'উন্নয়ন বৈষম্যের কারণে রংপুরে শিল্পায়ন হচ্ছে না'
উন্নয়ন বৈষম্যের কারণে রংপুর অঞ্চলে শিল্পায়ন হচ্ছে না। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় রংপুর বিভাগে দিন দিন দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। তাই রংপুর বিভাগের দারিদ্রের হার হ্রাসে প্রয়োজন দ্রুত শিল্পায়ন। সোমবার রংপুর চেম্বার ভবনের আরসিসিআই অডিটরিয়ামে রংপুর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির আয়োজনে রংপুর বিভাগের বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা শীর্ষক মত বিনিময় সভায় এসব কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন রংপুর বিভাগের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা।
রংপুর চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দি ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর সভাপতি ও বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ জসিম উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু ও এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতি মোঃ আমিন হেলালি।
রংপুর বিভাগের বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মোরশেদ হোসেন।
মত বিনিময় সভার প্রধান অতিথি দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, রংপুরের সম্ভাবনা ও সমস্যা, স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা, ডেল্টাপ্ল্যান, ২০৪১ সালের রূপরেখাসহ রংপুর বিভাগ নিয়ে যে বিস্তর পরিকল্পনা তুলা ধরা হয়েছে এফবিসিসিআই রিসার্চ সেল বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে রংপুরের শিল্পায়নের জন্য কাজ করবে।
তিনি বলেন, রংপুরের শিক্ষা ও সংস্কৃতি সারাদেশকে সমৃদ্ধ করেছে। কেননা বেগম রোকেয়ার রংপুর থেকে শুরু হয়েছিল নারী জাগরণ। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার আন্তরিকতায় এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্প ও বগুড়া থেকে রংপুর হয়ে সৈয়দপুর পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন লাইন প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে পাল্টে যাবে রংপুর অঞ্চলের অর্থনীতির চিরচেনা দৃশ্যপট। নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াত নিশ্চিতের পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে রংপুর বিভাগে।
রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি, এফবিসিসিআই এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি আলহাজ মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু এ অঞ্চলে কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে বিপুল সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে রংপুরে কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি শ্যামপুর সুগার মিলের পরিত্যক্ত জায়গায় স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপনের ব্যাপারে এফবিসিসিআই এর সভাপতি মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতি মোঃ আমিন হেলালি বলেন, রংপুর বিভাগের বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে যে মূল প্রবন্ধের গাইডলাইনে যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে তা রংপুর বিভাগে শিল্পে অনুকুল পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্ব ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, রংপুরে বেসরকারি খাত কোন দিকে ধাবিত হবে তার যে মাস্টারপ্ল্যান আজকে তুলা ধরা হলো সেটি নিয়ে এফবিসিসিআই রিসার্চ সেল কাজ করবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট রংপুর এর কমিশনার সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস, রংপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি আলহাজ মোঃ মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু, নীলফামারী চেম্বারের সভাপতি প্রকৌশলী এস এম সফিকুল আলম (ডাবলু), পঞ্চগড় চেম্বারের সভাপতি আলহাজ মোঃ আব্দুল হান্নান শেখ, কুড়িগ্রাম চেম্বারের আলহাজ আব্দুল আজিজ মিয়া, লালমনিরহাট চেম্বারের সভাপতি আলহাজ শেখ আব্দুল হামীদ, পঞ্চগড় স্মল টি গার্ডেন এসোসিয়েশন এর সভাপতি মোঃ আমিরুল হক খোকন, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি (নাসিব) এর রংপুর জেলা শাখার সভাপতি মোঃ রাকিবুল হাসান, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, রংপুর বিভাগীয় প্রতিনিধি ও রংপুর প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক মামুন ইসলাম।
বক্তারা বলেন, উন্নয়ন বৈষম্যের কারণে রংপুর বিভাগে শিল্পায়ন হচ্ছে না। শিল্পায়ন না হওয়ার কারণে রংপুর বিভাগে দিন দিন দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। তারা বলেন, সরকারের বাস্তবায়নাধীন মেগা প্রকল্পগুলোর বেশির ভাগ ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চল কেন্দ্রিক। যেখানে ইতিমধ্যে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন শুরু হলেও একটিও মেঘা প্রকল্পের কাজও শুরু হয়নি রংপুর বিভাগে।
বক্তারা রংপুর বিভাগে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে দ্রুত স্পেশাল ইকোনমিক জোন স্থাপনের পাশাপাশি এ অঞ্চলের জন্য আলাদা শিল্প ও ঋণনীতি, ভ্যাট ও কর নীতি প্রণয়ন, আইসিটি শিল্পের উন্নয়নে রংপুরে প্রস্তাবিত হাইটেক পার্ক দ্রুত স্থাপন, পঞ্চগড় চা নিলাম কেন্দ্র দ্রুত স্থাপন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য জামানত বিহীন ঋণের ব্যবস্থাকরণ, বুড়িমারী ও বাংলাবান্দা স্থলবন্দকে পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দরে রূপান্তর, সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমান বন্দরে দ্রুত রূপান্তর, ভ্যাট ও ট্যাক্স ব্যবস্থা সহজীকরণ, রংপুর বিভাগে কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে আগ্রহী করতে থোক বরাদ্দ প্রদান, রংপুর বিভাগে শিল্পের অনুকুল পরিবেশ তৈরি, ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু, অঞ্চল ও জেলা ভিত্তিক শিল্পায়নের উদ্যোগ গ্রহণ, দক্ষ শ্রমিক তৈরিতে কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ ট্যাক্স হলিডের মেয়াদ বৃদ্ধির আহ্বান জানান। এছাড়া বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করে বলেন দেশের অন্যান্য বিভাগের মতো ব্যাংক ঋণের সুদের হার বহাল রাখা হলে কোন অবস্থাতেই রংপুর বিভাগে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে না বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
মত বিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই এর পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মর্তাবৃন্দ, রংপুর বিভাগের ৯টি চেম্বার থেকে আগত চেম্বারের কর্মকর্তাবৃন্দ ও পরিচালকবৃন্দ, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ, নারী উদ্যোক্তাবৃন্দ, রংপুর চেম্বারের বর্তমান ও সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতিবৃন্দ, সহ-সভাপতিবৃন্দ, সাবেক নির্বাহী সদস্য ও পরিচালকবৃন্দ, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিবৃন্দ, আমদানি ও রপ্তানিকারকবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
এএজেড