দ্রুত সময়ে ঘরে বসেই মিলছে সেবা, বাড়ছে রাজস্ব আদায়
'প্রধানন্ত্রীর নির্দেশ স্মার্ট হবে বাংলাদেশ' এই মুলমন্ত্রকে সামনে রেখে এনালগ লেনদেনকে বিদায় জানিয়ে ডিজিটাল লেনদেন হিসেবে ঢাকার পর ক্যাশলেস যুগে প্রবেশ করেছে দেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়। এর মধ্যে দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশে যুক্ত হয়েছে দেশের সর্বউত্তরের সীমান্তবর্তী এ জেলা। এখন থেকে ঘরে বসেই uniontax.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেই যে কোন প্রান্ত থেকে এ সেবা পাবেন জেলার ৪৩ ইউনিয়ন ও ৩ পৌরসভার নাগরিকেরা।
ফলে মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যেমে টাকা প্রদান করে ইউনিয়ন পরিষদের হোল্ডিং ট্যাক্স, ওয়ারিশান সনদ, জন্ম ও মৃত্যু সনদ, নাগরিকত্ব ও চারিত্রিক সনদ, বৈবাহিক ও অবিবাহিত সনদ সহ ২০টির মত সেবা পাবেন সেবাগ্রহীতারা। নগদ বুঝে পাবেন টাকা জমাদানের রশিদও। এখন থেকে অনলাইনের মাধ্যেমে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে সেবা পাচ্ছেন জেলার সাধারণ মানুষজন। ফলে যেমনি বাড়বে সরকারের রাজস্ব আদায়। তেমনি সেবাহীতাদের হয়রানি কমার পাশাপাশি দ্রুত সময়ে মিলবে কাঙ্খিত সেবা।
ডিজিটাল লেনদেনের এ সেবার উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করেন তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা। আর এ কার্যক্রমের উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম। এদিকে গত ৬ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদে এ ক্যাশলেস সেবা চালুর উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম। এতে করে অনলাইন সেবাগ্রহীতারা ২০টি সেবা অতি সহজে নিতে পেরে বেশ খুঁশি।
সেবাগ্রহীতারা বলছেন, এ সেবার মাধ্যমে তাদের দুর্ভোগ অনেকটাই কমে এসেছে। একসময় সেবা নিতে নির্দিষ্ট ফির বেশি দিয়ে পরিষদ থেকে কাজ করতে হতো। এখন অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে তার আর কোনো সুযোগ নেই। সঠিক সময়ে অনলাইনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফি জমা দিয়ে দ্রুত সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
তিরনইহাট ইউনিয়নের নাসরিন আক্তার (৪৩) বলেন, আমি আমার সন্তানের জন্য জন্মনিবন্ধন পত্র নিতে এসেছি। খুব সহজে অনলাইনের মাধ্যেমে সরকারী ফি প্রদান করে দ্রুত সময়ে কাগজ হাতে পেলাম। টাকা জমা দেয়ার রশিদও পেলাম। ক্যাশলেস ব্যবস্থা একটা ঝামেরা বিহিন ব্যাবস্থা।
একই উপজেলার তেতুঁলিয়া সদর ইউনিয়নের আজিজনগড় এলাকার মিনজাহ আলী (৬৫) বলেন, আমার মেয়ের নাগরিকত্বের সনদ নিতে ইউনিয়ন পরিষদে এসেছিলাম। আমার পরেই ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে কাজ শেষে ক্যাশলেসের মাধ্যেমে টাকা জমা দিয়ে রশিদ ও সনদ দুটোই বুঝে নিলাম। স্মার্ট বাংলাদেশের পথে আরো একধাপ এগিয়ে গেলাম আমরা। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
তবে অনলাইনের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে নগদ ক্যাশ ছাড়াই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেবা দিতে পারায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তারা।
তেতুঁলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল উদ্যোক্তা হামিদা আকতার বলেন, প্রতিদিনই ক্যাশলেস সেবা নিতে ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছেন সেবা গ্রহীতারা। মোবাইল ব্যাংকিয়ের মাধ্যেমে টাকা পেমেন্ট করে খুব সহজে অনলাইনে তাদের ২০টি সেবা দিতে পেরে আমিও খুশি। আগের মত এখন আর কোন ঝামেলা হয়না।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পরীক্ষামূলকভাবে তেঁতুলিয়া উপজেলায় অনলাইন সেবা চালু করা হলেও চলতি বছর ক্যাশলেস সেবার অনুমোদন পেয়ে প্রথমে তেঁতুলিয়ার তিরনইহাট ইউনিয়নে সেবাটির কার্যক্রম শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদ সহ পুরো জেলার ৪৩টি ইউনিয়নে যুক্ত হয়েছে ক্যাশলেস সেবা। এ সেবার মাধ্যমে গ্রহীতাদের হয়রানি কমে এসেছে এবং সরকারি খাতে সরাসরি রাজস্ব আদায় হচ্ছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যানরা।
তেতুঁলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বলেন, একটা সময় ছিল যখন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের একটা দুর্নাম ছিল। ক্যাললেসের মাধ্যেমে অর্থ লেনদনের ফলে সে দুর্নাম আর থাকছেনা। সাধারণ মানুষজনকে হয়রানি মুক্ত সেবা দিতে পেরে আমরা খুব খুঁশি।
ডিজিটাল ক্যাশলেস ইউনিয়ন সেবা চালুর পর ডিজিটাল পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে সেবামূল্য পরিশোধ করার ফলে সরাসরি ইউনিয়ন পরিষদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থ তছরুপের কোনো সুযোগ থাকছে না। সেবা গ্রহণের জন্য সেবাগ্রহীতাকে ইউনিয়ন পরিষদে আসার প্রয়োজন পড়েনা। ফলে এ উদ্যোগটির বড় ধরনের আর্থসামাজিক প্রভাব রয়েছে। সফটওয়্যারটি উভয় প্রান্তে অর্থাৎ সেবা প্রদানকারী ইউনিয়ন পরিষদ এবং সেবা গ্রহণকারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, এ সেবার মাধ্যেমে সাধারণ মানুষের মাঝে কাঙ্খিত সেবা পৌঁছে দেয়াই মুল লক্ষ্য। সেবা লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি ক্যাশলেস সেবাটি দ্রুতই সারা দেশে পৌঁছে যাবে।
জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, সরকারের কাছে সেবা নিতে জনগণ নয় বরং জনগণের দোরগোড়ায় সেবা নিয়ে যাচ্ছে সরকার। আগামী ২০৪১ সালের যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। সেটি পূরণ করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশের মধ্যে পঞ্চগড় প্রথম জেলা হওয়ায় প্রথম এই ক্যাশলেস সেবা চালু করা হয়েছে পঞ্চগড়ে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশ আরো একধাপ এগোল।
ক্যাশলেস উদ্যোগটি তেঁতুলিয়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন থেকে পঞ্চগড় জেলার ৪৩টি ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত অনলাইনের মাধ্যমে এ সেবা গ্রহণ করেছে প্রায় ৫৬ হাজার জন সেবাগ্রহীতা। ডিজিটাল এবং ক্যাশলেস ইউনিয়ন সেবা সিস্টেম তেঁতুলিয়া উপজেলায় পাইলটিং সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের মাধ্যমে সরকার সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় তা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।
এএজেড