সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিক দিপনের বিরুদ্ধে মামলা
সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সংবাদকর্মী দেবব্রত রায় দিপনের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩৮৫ ধারায় সিলেট কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গেল মাসের ১৮ জানুয়ারি সিলেট কোতয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন মেসার্স এইচএম এগ্রোফার্মের আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মিসবাউল ইসলাম। তিনি এয়ারপোর্ট থানাধীন ফরিদাবাদ আ/এ (এইচ এম ভবন) মরহুম নিমার আলীর ছেলে। সিলেট কোতয়ালি থানার মামলা নং ৩১।
এর আগে ১০ জানুয়ারি জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা প্রকাশ ডটকমে 'সিলেটে মোমেন ফাউণ্ডেশনের নামে গ্রাস হচ্ছে টিলাভূমি' শিরোনামে মিসবাউল ইসলাম ও সিলেট জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হেলেন আহমদের বিরুদ্ধে টিলা ভূমি শ্রেণীপরিবর্তণ করণের সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরই জের ধরে সংবাদ প্রকাশের এক সপ্তাহ পর ঢাকা প্রকাশের সিলেটের বিভাগীয় প্রতিনিধি দেবব্রত রায় দিপনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ১১ আগষ্ট সাংবাদিক দেবব্রত রায় দিপন বাংলানিউজ এনওয়াই নামের একটি নিউজ পোর্টালে অ্যাডভোকেট মিসবাউল ইসলামের উপর ধর্ষণ মামলার একটি সংবাদ পরিবেশন করেন। তাছাড়া, স্থানীয় ও জাতীয় একাধিক পত্রিকায়ও সংবাদটি প্রকাশিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে বাদির সাথে বিবাদীর কতোপকতনের এক পর্যায়ে বাদী সংবাদের প্রতিবাদ প্রকাশে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এ সময় বিবাদী এর জন্য নগদ ১০ লাখ টাকা চাঁদা প্রদানের দাবি জানান। টাকা না পেয়ে বিবাদী জিন্দাবাজারে (জল্লার পাড় রোডস্থ) ফরিদ প্লাজায় বাদীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ চাঁদা দিতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এ সময় বাদী চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে বিবাদী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি বাদী মিসবাউল ইসলাম সিলেট জজ কোর্টে পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে ফেরার পথে বিবাদী দিপন তাকে সদলবলে আক্রমনাত্বকভাবে পুনরায় চাঁদা দাবি করেন বলে বাদী মামলার বিবরণীতে উল্লেখ করেন।
তবে ২০২১ সালের চাঁদাবাজির ঘটনার উল্লেখ থাকলেও এ বিষয়ে বাদী ঘটনার দেড় বছর পরও কোনোরকম আইনগত পদক্ষেপ কেন গ্রহণ করেন নি-এ বিষয়টিও নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া ১৬ জানুয়ারি আদালতের সামনে একজন আইনজীবীকে হুমকীসহ চাঁদাপ্রদানের বিষয়টিও জানেন না সিলেট আইনজীবী সমিতি।
এ বিষয়ে কোনো গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশিত হয় নি। ধারণা করা হচ্ছে- ঢাকা প্রকাশে ১০ জানুয়ারি সংবাদ প্রকাশ হলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পোর্টালে একটি প্রতিবাদ প্রেরণ করেন অ্যাডভোকেট মিসবাউল ইসলাম। ১৪ জানুয়ারি প্রতিবেদকের বক্তব্যসহ ফের সংবাদটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদে তথ্যপ্রমাণ থাকায় তিনি আইসিটি মামলা না করে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে একজন সজ্জন সংবাদকর্মীকে হয়রানীর উদ্দেশ্যে এই মামলাটি দায়ের করেন।
এ বিষয়ে সংবাদকর্মী দেবব্রত রায় দিপন জানান, বাংলানিউজ এনওয়াইয়ে সিলেট জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিসেস হেলেন আহমদ ও তাঁর ব্যবসায়িক পার্টনার মিসবাউল ইসলামের নামে তথ্যপ্রমাণ ভিত্তিক একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হলে উল্লেখিত বাদি হুমকীসহ ভয়-ভীতি প্রদান করেন। এরই প্রেক্ষিতে ২০২১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি সিলেট কোতয়ালী থানায় বাদি অ্যাডভোকটে মিসবাউল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি জিডি দাখিল করেন। জিডি নং ১৬২১।
জিডি পরবর্তী অ্যাডভোকেট মিসবাউল ইসলাম বিষয়টি সমাধানের জন্য সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদকে চাপ দিতে থাকেন। মকসুদ আহমদ বিষয়টি সমাধানের জন্য ফরিদ প্লাজায় অবস্থিত বিএসএস কার্যালয়ে ২১ সেপ্টেম্বর বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকের পুরো ঘটনাটি সাংবাদিক দিপন তার মোবাইলে রেকর্ড করেন।
প্রাপ্ত রেকর্ড থেকে জানা গেছে, আইনজীবী মিসবাউল কর্তৃক সাংবাদিক দিপনকে হুমকীর প্রেক্ষিতে জিডি দাখিল করা হয়েছে। তবে পুরো ২০ মিনিট ২৩ সেকেণ্ডের আলাপাচারীতায় মিসবাউল ইসলাম চাঁদাদাবির বিষয়টি উল্লেখ করেন নি। সবশেষে মকসুদ আহমদ দুই জনকে কোলাকুলিসহ এ বিষয়ে সাংবাদিক দিপনকে আর কোনো সংবাদ না প্রকাশের অনুরোধ করেন।
এএজেড