রক্ত রাঙ্গা শিমুলের রাজত্ব, এ যেন এক স্বপ্নপুরী স্বর্গরাজ্য
এ ফাগুনের দুপুরে সবুজের ডালে ডালে রক্ত লাল শত কোটি শিমুলের রাজত্ব, এ যেন এক স্বপ্নপুরী স্বর্গরাজ্য। পাপড়ি মেলে থাকা শিমুলের রক্তিম আভা যেমন মন রাঙায় তেমনই ঘুম ভাঙায় সৌখিন হৃদয়ের। ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝখানে রূপের নদী যাদুকাটার তীর জুড়ে এখন এমনই রাসি রাসি মুগ্ধতা, রক্ত রাঙ্গা শিমুলের বাসন্তি অভিবাদন।
হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুরের শিমুল বাগানের রূপের আগুন যেন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। পুড়িয়েছে লাখো প্রকৃতিপ্রেমির মন। বাগানের গাছভর্তি ফুলের সৌরভে নেই কোনো কমতি, তাই তো দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষগুলো যেন এক মায়ার জালেই বন্দি।
সুনামগঞ্জের শিমুল বাগানের রূপের টানে বাগান ঘুরতে এসে মুগ্ধ হলেন অভিনেত্রী মুনিরা ইউসুফ মেমী। তিনি ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন, বাগান টা আসলে অসাধারণ, সারা বাংলাদেশ থেকে বিদেশ থেকেও অনেকে দেখতে আসেন। চিন্তার বাহিরে এতো বড় জায়গা নিয়ে এতো বড় একটা উদ্যোগ। কিন্তু আমাদের যেটা হয় নাগরিক সুবিধা গুলো কম থাকে, এটা আরও পরিচর্যা দরকার। তিনি আরও বলেন আমাদের দেশে বিষশকরে সিলেট- সুনামগঞ্জে অনেক পর্যটন এড়িয়া আছে, এতো সুন্দর সুন্দর শুধু যাতায়ত- নাগরিক ব্যবস্থা হলে আরও ভালো হয়। এছাড়া কোভিডের কারণে মানুষ বিদেশ ঘুরা বন্ধ করে দেশকে চিনেছেন।
মাথার উপরে গাছে ফুটে থাকা ফুল ঝরে পড়ে লালগালিচা হয়ে অতিথিদের স্বাগত জানায় এই সৌন্দর্যের সম্রাজ্যের। চারপাশে ঝরা পড়া ফুলের ওপর হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে স্বর্গীয় লালগালিচায় বুঝি হেঁটছেন আপনিও। একসঙ্গে তিন হাজার গাছ পাপরি মেলে অপেক্ষা করছে পর্যটকদের। সিলেট এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি থেকে ফ্রেন্ডের সাথে আসা পর্যটক শেখ তামান্না ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন, এত সুন্দর একটা জায়গা, এই শিমুল বাগানে আমি প্রথমবার এসেছি,আমি বাগানে এসে দিনটা খুবই উপভোগ করছি।
একদিকে বাগানের ফুল ফোটে এখন পরিপূর্ণ যৌবনে টগবগ করছে,অন্যদিকে পাখির কলকাকলী ও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে পাখিরা মেতেছে নতুন খেলায়। আর পাখিদের দোলায় ঝরে পড়া শিমুল ফুল কুড়াতে আনন্দে মাতোয়ারা শিশুরা। এর থেকে অপরূপ সুন্দর্য আর কি বা হতে পারে। সব মিলে গড়ে তুলেছে প্রকৃতির এক অনবদ্য কাব্য।
কামরুন নাহার সৃষ্টি ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন, গতকাল সকাল থেকে আমাদের জার্নি আজকে সকালে শিমুল বাগানে এসে পৌছালাম, কিন্তু এমন মনে হয় না এত লম্বা জার্নি আসছি। আসলে ছোট বেলা আমরা অনেক চেরিফুলের গল্প শুনতাম, অনেক সিনেমায় দেখতাম বিদেশিরা বিষশডেতে চেরিফুল দেখতে যান উন্নত দেশগুলোতে। তারা কিন্তু আমাদের এই শিমুল ফুলের সৌন্দর্য দেখতে পান কি না জানি না। আমরা চেরিফুল সিনেমায় দেখছি আর আজ শিমুল ফুলের তলায় দাঁড়িয়ে আছি, মাথায় শিমুল ফুলের মালা পড়ে আছি।
এসময় তিনি প্রকৃতি প্রেমিদেরকে উদ্যোশ করে বলেন, বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে এতো সুন্দর একটা শিমুলবাগান বাংলাদেশেরে অনেক মানুষ হয়তো জানেনই না। কেউ যদি নিজেকে ভালো রাখতে চান, চোখ দুটোকে একটু বড়িয়ে দিতে চান তাহলে শিমুল সুনামগঞ্জে আসবেন। আসাকরি স্বররগীয় সুখ পাবেন। বিশাল এই শিমুল রাজ্যের একপ্রান্তে দাঁড়ালে অন্যপ্রান্ত চোখের ল্যান্সে ধারণ করা যায় না। বাগানের যেদিকেই চোখ যায় সেদিকেই সারি সারি শিমুল গাছের সৌন্দর্য। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এত বিশাল শিমুল বাগান দক্ষিণ এশিয়ার আর কোথাও নেই।
সপরিবারে আসা পর্যটক আবু ফয়জল মোহাম্মদ হেলাল ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন, রাস্তাটা অনেকটা দুর্গম, রাস্তাকে মেরামত করা দরকার। আসতে গেলে অনেক কষ্ট হয়। যেমন গাড়ি দিয়ে সরাসরি আসতে চাইলে তাহিরপুর সদর হয়ে ঘুরে আসতে হয়, অনেক সময়েরও ব্যাপার। রাস্তাটা যদি মেরামত করা হয় তাহলে আরও পর্যটকরা আসবেন। নয়তো রাস্তার জন্যে অনেকেই আসতে চাইবেন না। আমরা আজ বাচ্চাদের নিয়ে এসে গাড়িটা নদীর ওপারে রেখে ফাড়ি পথে কিছু জায়গা হেটে এসছি, এতে কিছুটা সময় বেচে গেছে আমাদের।
সৌন্দর্যের এই স্বর্গরাজ্যের শুরুটা আজ থেকে ২০ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার মানিগাঁও গ্রামে। ২০০৩ সালে জাদুকাটা নদীর তীরে ১০০ বিঘারও বেশি জায়গা জুড়ে বাদাঘাট ইউপি চেয়ারম্যান প্রয়াত জয়নাল আবেদীন গড়ে তুলেন এই শিমুল বাগান। তিনি বেচে না থাকলেও থেমে নেই সৌন্দর্য প্রিয় মানুষটির স্বপ্ন। এই বাগানের সৌন্দর্য স্বচক্ষে দেখতে ছুটে আসছে হাজারো পর্যটক ও দর্শনার্থীরা। বাগানের প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ তারা। তাইতো বাগানে ছবি তোলা থেকে শুরু কর, নাটক ও গানের মিউজিক ভিডিওর শুটিং করছেন ভ্রমনকারীরা।
বাগান মালিক আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন এর ছেলে মোহাম্মদ রাকাব উদ্দিন বাগান নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা জানালেন ঢাকা প্রকাশ-কে। তিনি বলেন আমার বাবা আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন ২০০৩ সালে এই সৃষ্টি করেছেন নিজ উদ্দ্যোগে। প্রথমএ ব্যবসার চিন্তাভাবনা ছিলো। পরে বাবা সড়ক দূর ঘটনায় মারা যাওয়ার পর আমরা দর্শনীয় স্থান হিসেবে করেছি। বিভিন্ন জেলা থেকে ছাত্রছাত্রীরা পর্যটকরা আসা শুরু করেছেন। পর্যটকদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বাগানে ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করেছি এবং রিসোর্টের ব্যবস্থা করছি অচিরেই থাকারও ব্যবস্থা করে দিবো। সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকলে আগামীতে তাহিরপুর পর্যটন সমৃদ্ধ উপজেলা হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পাবে বলে বিশ্বাস করেন স্থানীয়রা।
এএজেড