পূজায় ছুটি চাওয়ায় চাকরি হারালেন শ্যামা!
পূজা উপলক্ষে ছুটি চেয়ে চাকরি হারিয়েছেন শ্যামা সাহা সেন নামে এক নারী। শুধু তাই নয়, কর্তৃপক্ষ তাকে উপহাস করে বলেছে, আপনারা সংখ্যালঘু। সরকার যেহেতু আমাদের ছুটি দেয় না, আমরা কীভাবে ছুটি দেব। তারা ধর্ম নিয়েও উপহাস করেছে।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এমন অভিযোগ করেন শ্যামা সাহা।
শ্যামার অভিযোগ, বুস্ট এডুকেশন সার্ভিসে তিনি বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পূজার জন্য তিনি ৩ দিনের ছুটি চেয়েছিলেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি না দিয়ে টার্মিনেশন লেটার ধরিয়ে দেয়। তিনি ক্ষতিপূরণ চাইলে কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের এখানে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়ম নেই। তাহলে কি 'লেবার ল' যার যার মতো করে? এমন প্রশ্নও তুলেন শ্যামা সাহা।
নিজের স্ট্যাটাসে শ্যামা সাহা লিখেন, ‘একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটানা: পূজা উপলক্ষে আমি যেখানে চাকরি করি ছুটি চেয়ে অ্যাপ্লিকেশন করেছিলাম (বুস্ট এডুকেশন সার্ভিস, এক্স বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার)। আমার অফিস আমাকে জানাল যে তারা ছুটি দিতে পারবে না। পরে আমি এটা নিয়ে যখন কথা বললাম তখন তারা বলে যে আমরা ঈদে অনেক দিন (৪ দিন) ছুটি দেই তাই আর কোনো ছুটি দেই না। আর তাছাড়া আপনারা সংখ্যালঘু, আমাদের তো সরকারই ছুটি দেয় না তাহলে আমরা কেন ছুটি দিব। এসব কথা শোনার পর আমার খুব মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, আমি ওইখান থেকে কিছু না বলে চলে আসি। গত বুধবার তারা আমাকে জিজ্ঞাস করে তাহলে পূজায় কী করছেন? তখন আমি বললাম যে, আপনারা ছুটি না দিলেও আসতে পারব না, কারণ আমার ধর্মীয় বিষয় আছে। আমি উপাস রেখে প্রত্যেকদিন পূজা দেই (কিন্তু আমি ছুটি চেয়েছিলাম ৩ দিনের, অন্যদিন ২ দিন আমি উপাস করেই অফিস করতাম)। এ কথা এইচআর শোনার পর চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আমাকে তারা টার্মিনেশন লেটার দিয়ে দেয়। আমি যখন তাদের বলি কারণ কী? তখন তারা বলে আমি নাকি তাদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছি! আমার ধর্ম পালন করতে চাওয়াটা কি অপরাধ? আর আমার ধর্ম নিয়ে উপহাস করাটা কি তাদের অধিকার আছে? তাছাড়া আমাকে একদিনের নোটিশে বিদায় করে দিয়েছে তার জন্য আমি যখন ক্ষতিপূরণ চাইলাম তখন বলে তাদের নিয়ম নাই, তাহলে 'লেভার ল' কি যে যার ইচ্ছামতো বানাতে পারে? আপনাদের কাছে জানতে চাই এখন আমার কী করা উচিত? তাহলে কি আমাদের ধর্ম পালনের কোনো অধিকার নাই? এটাও কি আমাকে মেনে নিতে হবে? এ বিষয়টা শুধু এখানে নয় স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবখানেই এই বিষয়ে প্রতিবাদ করতে করতে আমি ক্লান্ত।’
তার এই স্ট্যাটাসে বহু মানুষ কমেন্ট করেছেন এবং শেয়ার দিয়েছেন। শরিফুল ইসলাম পলাশ নামে একজন লিখেছেন, ‘আমার ধর্ম পালন করতে চাওয়াটা কি অপরাধ? আর আমার ধর্ম নিয়ে উপহাস করাটা কি তাদের অধিকার আছে?-এ প্রশ্নের উত্তর দেবার সামর্থ্য কারও নেই দিদি। প্রতিবাদ হোক এভাবেই। পাশে আছি আমরা।’
ফাহিম আহমেদ তুষার নামে একজন লিখেন, ‘ধর্মীয় মূল্যবোধকে সম্মান করা সব ধর্মের মানুষের কর্তব্য। আপনি স্থায়ী কর্মী হলে কমপক্ষে দুই মাস আগে নোটিশ অথবা দুই মাসের মূলবেতন প্রদান ছাড়া কর্মী ছাঁটাই করা দণ্ডনীয় অপরাধ।’
কেউ কেউ আইনের আশ্রয় নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন শ্যামা সাহাকে।
এদিকে বুস্ট এডুকেশন সার্ভিসের বক্তব্য জানতে তাদের ফেসবুক পেজে দেওয়া মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করলেও কেউ রিসিভ করেনি।
এনএইচবি/এসজি