে খেলার আগেই আইসিসি মাঝপথে আসর বন্ধে করে দিতে বাধ্য হয়েছিল অমিক্রনের ভয়াবহতার কারণে।
র্যাঙ্কিয়ে পাঁচে থাকার সুবাদে বাংলাদেশ দল প্রথমবারের মতো মূল আসরে খেলার জায়গা করে নেয়। এটি ছিল অনেক আনন্দদায়ক। কিন্তু আসর বন্ধ হয়ে গেলেও বাংলদেশের মেয়েরা সঙ্গে সঙ্গেই দেশে ফিরে আসতে পারেননি। অমিক্রনের কারণে অনেক দেশ ফ্লাইট বাতিল করে দিয়েছিল। যে কারণে বাংলাদেশের মেয়েদের অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। দীর্ঘ যাত্রা শেষে তারা দেশে ফিরেন নামিবিয়া-থাইল্যান্ড হয়ে। নামিবিয়া থেকে ওমান আসার পর সেখান থেকে ১ জানুয়ারি মেয়েরা ফেরেন বাংলাদেশ বিমানে। অথচ গিয়েছিলেন এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে দুবাই হয়ে জিম্বাবুয়ে।দেশে ফিরে আসার পথেই দুই ক্রিকেটার অমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে অনেকেই মনে করছেন। কারণ, আসর চলাকালীন গোটা দলই ছিল বায়োবাবলে। বায়োবাবলে থাকা অবস্থায় তাদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কারণ, এ সময় বাইরের লোকদের সঙ্গে তাদের সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকেন। শুধু যারা বায়োবাবেলে থাকেন তাদের সঙ্গেই যোগাযোগ হয়। এ তালিকায় প্রতিপক্ষের ক্রিকেটার থেকে শুরু করে আম্পায়ার, গ্রাউন্ডসম্যান টিভি ধারাভাষ্যকার, এমনকি যে হোটেল থাকেন, সেই হোটেলের নির্দিষ্ট সংখ্যক স্টাফরা পর্যন্ত থাকেন বায়োবাবলে। কিন্তু দল দেশে ফিরে আসার সময় আর বায়োবাবল ছিল না। জিম্বাবুয়ে-নামিবিয়া এয়ারপোর্টে ক্রিকেটাররা ছিলেন আর ১০ জন যাত্রীর মতোই। দুইটি বিমানবন্দরে যাওয়ার পর বিমানে উঠা পর্যন্ত তাদের অনেকেরই সঙ্গে মিশতে হয়েছে। আর এ সময়ই দুই ক্রিকেটার অমিক্রনে আক্রান্ত হতে পারেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক কর্মকর্তা।
এ রকম অবস্থায় গোটা দলই আক্রান্ত হতে পারত। কিন্তু না হওয়া অনেক বড় সুখবর বলে জানান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি। অমিক্রনের সংবাদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রকাশ করার পর বিসিবিতে নাজমুল হাসান পাপন সাংবাদিকদের বলেন, 'যেহেতু ওরা ওখান থেকে এসেছে। অমিক্রন হওয়ার সম্ভবনাই বেশি। আমি অবাক হইনি। যদি হয়ে থাকে, আমি জানি না। বেস্ট পার্টটা হচ্ছে, পুরো টিম একসঙ্গে ছিল। অন্য সবাই নেগেটিভ আছে এবং যাদের হয়েছে তাদের কোনো উপসর্গ নেই। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। জ্বর, গায়ে ব্যথা কিছুই নেই। ওরা বুঝতেই পারেনি যে ওদের কোভিড হয়েছে। আমি বলবো, এটা একটা বিরাট সুখবর।'
দেশে ফিরে আসার পর ক্রিকেটাররা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে চলে যান। এর মাঝে তাদের ১, ৩ ও ৫ ডিসেম্বর তিন-দফা নমুনা পরীক্ষা করা হয়। প্রথম দুই দফায় সবার নেগেটিভ আসে। তৃতীয় দফায় এই দুই জনের আসে পজেটিভ। এই দুই জনের পজেটিভ না আসলে সবাই কোয়ারেন্টিন শেষে নিজ নিজ বাড়ি ফিরে যেতেন। এ জন্য পরের দিন ৬ ডিসেম্বর বিসিবি সভাপতি হোটেল সোনারগাঁওয়ে গিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে। কিন্তু দুই ক্রিকেটারের পজেটিভ সংবাদ আসায় তিনি ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা না করেই ফিরে আসেন। পরে গোাট দলকে আবার কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। দুই ক্রিকেটারকে রাখা হয় আলাদা করে।
বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘আইসোলেশন শতভাগ মানা হচ্ছে। এটা কোভিড হলেও যা, না হলেও তা। আমাদের যে নিয়ম সেটা তো মানতে হবে। প্রথম থেকেই ওরা যেহেতু আইসোলেটেড ছিল, একটা ডেডিকেটেড ফ্লোরে,সে জন্য অন্য কেউ সংক্রমিত হয়নি। ওরা কিন্তু এককক্ষ থেকে আরেক কক্ষে যেতে পারে না। যা প্রটোকল দেওয়া আছে সেটাই ফলো করে।'
এমপিি/এমএমএ/