এনজিও’র অনিয়ম ঢাকতে কলেজ অধ্যক্ষের অনৈতিক প্রস্তাব!
নিজের গ্রাসরুট লেভেল ডেভলপমেন্ট(জেএলডিপি’র) নামের এনজিও’র অনিয়ম ঢাকতে কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন হবিগঞ্জের লাখাই সরকারি মুক্তিযোদ্ধা কলেজের অধ্যক্ষ জাবেদ আলী। এনজিও’র অনিয়মের মধ্যস্থতাকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আরিফ আল হাসানকে টাকার বিনিময়ে কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি ও বেতন মওকুফ করাসহ অবৈধ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এমন একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় ঘটনাটি নিয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার নিকট একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্তও চলছে।
অভিযোগের তথ্য ও অডিও রেকর্ড বিশ্লেষণ করে জানা যায়, হবিগঞ্জে জিএলডিপি (গ্রাসরুট লেভেল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম) নামে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেছেন লাখাই সরকারি মুক্তিযোদ্ধা কলেজের অধ্যক্ষ জাবেদ আলী। তিনি শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। লাখাই উপজেলার ভাদিকারা গ্রামের কাজিরুল মিয়ার স্ত্রী লাইজু আক্তার এনজিও জিএলডিপির কালাউক বাজার শাখায় ৫ বছর মেয়াদী (প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা) সঞ্চয় করার জন্য তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী ৫ বছর পূর্ণ হলে তাকে ৬০ হাজার টাকা সঞ্চয়সহ আরও ৩০ হাজার টাকা লাভ দেওয়ার কথা। সর্বমোট আসল ও লাভসহ ৯০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু সম্প্রতি ৫ বছর সঞ্চয়ের মেয়াদ পূর্ণ হলে আসল ও লাভসহ তাকে ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। লাভের ১৬ হাজার ৫০০ টাকা বাকি থেকে যায়।
পরে উক্ত টাকা দিতে প্রতিষ্ঠানটি গড়িমসি শুরু করে। কয়েকবার ধর্ণা দিয়েও কূল-কিনারা করতে না পেরে লাইজু আক্তার এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দেন। বিষয়টি মিমাংসা করতে উদ্যোগ নেন ওই এলাকার বাসিন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আরিফ আল হাসান। তিনি বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য মোবাইল ফোনে কথা বলেন জিএলডিপি’র চেয়ারম্যান লাখাই সরকারি মুক্তিযোদ্ধা কলেজের অধ্যক্ষ জাবেদ আলীর সঙ্গে। এর অডিও রেকর্ড তিনি নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেন। ৬ মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের কথোপকথনে শোনা যায়, ‘অধ্যক্ষ জাবেদ আলী বলেন-টাকা পেয়েছে আর কথা বলে কেন। সেটি তুমি বলো। তোমার সহযোগিতা লাগে আমাদের কলেজ আছে। তোমার ব্যক্তিগত লোকের চাকরি লাগে, ১/২ লাখ টাকা লাগে, ঋণ লাগে অন্যভাবে করবোনে। এটি নিয়ে আর কথা বলার দরকার কি। আমি তোমার সহযোগিতা চেয়েছি। সহযোগিতার ক্ষেত্রে যদি কলেজের কোনো লাভ হয়। ১০ জন ছাত্র তুমি ২০ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি করিয়ে নিতে পার। সবসময়ই কিছু না কিছু আছে। ভর্তি, বেতন মওকুফ, ফরম পূরণ আছে। তুমি এসব সুবিধাটা নাও। আর এটি (এনজিও) অন্য সেক্টর। এতে তুমি যতটুকু পার আমাকে সহযোগিতা করে দাও। এটি বলে দাও তুমি টাকা নিয়ে গেছ। কিছু খরচের পয়সা আমি তার (স্যারের) কাছ থেকে নিয়ে দিই। আর তুমি ২ লাখ টাকা লাগে নাও। অন্যান্য সুযোগ সুবিধাতো আছেই। তোমার যে সুবিধা লাগে এটি আমিই দিতে পারি। এটির জন্য অফিস লাগবে না। টাকাটা তোমরা অন্যভাবে নাও। কলেজের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে।’
কথোপকথনের অডিও নিজের ফেসবুকে শেয়ার করে আরিফ আল হাসান লেখেন ‘লাখাই মুক্তিযোদ্ধা কলেজের অধ্যক্ষ জাভেদ আলীর ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান জিএলডিপি নামক এনজিও প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ঢাকতে কলেজ থেকে বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব দেয় আমাকে। যা আমি প্রত্যাখান করি। আমাদের আবেগের প্রতিষ্ঠান সরকারি মুক্তিযোদ্ধা কলেজকে বাঁচাতে সবার এগিয়ে আসা উচিত। অধ্যক্ষ জাভেদ আলীকে বিচারের আওতায় আনা হোক।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ জাবেদ আলী বার বার এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, আমি এখন ঢাকায় আছি। পরে দেখা হলে কথা বলব।
এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা সুলতানা বলেন, অধ্যক্ষ জাবেদ আলীর এনজিও প্রতিষ্ঠান জিএলডিপি’র অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। আজ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও অভিযোগকারীকে নিয়ে শুনানি হয়েছে। উভয়পক্ষের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য ২২ ফেব্রুয়ারী দিন ধার্য্য করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জেএলডিপির প্রতিনিধিকে ওইদিন আইনানুগ কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে। এ সময় অধ্যক্ষ জাবেদ আলীর কলেজ থেকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে একটি অডিও শোনানো হয়। এটি তদন্ত করা হবে। সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআইএইচ