সিলেটে সরকারি দপ্তরগুলোতে নেই আপডেট তথ্য
আজ ২৮ সেপ্টেম্বর, আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সারাদেশের মতো সিলেটেও সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠান পালিত হবে। অবাধ তথ্য নিয়ে শুরু হবে তোড়জোড়। কিন্তু দিবসটি পালনের প্রাক্কালে সিলেটের বেশ কয়েকটি সরকারি দপ্তরে এর বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। নেই অবাধ তথ্য প্রবাহ। নিজেদের দপ্তরের কর্মকর্তাসহ সাইটগুলো নিয়মিত আপডেট নেই। সংশ্লিষ্ট অফিস ও কর্মকর্তাদের পদবিসহ নাম, নাম্বার দেওয়া থাকলেও ফোন করা হলে ধরা পরে তথ্যে ত্রুটি। অর্থ্যাৎ কর্মকর্তা বদলির ২ বছর অতিক্রান্ত হলেও আপডেট নেই দাপ্তরিক তথ্যে।
মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এমনই একটি তথ্য পাওয়া গেল সিলেট জেলা নির্বাচন অফিসের ওয়েবসাইটে। প্রায় বছর খানেক আগে সিলেট থেকে রাজশাহীতে বদলি হয়েছেন সিলেট বিভাগীয় নির্বাচন অফিসের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন এবং একই সময়ে কুষ্টিয়ায় বদলি হয়েছেন মো: ফজলুল করিম। নতুন কর্মস্থলে যোগদানের বছর পেরিয়ে গেলেও নির্বাচন অফিসের ওয়েবসাইটে ওই দুজনের নাম, পদবি ও মোবাইল নাম্বার দেওয়া আছে এখনো। পাশাপাশি ওই সাইটে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে ফয়সল কাদেরের নাম, পদবি ও মোবাইল নাম্বার দেওয়া থাকলেও তার বিরুদ্ধে ফোন না ধরার অভিযোগ রয়েছে। এতে করে ভোগান্তি যেমন বাড়ছে একইভাবে গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এ ছাড়া ফোন দিলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়াও সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া ওয়েবসাইটে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার কলাম থাকলেও সেখানে নেই কোনো তথ্য।
এই অবস্থা শুধুমাত্র জেলা নির্বাচন অফিসেই নয়, সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে শুরু করে সিলেটের সরকারি-বেসরকারী অনেক অফিসের। অথচ তথ্য অধিকার নীতিমালার আলোকে সরকারি-বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা এবং ওয়েবসাইটে প্রতিটি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম, পদবি ও মোবাইল নাম্বার থাকা বাধ্যতামূলক। ফলে ডিজিটাল যুগে এসেও বিভ্রান্ত হচ্ছেন উপকারভোগী মানুষ। যা নাগরিক অধিকার ক্ষুন্নের শামিল।
এর সত্যতা স্বীকার করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভাগীয় তথ্য অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, সরকারি-বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা এবং ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম, পদবি ও মোবাইল নাম্বার থাকা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে বদলিজনিত কারণে তথ্য প্রদানকারীর কর্মকর্তার পদ খালি কিংবা যোগদান করার সাথে সাথে সেই তথ্য আপডেট করা অবশ্যই জরুরী।
তিনি বলেন, কর্মকর্তারা নিজেদের সাইটগুলো অনেক সময় আপডেট করেন না এবং নাম্বার দেওয়া থাকলেও ফোন না ধরার অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারী অফিসের বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য পাওয়া যেমন নাগরিকের অধিকার তেমনি তথ্য দিয়ে সহায়তা করাও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষে ২০০৯ সালে সরকার তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করে। একদিকে অনেক মানুষ এই আইন সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখেন না। অপরদিকে সিলেটের অনেক সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে নেই তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা। প্রায় সব অফিসের নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকলেও সেখানে নতুন আপলোড নেই। এ ছাড়াও নেই কর্মকর্তা কর্মচারীদের তালিকা। ফলে তথ্য প্রবাহের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভুক্তভোগী মানুষ। এতে বিভিন্ন সেক্টরে সেবা নিতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। নিশ্চিত হচ্ছে না প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, সিলেটের বিভিন্ন সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি দপ্তরগুলোতে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা নেই। প্রতিষ্ঠান প্রধানই সাধারণত তথ্য দিয়ে থাকেন। এমনকি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব ওয়েবসাইটে কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হলেও সেখানেও থাকছে না পূর্ণাঙ্গ তথ্য। এ ছাড়াও সিলেটের স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ পর্যায়ে আলাদা তথ্য প্রদানকারীর কর্মকর্তা না থাকায় অনেক সময় প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে কথা বলেই তথ্য জানতে হচ্ছে। তা ছাড়াও প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ অনেক সময় ব্যস্ততার কারণে ফোন না ধরলে তাৎক্ষণিক তথ্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। সিলেটে কাজ করছে অনেক এনজিও অফিসেও নেই তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় তথ্য অফিসের পরিচালক (রুটিন দায়িত্বে থাকা) উজ্জল শীল বলেন, সকল সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তার পদ রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বদলিজনিত কারণে পদটি খালি থাকে। এ ছাড়া কিছুক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়েবসাইটে নিয়মিত আপডেট না থাকায় নতুন তথ্য অজানা থেকে যাচ্ছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে থাকা নাম্বারগুলোতে কল দিয়ে সাড়া না পাওয়ায় অবাধ তথ্য প্রবাহের অধিকার থেকে জনসাধারণকে বঞ্চিত থাকতে হচ্ছে। এসব অভিযোগ আমাদের কাছেও আসে। এসব বিষয় নিয়ে কাজ করে তথ্য কমিশন।
তিনি বলেন, অবাধ তথ্য পাওয়া নাগরিকের অধিকার। সেই অধিকার থেকে নাগরিকদের বঞ্চিত রাখা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করতে সবাইকে নিজ নিজ অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে সংবাদ মাধ্যমগুলো অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে পারে। রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে জনগণের অবাধ তথ্য প্রবাহে নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এসআইএইচ