দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
আওয়ামী লীগে প্রার্থীর ছড়াছড়ি, সুবিধাজনক অবস্থায় বিএনপি
হবিগঞ্জে চায়ের কাপে ঝড় উঠতে শুরু করছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। বিএনপি নিবার্চনে অংশ নিবে কি-না, কি হবে নিবার্চনকালীন, নাকি আবারো হরতাল অবরোধে পড়বে দেশ-এসব নিয়ে চলছে চায়ের টেবিলে আলোচনা আর সমালোচনা। এরই মাঝে ৪টি আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। পোস্টার, লিফলেট ছাপানো ছাড়াও অনেকে স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেছেন। কেউ কেউ আবার সুযোগ বুঝে গণসংযোগও চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিটি আসনেই বড় রাজনৈতিক দুটি দলের রয়েছেন একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে রয়েছে প্রার্থীর ছড়াছড়ি। তাদের তুলনায় অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বিএনপি। তবে জোটের গ্যাড়াকলে পড়তে পারেন সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা বিএনপি প্রার্থীরা। এ জেলায় মোট ভোটার ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ৯১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ লক্ষ ৬ হাজার ১৮৭ ও মহিলা ভোটার ৭ লক্ষ ৮১ হাজার ৭২৩ জন।
হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজীর তনয় দেওয়ান মিলাত গাজী। আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তিনি ছাড়াও এই আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন হাফ ডজনের মতো। তারা হচ্ছেন -সাবেক এমপি কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীর কন্যা (হবিগঞ্জ-সিলেট) আসনের সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, বর্তমান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর চৌধুরী। এ ছাড়াও বাহুবল উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা আব্দুল মুকিত চৌধুরীর নাম শুনা যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে বেশীরভাগ সময় আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। আওয়ামী লীগও মনে করে এখানে তাদের রয়েছে বিশাল ভোট ব্যাংক। কারণ এখানে রয়েছে চা বাগানসহ বিপুল সংখ্যক সংখ্যালঘু ভোটার। কিন্তু ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি উপনিবার্চনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরীকে পরাজিত করে আওয়ামী দূর্গে আঘাত আনেন বিএনপি প্রার্থী শেখ সুজাত। যদিও উপ-নিবার্চন নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক তৃণমুল নেতা-কর্মীর দাবি, আওয়ামী লীগ ভুল প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ায় শেখ সুজাত নিবার্চনে জয়ী হতে পেরেছে। আগামী নিবার্চনে বিএনপি শেখ সুজাতকে দিয়েই আবারও আওয়ামী দূর্গে আঘাত আনতে চাইবে।
বিএনপি নিবার্চনে অংশগ্রহণ করলে তার মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত বলে তার সমর্থকরা মনে করলেও জোটের গ্যাড়াকলে পরে অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া হবে জোটের প্রার্থী। জোট না হলে উভয় দলের জন্য ড. রেজা কিবরিয়াই সবচেয়ে ফ্যাক্টর। এ ছাড়াও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মাওলানা আব্দুল্লাহ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল হান্নান নাম শুনা যাচ্ছে।
এ আসনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪ লাখ ৫ হাজার ৫২জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫ হাজার ৮৭১ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৯৯ হাজার ১৮০ জন।
হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ দলীয় অ্যাডভোকেট মো. আব্দুল মজিদ খান। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এ নিয়ে তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ছাড়াও আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হুসেন মাস্টার, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাছুম বিল্লাহ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ. সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ও দেশ টিভির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিকুর রহমান চৌধুরী পরাগ, ইংল্যান্ড প্রবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার এনামুল হক, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল, ঢাকা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মাহফুজা বেগম সাঈদা। আর বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন ও আন্তর্জাতিক সম্পাদক আহমদ আলী মুকিব। এদিকে এই আসনে ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনের মনোয়ন অনেকটাই নিশ্চিত মনে করেন তার অনুসারীরা।
এ ছাড়াও জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন দলটির জেলা সাধারণ সম্পাদক শংকর পাল। আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি বাদে এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের প্রার্থী মৌলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও ডা. মাওলানা বশির আহমদ এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা লুৎফুর রহমান চৌধুরী আজাদ।
তা ছাড়াও একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আফছর আহমেদ রুপক। তিনি দৈনিক আমাদের সময়ের স্বাস্থ্য বিটের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করার সুবাদে চিকিৎসকদের সঙ্গে রয়েছে সুসর্ম্পক। তাদের সঙ্গে সুসর্ম্পক থাকায় এলাকার গরীব ও অসহায় মানুষের কম খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে একটি শক্ত ভিত গড়ে তুলেছেন। এর পাশাপাশি তিনি প্রতিষ্ঠা করছেন রুপক হেল্প ক্লাব। ক্লাবের সদস্যরা বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জের অসহায়দের পাশে দাঁড়াচ্ছে। আগামী নিবার্চনে তিনি বড় দুই দলের জন্যই মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের আসন হিসেবে পরিচিত। এখন পর্যন্ত এই আসনে ১ বার বিএনপি, ২ বার জাতীয় পার্টি এবং বাকি ৮ বারই আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
এদিকে নিবাচনী প্রচারণায় এই আসনে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ৪২ হাজার ৮২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫০৫ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৮ জন।
হবিগঞ্জ-৩ (হবিগঞ্জ সদর-লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে টানা তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাডভোকেট মো. আবু জাহির। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী নিবার্চনেও তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন। দলের প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে তিনি ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী তালিকায় রয়েছেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলার চেয়ারম্যান, চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাট্রিজের প্রেসিডেন্ট মোতাচ্ছিরুল ইসলাম, বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি) আবুল হাশেম মোল্লা মাসুম, ইংল্যান্ড প্রবাসী সুশান্ত দাশ গুপ্ত, লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাহফুজ আহমেদ। আর বিএনপি দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সাবেক মেয়র জি কে গউছ। তিনি ছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এনামুল হক সেলিম। ২০১৪ সালের অসহযোগ আন্দোলনের সময় জেলার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে তিনি সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকায় তৃণমুল নেতা-কর্মীদের মাঝে একটি শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন। এখানে জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা সভাপতি শিল্পপতি মো. আতিকুর রহমান আতিক। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থী দলটির জেলা সভাপতি মহিব উদ্দিন আহমেদ সোহেল। তবে এটিও আওয়ামী লীগের আসন হিসেবেই পরিচিত। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে এই আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া।
এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৯ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ৫৬০ ও ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৩৯৫ জন।
হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বেসামরিক ও বিমান পযর্টন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী। তিনি সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী। সেইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা আসাদ আলীর ছেলে। তিনি ছাড়াও আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হচ্ছেন- ঢাকা মহানগর উত্তরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট শিল্পপতি মতিউল হক মতি, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম, চুনারুঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট এম. আকবর হোসেন জিতু, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী প্রয়াত এনামুল হক মোস্তফা শহীদের ছেলে নিজামুল হক রানা, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আব্দুল হাই’র ছেলে আরিফুল হাই রাজিব, মাধবপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক মেয়র মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ মুসলিম।
এই আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হচ্ছেন-উপজেলা চেয়ারম্যানও বিএনপির সভাপতি শিল্পপতি সৈয়দ মো. শাহজাহান, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী ও সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার।
এ ছাড়াও জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জেলা সভাপতি শিল্পপতি মো. আতিকুর রহমান আতিক। তিনি ছাড়াও মনোনয়ন চাইতে পারেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মাওলানা ফারুক আহমদ নোমানী ও ডা. আহমদ আব্দুল কাদের এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা কামাল উদ্দিন।
এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৩ হাজার ১১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪০ হাজার ২৫১ ও মহিলা ভোটার ২ লাখ ৩২ হাজার ৮২৫ জন।
এসআইএইচ