১৭০ টাকা মজুরিতে কাজে ফিরেছেন চা শ্রমিকরা
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান সংকটের নিরসন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। মজুরি নির্ধারণের পর আজ রবিবার থেকে কাজে ফিরেছেন চা শ্রমিকরা।
শনিবার বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান শাহ আলমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে বসেন। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস চা শ্রমিকদের নতুন মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। একই সঙ্গে প্লাকিং বোনাস, উৎসব ভাতা, বার্ষিক ছুটি, অসুস্থতাজনিত ছুটি, ভবিষ্যৎ তহবিলসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আনুপাতিক হারে বাড়ানোরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিছুদিনের মধ্যে চা শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনায় বসবেন। চা শ্রমিকরা যেন কাজে যোগ দেন সেজন্য আহ্বান করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় আমরা খুব খুশি। আমাদের সব চা শ্রমিকরা আজ থেকেই কাজে যোগ দিয়েছেন। ১৭০ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে দেওয়ায় আমরা চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
নতুন মজুরির বিষয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, আমাদের চা শ্রমিকদের দাবি ছিল প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার। প্রধানমন্ত্রী মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। এ ছাড়া রেশন, চিকিৎসা, ঘরসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর জন্য বলেছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা জানাই। আমাদের চা শ্রমিকরা আজ থেকে চা বাগানের কাজে যোগদান করেছে।
ভাড়াউড়া চা বাগানের চা শ্রমিক উমা বাউড়ি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের বিশ্বাস রেখেছেন। তিনি আমাদের যা মজুরি দিবেন বলেছেন তাতেই আমরা খুশি আছি। আরেক চা শ্রমিক বিষ্ণু তাঁতি বলেন, আমাদের এতদিনের আন্দোলন সফল হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
খাইছড়়া চা বাগানের চা শ্রমিক সবিতা গোয়ালা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের মা। আমরা তার কথার বাইরে যাব না। আমরা ১৯ দিন না খেয়ে আন্দোলন করেছি। অনেকে আমাদের অনেক কিছু বুঝিয়েছে। আমাদের সঙ্গে অনেকে টালবাহানা করেছে। কিন্তু আমরা সেগুলো গুরুত্ব দেইনি। আমরা অপেক্ষা করেছি আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য কিছু একটা করবেন। ১৭০ টাকা মজুরিতে আমরা খুশি। শুনেছি মজুরির সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে। চা শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এই মহৎ উদ্যোগকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই।
ভাড়াউড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি নুর মিয়া বলেন, শ্রমিকরা সবাই খুশি। আমাদের আন্দোলন সফল। শ্রমিকদের আমরা জানিয়ে দিয়েছি কাজে যোগ দিতে। আগামীকাল সাপ্তাহিক ছুটি। এদিন নগদ মজুরির মাধ্যমে কাজ হয়। ছুটির দিনেও শ্রমিকরা কাজ করবে। শ্রমিকরা বেশি করে কষ্ট করে চা বাগানের কাজগুলো করবে। দ্রুত চা বাগানের চা পাতাগুলো তুলে দিবেন।
এদিকে সকাল থেকেই জেলার ৯২টি চা বাগানে শুরু হয়েছে পাতা তোলা, খুলেছে বাগানের কারখানাগুলোও৷
এর আগে গত ৯ আগস্ট থেকে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি ও গত ১৩ থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন চা শ্রমিকরা। আন্দোলন সফল করতে সড়ক, মহাসড়ক, রেলপথ অবরোধ করতে দেখা গেছে তাদের। দাবি আদায়ে গত কয়েকদিন ধরে বেশ উত্তাল ছিল চা বাগানগুলো। জনপ্রতিনিধি, শ্রমিকনেতা, সরকারি কর্মকর্তা ও প্রশাসনের বিভিন্ন আশ্বাস ও সভায় কোনো সমাধান না আসায় অবশেষে প্রধানমন্ত্রীই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর কাজে ফিরেছেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা।
এসজি