'চাল নিলে তেল নিতে পারি না, তেল নিলে বাজার'
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা বালু শ্রমিক মোহাম্মদ সাদ্দাজ হোসেন। তিনি আগের দিন রাত ২টায় নৌকা নিয়ে বের হয়ে যান সুরমা নদীতে। গভির রাত থেকে শুরু করে সারাদিন নদীতে বালুর কাজ করে বাড়ি ফিরেন পর দিন সন্ধ্যায়। কিন্তু পারিশ্রমিক পান মাত্র ৪০০টাকা। কিন্তু সুনামগঞ্জের বাজারগুলোতে হু হু করে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে পরেছেন বালু শ্রমিক মোহাম্মদ সাদ্দাজ হোসেন।
বালু শ্রমিক মোহাম্মদ সাদ্দাজ হোসেন ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন, আমরা যা রোজি করি যা ইনকাম করি, এর থাকি বাজার দর বেশি। আমরা সারাদিন কাজ করে পাই ৪০০টাকা, কিন্তু চাউলের কুছি ১৩০টাকা, দুই কুছি চাউল কিনলে লাগে ২৬০টাকা। তাইলে আর থাকে কি? চাল নিলে তেল নিতে পারি না, তেল নিলে বাজার নিতে পারি না। তেলের দর দুইশ টাকা লিটার। চারশ টাকা জুরি করলে আরও দুইশ টাকা ঋন করা লাগে।
সুনামগঞ্জের বাজারগুলোয় দফায় দফায় বেড়ে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও আয় বাড়ছে না সাধারণ মানুষের। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি চাপেমধ্যে পরেছেন নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষরা। অধিক দামে পণ্য কেনার ক্ষমতা সুনামগঞ্জ জেলার বেশির ভাগ মানুষেরই নেই। রোজকার চাহিদা পূরণে গুনতে হচ্ছে পণ্যের অস্বাভাবিক দাম। পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বিপাকে ফেলেছে সুনামগঞ্জের হাওরপারের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে।
সুনামগঞ্জের বাজারগুলোতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে এখন ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে। ব্রয়লার মুরগি কিনে পলিথিনে ভরছেন পৌর শহরের তেঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা অরবিন্দু রায়,তিনি গণমাধ্যেমকর্মী দেখে ছুটে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের কারণে সব কিছুর দাম বাড়িয়েছে। সাধারণ মানুষরা এখন আর মুরগ নেওয়ার মত ক্ষমতা নাই। সারাদিনে ৪শ ৫শ টাকা রোজি করে কিতা খাইবো। বাজারের সব জিনিসের দাম। আমরা সাধারণ মানুষরা কোনো মতে বেচে আছি, আমাদের জানে ধরিলার।
সুনামগঞ্জের বাজার ঘুরে দেখা যায় সপ্তাহের ব্যবধানে ১৫০ টাকা কেজির ব্রয়লার মুরগি এখন ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ৩৪০ টাকা, লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০টাকা, দেশি হাস ৬০০ টাকা থেক ৮০০টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ৪০ টাকা দামের লাল ডিমের হালি কিনতে হয় ৬০-৬৫ টাকায়।
এছাড়া কাঁচাবাজারের দাম বেড়েছে বেশিরভাগ পণ্যের। মাত্র দুইদিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচে বেড়েছে ৪০টাকা। গত দুদিন আগে কাঁচা মরিচের প্রতি কেজি ছিলো ১০০টাকা সেটি আজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে। বেগুন ৩০ থেকে ৪০টাকা, টম্যাটো,৩০টাকা, করল্লা ৫০টাকা, সিম ৩০ থেকে ৪০টাকা, লাল আলু ৪০, গাজর ৫০ টাকা, লেবুর হালি ৮০টাকা।
এদিকে চিনির দাম বেড়েছে আরও কয়েকদিন আগে, খুচরা বাজারে চিনি ১১০টাকা, চায়না রসুনের দাম বেড়ে ১৭৫টাকা, ধনিয়া ১৩০, চিড়া ৫৫, সাবু ১৩০, জিরা ৬০০, আদা ৯০ থেকে ১০০টাকা, এলাচি ১৭০০,দেশি পিয়াজ ৪০ টাকা। বেশন ৯৫টাকা।মুগডাল ১৩০টাকা, চানা ৮৫ থেকে ৯০টাকা বিক্রি হচ্ছে।
সুনামগঞ্জের জেল রোড এলাকার মুরগি ব্যবসায়ী লুৎফুর রহমান ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন, মুরুগের খাদ্যের দাম বেড়েছে, বাচ্চার দাম বেড়েছে, এছাড়া সুনামগঞ্জের যে লোকাল মুরগি ছিলো তাও মারা গেছে। আমরা বাহির থেকে দামে কিনে আনে দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতি কেজিতে আমাদের ১০টা ফায়দা হয়।
মুরগির দাম বাড়ার কারণ জানালেন ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক। তিনি ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন, মুরগির খাবারের দাম বাড়তি, বাচ্চার দাম বাড়তিতে। গত ১ বছর আগে মুরগির বাচ্চার দাম ছিলো ১৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। বর্তমানে দাম বেড়ে ৩৪০০ থেকে ৩৫০০ টাকা করছে। এছাড়া মুরুগের অন্যান মেডিসিনের দামও বাড়তি তাই দাম বাড়ছে। খাদ্যের দাম যদি দুই হাজার টাকার মধ্যে থাকে, বাচ্চার দাম যদি ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে থাকে তাহলে আমরা দোকানিরা দেশবাসীকে ১০০ টাকা কেজি দরে মুরগি খাবাতে পারবো। কিন্তু বর্তমান সরকারের এদিকে কোনো নজর নেই, বাজারের কাম কমাতে হলে সরকার একমাত্র হ্যাসারিতে গিয়ে তদারকি করতে হবে। তবে দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ব্যাপারে সুনামগঞ্জের নতুন বাজার এলাকার মেসার্স অনিল ষ্টোরের মালিক নিকসন রায় ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন তিনি, দাম বস্তায় ৩০০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহের চিনির বস্তা বিক্রি করেছি ৫ হাজার টাকা সেই চিনি এখন ৫ হাজার ৩০০ টাকা। এছাড়া তেলের দাম বেড়ছে। চায়না রসুনের দাম বাড়তি। এসময় তিনি বলেন ডলার সংকটের কারণের মূলত সব কিছুর দাম বাড়ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। যেসব অসাধুব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
এএজেড