বিদ্যালয়ে চাকরির নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার দাদুল চকিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নবীউল আলম বিশ্বাস ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কামরুজ্জামান শাহ কামরুর বিরুদ্ধে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, আয়া ও নৈশ্যপ্রহরী নিয়োগে বিভিন্ন পদে চাকরি দেয়ার নামে প্রত্যাশী প্রার্থীদের প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। ভুক্তভোগীদের তোপের মুখে ১ জন পদপ্রার্থীর আত্মসাৎকৃত অর্থ ৪ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
এ বিষয়ে পদপ্রার্থী ভুক্তভোগী ফুলবাড়ী উপজেলার কাজিহাল গ্রামের সাগরিকা রায়, কুলছুম বেগম, মেহেদী হাসান মিম, শাহাজান আলী ও চকিয়াপাড়ার শাহিন আলম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের বিষয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। অভিযোগের অনুলিপি, জেলা
প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সমন্বিত দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
লিখিত অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৩০ জুলাই উপজেলার দাদুল চকিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, আয়া ও নৈশ্য প্রহরীসহ ৪টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বেশ কয়েকজন চাকরি প্রত্যাশী পদগুলোতে আবেদন করেন।
আবেদনের পর সাগরিকা রায়ের কাছ থেকে আয়া পদে ১০ লাখ টাকা, কুলছুম বেগমের কাছে আয়া পদে ৬ লাখ টাকা, মেহেদী হাসান মিমের কাছে নৈশ্য প্রহরী পদে ১০ লাখ টাকা, শাহাজান আলীর কাছে নৈশ্য প্রহরী পদে ৮ লাখ টাকা এবং কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে শাহিন আলমের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নেয় বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কামরুজ্জামান শাহ কামরু ও প্রধান শিক্ষক নবীউল আলম বিশ্বাস।
আবেদনকারীদের এডমিট কার্ড না দিয়ে গোপনে গত সোমবার (৯ জানুয়ারি) বিকেলে দিনাজপুর জিলা স্কুলে ওইসব পদে নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনা চেষ্টা করে কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে ওই দিন ভুক্তভোগীরা জিলা স্কুলের সামনে অবস্থান নেন। পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নবীউল আলম বিশ্বাস ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান শাহ কামরু ৩ ভুক্তভোগীর টাকা ফেরত প্রদান করেন। ভুক্তভোগী অভিযোগকারী সাগরিকা রায় বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আমি আয়া পদে আবেদন করি।
নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক নবীউল আলম বিশ্বাস আমার কাছে ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন। আমি বাড়ীর জমি বিক্রি করে তাকে টাকা দিয়েছি। শুধু আমি না সব আবেদনকারীর কাছেই তিনি টাকা নিয়েছেন। কিন্তু গত ৯ জানুয়ারি আবেদনকারীদের কোনোপ্রকার নোটিশ করা ছাড়াই দিনাজপুর জিলা স্কুলে নিয়োগ বোর্ড বসানো হয়। যেহেতু আমরা আবেদন করেছি আর টাকা নিয়েছে আমাদের কাছ থেকে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে সেহেতু অবশ্যই আমাদেরকে জানানো উচিৎ ছিল।
প্রধান শিক্ষক তার আত্মীয়-স্বজনকে চুপিসারে ওইসব পদে নিয়োগ দেওয়ার পায়তারা করছিলেন। পরে জানতে পেয়ে আমরা ভুক্তভোগীরা দিনাজপুর জিলা স্কুলে অবস্থান নেই। এসময় কিছু ভুক্তভোগী ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষক নবীউল আলম বিশ্বাসকে মারধরও করেন। আমরা প্রধান শিক্ষককে টাকা দিয়েছি নিয়োগের জন্য সেটিরও প্রমাণ রয়েছে আমাদের কাছে। এ ঘটনার পর মেহেদী হাসানের ৪ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
আমার টাকাও ফেরত দিতে চেয়েছে। এতোকিছুর পরও যাচাই-বাছাই ছাড়া নিয়োগ বোর্ড বসে কিভাবে? বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নবীউল আলম বিশ্বাস বলেন, টাকা দেওয়া বা নেয়ার ঘটনাটি সত্য নয়। যারা আবেদন করেছেন তারা আমার সাথেই আছেন, তারা অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নিবেন। অভিযোগে আমার নাম ভুলঃবশত গেছে। আমি কারো কাছে টাকা নেইনি। এ বিষয়ে সভাপতির সাথে কথা বলুন, তিনি বিস্তারিত বলতে পারবেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য কামরুজ্জামান শাহ কামরু বলেন, ঘটনা সঠিক নয়, চাকরি নেয়ার জন্য আবেদনকারীরা টাকা দিচ্ছিলেন কিন্তু আমি নেইনি। পরে তারা জোর করে টাকা দিয়েছিলেন। যারা টাকা দিয়েছেন তাদের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শমশের আলী মন্ডল বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
আমি যতটুকু জানি, ৯ জানুয়ারি নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে সন্ধ্যায়। সারাদিন গন্ডগোল হয়েছে। আমি বিকেলে জিলা স্কুলে পৌঁছি। যেয়ে শুনি জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরীক্ষা নিবেন না। পরে অনুরোধ করার পর পরীক্ষা নিয়েছেন। আমি গিয়ে শুধু ভাইবা নিয়ে স্বাক্ষর দিয়ে চলে এসেছি। এর বেশি আমি কিছু জানি না। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মাদ জাফর আরিফ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি কোনো নিদের্শনা দেন, তবে সে নিদের্শনা বাস্তবায়ন করা হবে।
এএজেড