ভালো নেই সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ
ভালো নেই সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। চলমান অবস্থায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। একই সাথে সিলেট সিটি করপোরেশেনের নির্বাচনও আগামী বছর। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে চলমান কয়েকটি ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলন পরবর্তী ক্ষুব্ধ দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের। দলের মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনের স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ড এখন দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে মুখে।
পরিস্থিতি সমাধানে দলীয় প্রধান ও সাধারণ সম্পাদকের হস্তক্ষেপ কামনা করে একাধিক চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে কেন্দ্রে। এরই প্রেক্ষিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা আহবান করা হয়েছে। ৬ নভেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় চলমান বিক্ষুভের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
এদিকে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য শোনার পূর্ব পর্যন্ত কোন ওয়ার্ড কমিটি গঠন না করতে কেন্দ্র থেকে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্ধিত সভায় প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন যোগ দেবেন বলে দলীয় একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের কাছে নালিশ জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত অভিযোগে অধ্যাপক জাকিরের বিরুদ্ধে ওয়ার্ড কমিটি গঠনে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়-স্বজন ও বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্যদের পদায়নের অভিযোগ করা হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, গত সোমবার সিলেট মহানগরীর ৩, ৪, ৬ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বরাত দিয়ে অভিযোগকারী নেতাকর্মীরা বলেন, বর্ধিত সভায় অংশ নেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সকল অভিযোগ আরেকবার শুনবেন।
এরপর বর্ধিত সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন। সিলেটে দলকে আরও সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করতে যা যা করা প্রয়োজন সবই করা হবে বলে আশ্বস্থ করেন তারা। মহানগর সাধারণ সম্পাদকের উপর অনুরূপ আরও একটি অভিযোগ তোলে ধরে ২৬ নং ওয়ার্ড কমিটির নেতৃবৃন্দও একটি পৃথক চিঠি প্রেরণের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।
পৃথক লিখিত অভিযোগে ওয়ার্ড কমিটির নেতারা জানান, অধ্যাপক জাকির হোসেন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দলের মধ্যে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ওয়ার্ড কমিটিতে তিনি দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে নিজের খেয়ালখুশিমতো আত্মীয়-স্বজন ও বিএনপি-জামায়াতের পরিবারের সদস্যদের হাতে নেতৃত্ব তুলে দিচ্ছেন। কমিটি গঠনে তিনি কোন নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কাই করছেন না।
৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি আতিকুর রব চৌধুরী জুয়েল স্বাক্ষরিত আবেদনে উল্লেখ করেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দাবি উপেক্ষা করে অধ্যাপক জাকির কাউন্সিল ছাড়াই তার ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করেছেন। সবার মতামত উপেক্ষা করে তিনি কমিটিতে আবদুল হামিদ নামের একজনকে সভাপতি করেছেন। যিনি গেল সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিলেন। আর সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম মাসুদ হচ্ছেন জাকিরের ভাগ্নে। মাসুদের এক ভাই বিএনপি ও আরেক ভাই জামায়াত নেতা।
৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পক্ষে অভিযোগ দিয়েছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সালাম। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, তার ওয়ার্ডেও কাউন্সিল ছাড়া মাইম্যান দিয়ে পকেট কমিটি করেছেন অধ্যাপক জাকির। কমিটিতে নিজের আত্মীয়কে সাধারণ সম্পাদক করেছেন তিনি।
৪ নং ওয়ার্ডের পক্ষে অভিযোগ দিয়েছেন জাবের আহমদ। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ করেন না এমন একজনকে ওয়ার্ড সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। পিয়ারু খান নামের ওই ব্যক্তিকে জাকির হোসেন নিজের ক্ষমতা বলে দায়িত্বে নিয়ে এসেছেন।
২৫নং ওয়ার্ডের অভিযোগ করেছেন সভাপতি প্রার্থী জাকির হোসেন। তিনি জানান- মহানগর সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিতর্কিত ব্যক্তিদের দিয়ে এ ওয়ার্ডের পকেট কমিটি গঠন করেছেন। এতে ব্যাংক ডাকাতি মামলার আসামীর ভাই ও জুয়াড়িদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করায় মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি।
এএজেড