থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
শায়খ আহমাদুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত
ইংরেজি নতুন বর্ষকে বরণ করার লক্ষ্যে প্রতিবছরই বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালন করা হয় থার্টি ফার্স্ট নাইট। এ রাতকে ঘিরে পশ্চিমাদের আয়োজনের কোনো শেষ নেই। পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জমকালো উৎসব পালনের মাধ্যমে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা নাগাদ উৎযাপিত হয় এই রাতটি।
থার্টি ফাস্ট নাইট নিয়ে বাংলাদেশি ইসলামি ব্যক্তিত্ব, আলোচক ও সামাজিক সক্রিয় কর্মী শায়খ আহমাদুল্লাহ যুবক ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তার ব্যক্তিগত ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে শায়খ আহমাদুল্লাহ লিখেছেন, থার্টি ফার্স্ট নাইট এখন এক আতঙ্কের নাম হয়ে গেছে নগরবাসীর জীবনে। যে আগুন এক মুহূর্তে ছাই করে দিতে পারে আমাদের সম্পদ, জীবন এবং সাজানো সংসার; সেই আগুন হয়ে উঠেছে আমাদের বর্ষবরণের প্রধান উপকরণ। একটা প্রজন্ম কতটা উন্মাদ, অবিবেচক, উচ্ছৃঙ্খল হলে আগুন আর পটকা নিয়ে উৎসব করতে পারে!
গত দুই বছরে থার্টি ফার্স্ট নাইটের উন্মত্ততা যেন লাগামছাড়া হয়ে গেছে। উল্লাসকারীদের পটকার আওয়াজে একটি নিষ্পাপ শিশুর জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার ঘটনা এখনো আমাদের হৃদয় রক্তাক্ত করে। সর্বস্ব দিয়ে গড়ে তোলা সেই দরিদ্র নারী উদ্যোক্তা, ফানুসের আগুনে যার প্লাস্টিক কারখানা সম্পূর্ণ ভস্ম হয়ে গিয়েছিল, তার কথা ভেবে এখনো আমরা বিষণ্ন হই।
একটু ভাবুন, নিহত ওই শিশুটি যদি আপনার সন্তান হতো! নিংস্ব ওই নারীটি যদি হতো আপনার বোন! বিগত দিনের এইসব ভয়াবহ দুর্ঘটনাগুলোর কথা চিন্তা করে হলেও আমাদের ‘আগুন নিয়ে খেলা’ বন্ধ করা উচিত। যে শহরে জালের মতো ছড়িয়ে আছে বৈদ্যুতিক তার, সেই শহরের যুবকেরা যখন ফানুসের নামে টাকা পোড়ায়, তাদের বুক কি একটুও কেঁপে ওঠে না দুর্ঘটনার শঙ্কায়!
আমরা জীববৈচিত্র্যের কথা বলি। প্রকৃতির শোভা বর্ধনে পাখিদের অবদানের কথা বলি৷ অথচ উৎসবের নামে অযৌক্তিক এই উন্মাদনার কারণে যে আমাদের পরিবেশ ও প্রাণীবৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে, তার বেলায় আমরা কেন চুপ! নতুন বছরের আগমন যদি আনন্দের কারণ হয়, তবে পুরনো বছরের বিদায় বেদনার কারণ হওয়া উচিত। নববর্ষে যারা আনন্দ উদযাপন করে, হারিয়ে ফেলা বছরটির জন্য তারা কি কখনো বেদনা অনুভব করে?
মানুষকে আল্লাহ বিবেক দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। বিবেকসম্পন্ন মানুষের পাশবিক উন্মাদনায় পাখিরা যদি আতঙ্কে ডানা ঝাপটায়, রাস্তার কুকুর যদি দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করে ভয়ে, গরিবের মাথাগোঁজার আশ্রয় যদি ছাই হয় ফানুসের আগুনে, পটকার বিকট শব্দ যদি খালি করে মায়ের কোল, তবে মানুষ তোমার শ্রেষ্ঠত্ব রইল কোথায়!