পৌর শহরের সড়কে গাড়ি চলে হেলেদুলে, দুর্ভোগ চরমে
সড়কের বেহাল দশার কারণে যানবাহন চলে হেলেদুলে। এ দশা এক-দুই দিনের নয়, এভাবে চলছে বছরের পর বছর। খানাখন্দে ভরা ভাঙা সড়কটিতে চলার উপায় নেই। কিন্তু না চলেও উপায় নেই বাসিন্দাদের। তবুও জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজর নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীনগর-ধাড়ারগাঁও সড়কটির বেহাল অবস্থা। খানাখন্দে ভরা এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রী ও চালকদের। সড়কে থাকা বড় বড় গর্তে পড়ে উল্টে যাচ্ছে অটোরিকশাসহ ছোট-বড় অসংখ্য যানবাহন। বিকল্প সড়ক না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করছে হাজারো মানুষ।
সুনামগঞ্জের জনবহুল ও জনবসতিপূর্ণ নবীনগর-ধাড়ারগাঁও সড়ক দিয়ে নবীনগর, ধারারগাঁও, হালুয়ারঘাটসহ সুরমা নদীর ওপারে ৩ ইউনিয়নের লাখো মানুষকে প্রতিদিনই অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, হাট-বাজারসহ জরুরি কাজে যাতায়াত করতে হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ষোলঘর পয়েন্টে ও নবীনগর-ধারারগাঁও প্রধান সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে বড় আকারে ভাঙা। সড়কের পিচ উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের কোনো কোনো অংশ কাদা পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে। এসব সড়ক দিয়ে হাঁটাও ভীষণ কষ্টকর।
শহরের নবীনগর এলাকার অটোরিকশাচালক জমির হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, রোগী লুইয়া এই রাস্তা বায়দি যাওয়াই যাইত না। প্রেগন্যান্ট একটা মহিলা লুইয়া গেলে আর মেডিকেল লুইয়া যাওয়া লাগত না, ইকানোই বাইচ্ছা হইা যাইব রাস্তার যে খারাপ অবস্থা। বেশিরভাগ গাড়ি উল্টি যায়, এক্সিডেন্ট হয় শুধু এই রাস্তার কারণে। এই রাস্তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর। আমাদের রাস্তাটার যদি উন্নয়ন হইত তাইলে আমরা শান্তি পাইলামনে।
এ ছাড়া সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টের বহু ব্যস্ততম সড়কটিও। ষোলঘর পয়েন্টের সড়কটিতে ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গর্তগুলো এড়িয়ে যানবাহন চলছে এঁকেবেঁকে। গর্তের অনেক জায়গায় জমে আছে পানি। আবার অনেক জায়গায় গাড়ি চলার সময় আশপাশ ধুলাময় আবার কোথাও কাদাময় হয়ে যাচ্ছে। বিশাল গর্তে গাড়ি আটকে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয় এলাকার লক্ষাধিক মানুষ।
ষোলঘর এলাকার বাসিন্দা রুবেল মিয়া ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সড়কটি ভাঙার কারণে ব্যস্ততম সড়ক ষোলঘর পয়েন্টে যানজটের সৃষ্টি হয়। একবার যানজটের সৃষ্টি হলে ঘণ্টা-দেড়ঘণ্টা লেগে যায়। এই ভাঙায় গত কিছু দিন আগে এক গরিব ছেলের চটপটি-ফুসকার গাড়ি উল্টে অনেক ক্ষতি হয়ে যায়। আমরা সুনামগঞ্জ মেয়র সাবরে অনুরোধ কররাম যত দ্রুত পরইন এই রাস্তাটা কামটা কইরা দেউক্কা। আমরার এই ভোগান্তি দূর করুক্কা।
ব্যস্ততম এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন পৌর শহরের ষোলঘর, বনানীপাড়া, মোহাম্মদপুর, মাইজবাড়ি, ও দোয়ারাবাজার উপজেলা, ছাতক উপজেলার কয়েক শতাধিক অটোরিকশা-প্রাইভেটকার, ট্রাকসহ ছোট-বড় বিভিন্ন যানবাহন চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এতে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুঘর্টনা। কিন্তু এই দুটি সড়ক মেরামত করার যেন কেউ নেই। সড়কটিতে দুর্ভোগের শেষ নেই, কাদা পানিতে হাঁটার কারণে নষ্ট হচ্ছে মানুষের জামা-কাপড়। পাশাপাশি যানবাহন মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে।
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এ ভাঙা সড়কে স্থানীয় বাসিন্দাদের বহুবার দুর্ঘটনার মধ্যে পড়তে হয়েছে। তবে সমাধানে কেবল প্রতিশ্রুতি দিয়েই দায় সেরে আসছেন জনপ্রতিনিধিরা।
ষোলঘর এলাকার এক যুবক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ষোলঘর রাস্তার বেহাল অবস্থা। এখানে প্রতিদিন একটার পর একটা গাড়ি উল্টে মানুষের অনেক ক্ষতি হয়। পৌরসভার মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে আমাদের এই রাস্তাটা পুরোপুরি ঠিক করে দেন। আপনারা যদি এই রাস্তাটার কাজ না করান তাহলে দেখবেন একদিন আপনাদের বিপরীত হয়ে যাচ্ছে। মানুষগুলো আর থেমে থাকবে না। আপনারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের রাস্তাটি ঠিক করে দেন।
মতিন আহমেদ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই পয়েন্টের বেহাল অবস্থা। আমরা ফেসবুকে পোস্ট করি কারণ কাউকে বলতে পারি না। আমরা কাকে বলব? এলাকার কোনো সমস্যা দেখি তাহলে ফেসবুকে পোস্ট করি, কেউর যদি তনত লড়ে, বা কেউ যদি মনে কয় উন্নয়ন করার ইচ্ছা আছে তাইলে করব। আর না যদি ইচ্ছা হয় তাইলে এলাকার উন্নয়ন করত না, আমরার তো আর শক্তি নাই।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কালী কৃষ্ণ পাল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ষোলঘর-নবীনগর রাস্তাটি বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগেও রাস্তাটি খারাপ ছিল, কিন্তু আমরা ইটের কুয়া ফেলে মেরামত করে দেই। কিন্তু বন্যার পর আবারও নষ্ট হয়ে যায়। আমরা এই প্রকল্পটি ঢাকা প্রজেক্ট অফিসে পাঠিয়েছি। প্রায় এক কোটি টাকার উপরে খরচ হবে। প্রকল্প অফিস থেকে পাস হয়ে আসলেই আমরা রাস্তাটা করে দিব।
এসজি