বসুন্ধরার মালিককে নিজ হাতে কেক খাইয়ে তোপের মুখে শফিক রেহমান
বসুন্ধরার মালিককে কেক খাইয়ে তোপের মুখে শফিক রেহমান। ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক ‘কালের কণ্ঠে’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গ্রুপটির চেয়ারম্যান আকবর সোবহানকে নিজ হাতে তুলে কেক খাইয়ে দেন দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান। এমন এতটি ছবি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
তার এই অবাক কাণ্ড নিয়ে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছেন তার দীর্ঘদিনের ভক্ত-শুভাকাঙ্খীরাও।
এসময় বিগত সরকারের নেপথ্য কারিগর বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের ভূয়সি প্রশংসা করতেও দেখা যায় লাল গোলাপ খ্যাত এই প্রবীণ সাংবাদিককে। আকবর সোহানকে অমায়িক ও অসাধারণ মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতি বিপ্লবের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ৯০ ঊর্ধ্ব শফিক রেহমানের এমন অধঃপতনে বিস্মিত নেটিজেনরা বলছেন, ‘মুরুব্বী মুরুব্বী কামডা করল কি?’ প্রথম দেখায় তার এমন কাণ্ড সত্য বলে বিশ্বাসই করতে পারেননি অনেকে।
সমালোচনা করে নেটিজেনরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ছাত্র-জনতার গণহত্যায় যেসব ফ্যাসিস্ট সাংবাদিক ভূমিকা রেখেছে দুঃখজনকভাবে শফিক রেহমান তাদেরকে সাথে নিয়ে চলছেন। হাসিনার দোসর বসুন্ধরা গ্রুপের মালিককে নিজ হাতে শুধু কেক খাইয়ে দেন নাই তিনি তার ভূয়সি প্রশংসাও করেছেন। তার এমন আচরণ শহীদ ছাত্র-জনতার আত্মার সাথে চরম বেইমানি।
সাংবাদিক নাজমুস সাকিব এই ঘটনায় ‘ভূমিদস্যু বসুন্ধরার শাহ আলমের কাছে নিজেকে বিক্রি করলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান!’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।
প্রতিবেদনে তিনি বলেন, কৈশোরে বিটিভিতে জনপ্রিয় আট শো অনুষ্ঠান ‘লাল গোলাপ’ শুরু হওয়া মাত্র আমরা টিভি স্ক্রিনের সামনে সকল কাজ ফেলে ছুটে যেতাম। আমার মত একজন তরুণ সাংবাদিক বা অনলাইন অ্যাক্টিভেস্ট এর কাছে ৯১ বছর বয়সী শফিক রেহমান একজন জীবন্ত কিংবদন্তি এবং অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। এ কারণেই বছরখানেক আগে আমি যখন লন্ডন সফর করেছিলাম আমি বহু কষ্টে তার ঠিকানা জোগাড় করে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তার সাথে ফ্যাসিস্ট হাসিনার স্বৈরশাসনের নানা দিক এবং যে প্রক্রিয়াতে তার যায়যায়দিন পত্রিকাটি ভূমিদস্যু বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় দখল করা হয়েছিল এসব বিষয়ে বেশ খোলামেলা আলোচনা হয়েছিল। তার কাছ থেকেই জানতে পেরেছিলাম যায়যায়দিন কিভাবে হাতছাড়া হয়েছিল এবং কুখ্যাত ভূমিদস্য গ্রুপ বসুন্ধরা সেক্ষেত্রে কি ধরনের ন্যাক্কারজনক ভূমিকা রেখেছিল।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট এর পটপরিবর্তনের পর তিনি যায়যায়দিন ফেরত পাবেন, নতুন ভাবে এর যাত্রা শুরু করবেন এটাই হল বাস্তবতা। কিন্তু আমরা কল্পনাও করিনি কুখ্যাত ভূমিদস্য এবং পতিত স্বৈরাচার হাসিনার অন্যতম দোসর ভূমিদস্য আহমদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলমের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে যায়যায়দিনের এই নবযাত্রা করবেন। পত্রিকাটির এই নতুন যাত্রায় তার সাথে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে আছেন তিনি মহা বাটপার শামসুল আলম লিটন। আমরা জানতে পেরেছি এই শামসুল আলম লিটনই ভূমিদস্য আহমদ আকবর সোবহান ওরফে শাহ আলমের সাথে শফিক রেহমানের লিয়াজু করে দিয়েছেন। তবে আমি এটাকে ব্যক্তিগতভাবে একমাত্র কারণ বলে মনে করি না। কারণ তিনি তো কোন অবুঝ শিশু নয়। আপনি জানেন যে, শাহ আলম হাসিনার অন্যতম দোসর। সে হাসিনাকে আজীবন ক্ষমতায় রাখতে চেয়েছিল এবং প্রকাশ্যে সে বলেছিল, মৃত্যুর আগেও শেখ হাসিনার সাথে আছে এবং মৃত্যুর পরেও হাসিনার সাথেই থাকতে চাই।
সমালোচনা করে নাজমুস সাকিব আরো বলেন, আজ নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে শফিক রেহমানের মতো একজন মানুষ নিজেকে নর্দমার কিটে পরিণত করলেন। তিনি আজ বসুন্ধরার মালিকানাধীন কালের কন্ঠের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে গিয়ে নিজ হাতে এই ভূমিদস্যু শাহ আলমের মুখে কেক তুলে খাইয়ে দিয়েছেন। তিনি এই অনুষ্ঠানে যেভাবে শাহ আলমের প্রশংসা করেছেন সেটা শুনে আমি আমার নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারিনি। সাংবাদিকতা জগতের আইডল এই শফিক রেহমানের অধঃপতনে আমরা বিস্মিত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ-উর রহমান সমালোচনা করে বলেছেন, ‘টাকাটাই শেষ কথা বাকি সব বাতুলতা’। টাকা কথা রাখে, সারা পৃথিবীতেই টাকা কথা রাখে। কিন্তু আমাদের সমাজে একটু বেশি রাখে। পৃথিবীতে সবকিছুই টাকা চাইলে কিনতে পারে না। সারা পৃথিবীতে বাস্তবে সে অবস্থা বিরাজ করে। কিন্তু বাংলাদেশে শফিক রেহমান ৯০ বছর বয়সে বিক্রি হয়ে যান।বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কাজ করে গেছেন সেই শফিক রেহমান কালের কণ্ঠে গেলেন এবং ভুইসী প্রশংসা করলেন।
আলোচিত প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের কড়া সমালোচনা করে ফেসবুক আইডিতে দেখেছেন, নিজ ইনসটিংক্টের প্রতি আমার সব সময়ই আস্থা ছিলো, থাকবে। সে কারণে, পরিচিত অনেকেরই শফিক রেহমানের প্রতি ব্যাপক সম্মান থাকলেও আমি কখনোই এই লোককে সিরিয়াসলি রিগার্ড করিনি। প্রতি সন্ধ্যায় গলা দিয়ে বাধ্যতামূলক এক-দুই গ্লাস লাল পানি পড়লেই যিনি খিস্তি আওড়ান, এমন লোককে বিশেষ কিছু ভাবা, অন্তত আমার পক্ষে সম্ভব ছিলোনা, হবেও না।