রংপুরে ৬ মাসে ভোক্তা অধিকারের কোটি টাকার রাজস্ব আদায়
রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চলতি অর্থবছরের গত ৬ মাসে ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা রাজস্ব জমা করেছে। বিভাগের ৮ জেলার হাট-বাজার, শপিংমল, বিপণিবিতানসহ উৎপাদন ও সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ভোক্তা সাধারণের স্বার্থ সংরক্ষণে সহস্রাধিকের বেশি অভিযান পরিচালনা করা হয়।
রংপুর ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে বিভাগের রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে ভেজালবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। একই সঙ্গে ভোক্তা সাধারণের স্বার্থ সংরক্ষণে তৎপরতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
রংপুর ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযানে বিভাগের ৮ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও শপিংমলের ১ হাজার ৮২৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করা, মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা, সেবার মূল্যতালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা, ধার্যকৃত মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে পণ্য বা ওষুধ বিক্রি, ভেজাল ওষুধ বিক্রি, খাদ্যদ্রব্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের প্রতারিত করা, প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে প্রদান না করা, ওজনে বা পরিমাপে কম দেওয়া, নকল পণ্য উৎপাদন, মেয়াদোর্ত্তীণ পণ্য বা ওষুধ বিক্রিসহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিচালিত অভিযানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর আলোকে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। গত ৬ মাসে ভোক্তা অধিকার পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে মোট ৮৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণাসহ বিভিন্ন অধিকার ক্ষুণ্নের কারণে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে একই সময়ে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়সহ বিভাগের ৮ জেলার জেলা কার্যালয়ে মোট ২৪৪টি অভিযোগ দায়ের করা হয়। এ সময়ে আগের বছরের অভিযোগসহ মোট ২৬৫টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। বর্তমানে ১৬১টি অভিযোগ অনিষ্পত্তি অবস্থায় রয়েছে। তদন্তে অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জরিমানা করে তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। আদায়কৃত জরিমানার অর্থ থেকে ভোক্তা অধিকার বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ২৪ জন অভিযোগকারীকে আদায়কৃত অর্থের মধ্য থেকে ২৫ শতাংশ হিসেবে ৪১ হাজার ২৫০ টাকা প্রদান করা হয়। এ সময়ে আদায়কৃত অর্থ থেকে সরকারি কোষাগারে ৮৮ লাখ ৫৩ হাজার ৭৫৫ টাকা রাজস্ব জমা করা হয়েছে।
রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আজাহারুল ইসলাম বলেন, ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ২০০৯ সালের বিধান প্রতিপালন এবং সেই অনুযায়ী ভোক্তা অধিকারবিরোধী কার্য প্রতিরোধের লক্ষ্যে ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে পণ্য উৎপাদন বা প্রস্তত বা বিক্রয়কালীন ভোক্তা স্বার্থ অধিকার ব্যাহত করার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, ভোক্তারা প্রতিনিয়ত যেসব পণ্য ক্রয় করতে গিয়ে জীবন ও সম্পদের ক্ষতিসহ নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন সে বিষয়ে প্রতারক ও জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে আমাদের সম্মিলিত অভিযান আরও জোরালো করা হবে। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের ৮ জেলার কর্মকর্তারা গত ৬ মাসে বিভিন্ন এলাকায় ৬২টি সচেতনতামূলক সভা ও ৫০টি সেমিনার করেছে।
এসজি