৮ বছর ধরে নেই বিজ্ঞানাগার, তবুও দেওয়া হয়েছে যন্ত্রাংশ

পঞ্চগড় সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কাজীপাড়া। এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ শ্রমজীবী ও দরিদ্র। আশপাশে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় তাদের সন্তানদের মাধ্যমিক পাঠ চলে কাজীপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৮ জন শিক্ষক ও ২ জন কর্মচারী রয়েছেন। কাগজে কলমে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক হলেও নিয়মিত ক্লাশ করে অর্ধেকেরও কম। তবে হতাশার বিষয় হলো বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিনেও গড়ে তোলা হয়নি কোনো বিজ্ঞানাগার। নেই বিজ্ঞান বিষয়ের কোনো শিক্ষক। গণিত বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে নেওয়া হয় বিজ্ঞান বিষয়ের ক্লাস। তবুও ২০১৬ সালে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুবিধায় হাতে কলমে শেখানোর জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকার মূল্যের বিজ্ঞানাগারের নানা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হয় বিদ্যালয়টিতে। এরপরে প্রধান শিক্ষক তোমকিন আলম মুকুল সব জিনিসপত্র নিজের বাড়িতে নিয়ে একটি কক্ষে তালাবন্ধ করে ঘরের মেঝেতেই ফেলে রাখেন। তারপর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ ৮ বছর। বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষার্থীরা কোনো কিছু শেখা তো দূরের কথা জানেনই না যন্ত্রাংশ বরাদ্দের বিষয়ে। প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে এখনো প্যাকেটবন্দি অবস্থায় রয়েছে মূল্যবান জিনিসপত্রগুলো। এমনকি কোনো দিন তা বিদ্যালয়ে এনে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের কাজে লাগানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়নি।
জানা গেছে, গত ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ওই বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ৫ জনসহ ২০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তার মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ জন। বিদ্যালয়টিতে দিন দিন লেখাপড়ার মান কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ফলাফল প্রতি বছরই খারাপ হয়। শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রযুক্তি ও জ্ঞান বিজ্ঞানে দক্ষ করে এগিয়ে নেয়ার কোনো উদ্যোগ নেই প্রতিষ্ঠানটির।
ওই বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির ছাত্রী সুমা আক্তার বলেন, বিজ্ঞানের কোনো জিনিসপত্র আমরা কোনোদিন দেখিনি। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কিনা। প্রতিষ্ঠানে কোনো যন্ত্রাংশ আছে কিনা তাও আমরা জানি না। আমাদের কখনো হাতে-কলমে শেখানো হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়টিতে দিন দিন লেখাপড়ার মান কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে দক্ষ করে এগিয়ে নেয়ার কোনো উদ্যোগ নেই প্রতিষ্ঠানটির।
তিনি আরও জানান, বিজ্ঞানাগারের জন্য দেওয়া জিনিসপত্র প্রতিষ্ঠান প্রধানের বাড়িতে তালাবদ্ধ হয়ে রয়েছে । এখন মনে হয় না সেসব যন্ত্রাংশ আর ব্যবহার করা যাবে। আসলে বিদ্যালয়গুলোতে কর্তৃপক্ষের দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থার কারণে এমন নাজুক অবস্থা তৈরি হয়েছে।
তবে বিজ্ঞান বিষয়ের কোনো শিক্ষক না থাকায় গণিতের শিক্ষক হয়েও বিজ্ঞান ক্লাস নেন বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়টির গণিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল হাসান। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশক্রমে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ের ক্লাস নেই। তবে বিজ্ঞান বিষয়ের যন্ত্রাংশগুলো প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে রাখা আছে। প্রয়োজন হলে আমরা সেগুলো বের করে এনে ক্লাস করাই।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোমকিন আলম মুকুল বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে কোনো বিজ্ঞানাগার নেই। তাই জিনিসগুলো আমার বাড়িতে নিয়ে রেখেছি। আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট। তার পাশাপাশি শ্রেণি কক্ষেরও সংকট রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে ওইসব জিনিসগুলো আমার বাড়িতে রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহীন আকতার বলেন, আপনাদের মাধ্যেমে বিষয়টি জানার পরে তদন্ত করার জন্য সদর উপজেলা মধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসআইএইচ
