বিদ্যুৎ ‘এই আসে,এই যায়’
একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন জসিম উদ্দিন। সকাল ৯টা থেকে অন্তত ১০ বার তিনি লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েন। নগরের শিবগঞ্জে অফিসে সকাল থেকেই তাই ব্যাঘাত ঘটছিল কাজে। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি জানালেন, এমনও হয়েছে অফিসের কম্পিউটার মাত্র স্টার্ট দিয়েছি, পিসি অন হতে না হতেই ফের চলে গেছে বিদ্যুৎ। মোট কথা ‘বিদ্যুৎ এই আসে, এই যায়’।
জসিম উদ্দিনের মতো অনেক অফিস কিংবা প্রতিষ্ঠানের চিত্র একই। ফলে বাড়ছে দুর্ভোগ। নগরে লোডশেডিংয়ের এই অবস্থা কখনো কখনো ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা পর আসে। বিভাগীয় শহর সিলেটে দিনরাত মিলিয়ে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। আর শহরের বাইরের পরিস্থিতি আরও খারাপ। গ্রামঞ্চলে কোনো কোনো এলাকায় ১০ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।
তবে বিদ্যুৎ বিভাগের বড় কর্তাদের দাবি- জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর থেকেই লোডশেডিং বেড়েছে। এরপর ধাপে ধাপে বন্ধ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করা হলেও এখনো কয়েকটি বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া যান্ত্রিক ক্রটির কারণে রবিবার রাত পর্যন্ত সিলেটের কুমারগাঁওয়ের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা যায়নি। গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিলে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের সরবরাহ অর্ধেকে নেমে এসেছে জানিয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েকদিনের ব্যবধানে সিলেটে লোডশেডিং প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। তবে আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার বেলা ৩টায় সিলেট জোনের ৮টি গ্রিডে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৪৪৬.৬ মেগাওয়াট। তবে সরবরাহ ছিল ২৮০.৭ মেগাওয়াট। এ হিসেবে ঘাটতি ছিল ১০৩.৯ মেগাওয়াট। সন্ধ্যা ৬টায় পল্লী বিদ্যুতের সিলেট অঞ্চলে ১৮০ মেগাওয়াট চাহিদার বদলে সরবরাহ ছিল ১১৮ মেগাওয়াট। এই হিসেবে ৯০ মেগাওয়াট ঘাটতি ছিল। পল্লী বিদ্যুতের ঘাটতি বেশি থাকায় শহরের চাইতে গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং হচ্ছে বেশি।
গত চার-পাঁচ দিন লোডশেডিংয়ের কারণে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ অফিস-আদালতে কাজের স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। গরমে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে বারবার লোডশেডিংয়ে পড়ার অভিযোগ আসছে।
নগরের চালিবন্দরের বাসিন্দা মারুফ আহমদ জানান, গত মঙ্গলবার (গ্রিড বিপর্যয়ের দিন) টানা ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। এরপর দিন-রাত মিলে চার থেকে পাঁচবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। প্রতিবারই এক থেকে দেড় ঘণ্টা করে লোডশেডিং থাকছে।
প্রায় একই অভিযোগ সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চির বাসিন্দা রুবেল মিয়ার। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার থেকে দিনে ৮-৯ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। কিছুক্ষণ পরপর বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। রাতে লোডশেডিং হচ্ছে বেশি। শনি ও রবিবারও ছিল একই অবস্থা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির জানান, গ্রিড লাইনে বিপর্যয়ের পর থেকে বিদ্যুতের ঘাটতি বেড়েছে। আগে যেখানে দিনে ঘাটতি ছিল ২০ শতাংশ এখন তা ৪৫ শতাংশের মতো হয়ে গেছে। ঘাটতির কারণ সম্পর্কে আমাদের জানানো হয়নি। তবে যতদূর জানতে পেরেছি, গ্রিড বিপর্যয়ে বন্ধ হওয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবগুলো এখনো চালু হতে পারেনি। সিলেটের কুমারগাঁওয়ের ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রও এখনো বন্ধ আছে। এ ছাড়া গ্যাসের চাপও অনেক কমে গেছে। এসব কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যেতে পারে।
এসএন