ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার দায়ে যুবকের ১০ বছরের কারাদণ্ড
রংপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর পোস্ট দেওয়ার ঘটনায় আসামি টিটু রায়কে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৫ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ মে) দুপুরে রংপুর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক ড. আবদুল মজিদ এই রায় দেন।
রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্ত টিটু রায় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আসামি টিটু রায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার স্ট্যাটাস দিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি ছড়ালে রংপুরের শলেয়াশাহ ঠাঁকুরপাড়া এলাকায় হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় অবস্থান করে রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া থানাধীন হরকলি ঠাঁকুরপাড়ার মৃত খগেন্দ্রনাথ রায়ের ছেলে টিটু রায় ২০১৭ সালের ২৮ অক্টোবর এমডি টিটু নামে ফেসবুকে নকল আইডি খুলে মহানবী হযরত মোহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কটূক্তিমূলক স্ট্যাটাস দেন। ওই স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ওই বছরের ১০ নভেম্বর জুমার নামাজের পর টিটু রায়ের শান্তির দাবিতে শলেয়াশাহ বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে স্থানীয়রা। পরে কয়েক হাজার মানুষ টিটু রায়ের বাড়িসহ ঠাঁকুরপাড়ার হিন্দুপল্লীর বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় রংপুর সদর ও গঙ্গাচড়া থানায় দুটি মামলা হয়।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, কোনোভাবেই ধর্ম অবমাননা সমীচীন নয়। এটা আইন পরিপন্থী। যা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। ধর্মীয় অবমাননাকর ছবি তৈরি করে প্রচার করায় আসামি টিুট রায়কে ৫৭(২) ধারায় ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, সাইবার ট্রাইব্যুনালে ফরেনসিক রিপোর্টের ভিত্তিতে রায় প্রদান করা হয়ে থাকে। সেই মোতাবেক ফরেনসিক রিপোর্ট থেকে টিটু রায়ের মোবাইল ডিভাইস থেকে ওই ধরনের বিতর্কিত পোস্ট দেওয়ার প্রমাণ মেলেনি। আমরা মতে নিরক্ষর একটি ছেলের পক্ষে ফেক আইডি খুলে এই রকম পোস্ট করা সম্ভব নয়। বিচারক রায় দিয়েছেন। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব।
প্রসঙ্গত, মহানবীকে (সা.) নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি ও অবমাননাকর ছবি পোস্ট করার অভিযোগে ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর রংপুরের ঠাকুরপাড়ার মৃত খগেন রায়ের ছেলে টিটু রায়ের বিরুদ্ধে রংপুর সদর উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের শলেয়াশাহ গ্রামের মুদি দোকানি রাজু মিয়া গঙ্গাচড়া থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করেন। এরপর ৬ নভেম্বর স্থানীয় জনতা প্রশাসনকে একটি স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে টিটু রায়কে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর জুমার নামাজের পর টিটু রায়ের ফাঁসির দাবিতে শলেয়াশাহ বাজারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে স্থানীয়রা। পরে কয়েক হাজার মানুষ ঠাকুরপাড়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। এ নিয়ে স্থানীয় মুসল্লি ও গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে এক যুবক নিহত হয়, আহত হন পুলিশসহ ১৫ জন। এ ঘটনায় সদর ও গঙ্গাচড়া থানায় দুটি মামলা হয়। গঙ্গাচড়া থানার মামলায় ২২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মকবুল হোসেন।
এসজি