রোগী না থাকলেও ডেঙ্গু ঝুঁকিতে সিলেট
ডেঙ্গু রোগের জীবাণুবাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে সিলেটে। নগরীর পৃথক ৫টি স্থান থেকে লার্ভা পাওয়ার পর সিলেটজুড়ে বাড়ছে আতঙ্ক। সিলেটে চলতি বন্যার পর স্থানে স্থানে ময়লা আবর্জনা এখনও ভেসে থাকায় ডেঙ্গু ঝুঁকিকে হালকাভাবে দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। গত বছরও সিলেটের প্রথম শনাক্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ঢাকা থেকে অসুস্থ হয়ে সিলেটে এসেছিলেন। ফলে চলতি বছরেও দূরপাল্লার যানবাহনে যাতায়াতকারীরা ডেঙ্গু আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছেন। প্রতিদিন সিলেট থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগে ও জেলায় হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। আকাশ পথ, রেলপথ ও সড়কপথে যাতায়াত করা এসব মানুষ এডিস মশার জীবাণু বহনের ঝুঁকিতে রয়েছেন। দূরপাল্লার অনেক যানবাহনে নিয়মিত স্প্রে না করার অভিযোগ রয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস ও রেলে ডেঙ্গু মশা নিরাপদ আবাস স্থাপন করতে পারে। আর এসব যানবাহনে যাতায়াতকারী যাত্রীরা যেমন ডেঙ্গু আক্রান্তের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন তেমনি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেটও।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার ২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গু মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। সিসিকের ওই দুটি ওয়ার্ডের ভার্থখলা, রেলওয়ে স্টেশন ও বাস স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় অনেকগুলো টায়ারের দোকান রয়েছে। গত রবিবার (৩১ জুলাই) স্বাস্থ্য বিভাগের একটি টিম এসব এলাকায় অভিযানে নামে। এ সময় ডেঙ্গুর জীবাণু শনাক্তের লক্ষ্যে কয়েকটি টায়ার ও স্যানেটারি দোকান থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করা হলে পরবর্তীতে পরীক্ষায় এডিস মশার জীবাণু শনাক্ত হয়। গত কয়েক বছর টায়ার-টিউবের দোকানে এডিসের লার্ভা মিললেও এবার এর ব্যতিক্রম হয়েছে। এই বছর অধিকাংশ টায়ার টিউবের দোকানে লার্ভা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়াও মঙ্গলবার (২ আগষ্ট) ভার্থখলা এলাকার কয়েকটি স্যানেটারি ও টাইলসের দোকানে অভিযান চালিয়ে ৩টি দোকানে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। পরে লার্ভাগুলো ধ্বংস করা হয় এবং সকল দোকানদেরকে বাইরে রাখা স্যানিটারি জিনিস ঘরের ভিতরে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.জাহিদুল ইসলাম বলেন, নগরীর বেশ কিছু স্থানে এডিস মশার লার্ভা মিলেছে। তবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার (২ আগষ্ট) নগরীর দক্ষিণ সুরমা এলাকার ৩টি স্যানিটারি ও টাইলসের দোকানের বাইরে রাখা জিনিসপত্রে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। আমরা সেসব ধ্বংস করেছি। দোকান মালিকদের বলেছি খোলা আকাশের নিচ থেকে স্যানিটারি জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে। অন্যথায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করা হবে।
তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার যে ৩টি স্যানিটারি দোকানে লার্ভা পাওয়া গেছে এসব দোকানে গত টানা ৩ বছর থেকে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি বছর তাদের জরিমানাও করা হয়েছে। বন্যা পরবর্তী সময়ে নগরজুড়ে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চলছে। এডিস মশার লার্ভা চিহ্নিত করতে অভিযান চলমান রয়েছে। শীঘ্রই মশক নিধনে বিশাল পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা.জন্মেজয় দত্ত শংকর বলেন, দেশে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। তবে সিলেটে এখনও ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান মিলেনি। আমরা ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার লার্ভা চিহ্নিত করতে কাজ করছি। যেসব স্থানে লার্ভা পাওয়া গেছে সেসব এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিয়েছি। বাইরের যেকোনো স্থানে পরিস্কার পানি জমে থাকলে ডেঙ্গুর আশঙ্কা থাকে। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। যাতে কোথাও জমে থেকে এডিস মশার লাভা তৈরি না হয়।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের গত জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত ৪ জন রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সিলেটের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের সবাই ঢাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সিলেটের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সব মিলিয়ে গত ৭ মাসে সিলেট জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ওই ৪ জনই ছিলেন। তবে জানুয়ারির পর থেকে সিলেটে আর কোন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন, সিলেটে এখনো কোনও ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়নি। আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছি। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে এডিস মশার লার্ভা চিহ্নিত ও ধ্বংস করা হচ্ছে। যেসব স্থানে লার্ভা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে সেই সকল স্থানে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সিলেটে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু ছড়ানোর আশঙ্কা কম। তবে অন্যান্য জায়গা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সিলেটে আসার ঝুঁকিটাই বেশী।
এসআইএইচ