কঠোর নিরাপত্তায় সীমান্তে মাজার জিয়ারত
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও কট্টর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দরবেশ কছিম উদ্দিনের মাজার জিয়ারত অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ও সীমান্তে গিয়ে দেখা গেছে, মাজার জিয়ারত উপলক্ষে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যরা কাঁটাতারের বাহিরে ভারতের অংশে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৫০ গজের ভিতরে সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছে।
এছাড়াও ভারতীয় অংশে বিএসএফের বিশেষ কমান্ড বাহিনীসহ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশের শতশত সদস্য ভারি অস্ত্র নিয়ে টহল দিতে দেখা গেছে। অপরদিকে বাংলাদেশ অংশে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবির সদস্যরাও টহল জোড়দার করে সীমান্তে অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা প্রয়োজন ছাড়া বাড়ী থেকে বেড় হচ্ছেন না।
সীমান্তবাসী সুত্রে জানা গেছে, ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের নাখারজান সীমান্তের বিপরীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার সাহেবগন্জ থানার মনাইটারি সেউটি-২ এলাকার আন্তজার্তিক মেইন পিলার নংর৯৪১ এর সাব পিলার ১ এসের থেকে ৫ এসের নিকট জিরো লাইনে প্রায় ২০০ বছর পূর্বে আরব দেশ থেকে আসা দরবেশ কছিম উদ্দিন এ এলাকায় ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য আস্তানা গড়ে তোলেন। সেখানেই তিনি মৃত্যু বরণ করলে তাকে সেখানে কবরস্থ করা হয়।
তার মৃত্যুর পর সীমান্তের দুই পাড়ের লোকজন প্রতিবছর ১০ জনুয়ারী তার মৃত্যু দিবস উপলক্ষে ওরশ মোবারকের সঙ্গে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল উপলক্ষে বিশাল লোক সমাবেশ করে আসছিল। এখানে বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত এলাকার বসবাসকারীরা তাদের যৌথ আয়োজনে ওরশটি করে থাকে। এ অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক লোকের সমাগম ঘটে।
মূলত ধর্মীয় দৃষ্ঠি কোনের মধ্যদিয়ে দুই দেশের আত্মীয় স্বজনের মহামিলনে পরিনত হয় অনুষ্ঠানটি। কিন্তু সীমান্ত এলাকাটির মধ্যে দরবেশ কছিম উদ্দিনের মাজার থাকায় এবং এটি ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রনে হওয়ায় অনুমতি না থাকার কারণে বিএসএফ ওই ওরশ মোবারক ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে।
৮ জানুয়ারীর গভীর রাতে বিএসএফ ভারতীয় লোকজনের সহায়তায় দরবেশের মাজার নিয়ন্ত্রনে নিয়ে ছোট আকারে কাটাঁতারে বেড়া পেছিয়ে সবুজ রঙ্গের কাপড় দিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এরপর বিএসএফ সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ৫০ গজের ভেতর ভারি অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী করে টহল জোরদার করে। যাহা সীমান্তবাসীদের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি করেছে।
এছাড়াও ভারতীয় অংশের ভোনাতপুর, সেউটি-২, বশকোঠাল, শুকারুরকুটি, ধাপরারহাট, কুর্শারহাট পর্যন্ত এলাকায় বিএসএফসহ কমান্ড বাহিনী ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের শতশত সদস্য সশস্ত্র অবস্থায় টহল দিতে দেখা যায়। অন্যদিকে বাংলাদেশ অংশে বিজিবি সশস্ত্র অবস্থায় সতর্ক পাহারা দিতে দেখা যায়।
সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক আশরাফুল আলম ও শাহিন আলমনজানান, তারা বাপ দাদার আমল থেকে এই ধর্মীয় অনুষ্ঠান করে আসছিলেন। আজ থেকে ১০/ ১২ বছর আগে মাজার জিয়ারত করতে দুই দেশের হাজার হাজার মানুষে ঢলে মুখরিত ছিল মাজার প্রাঙ্গণ। সেই এক মিলন মেলায় পরিনিত হয়েছে। কিন্ত আইনি জটিলতার কারণে দুই দেশের মানুষের মাঝে মিলন মেলার দৃশ্যটি আর নেই।
আমরা চেয়েছিলাম দুই দেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে যদি এটি হতো তাহলে সীমান্তের নিকট যাদের আত্মীয় স্বজন রয়েছে তারা অনায়সে তাদের ভাবের বিনিময় করতে পারতো। ওরশে এসে দরবেশের মাজারে দোয়া ও মিলাদ পড়তে পারতেন। ১০-১২ বছর ধরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ শুধুমাত্র ভারতীয় ভক্তের জন্য মাজার জিয়ারতের অনুমিত দিয়েছেন। সে থেকেই আজ অবদি ভারতীয়রাই মাজার জিয়ারত করে আসছে।
নাকারজান এলাকার বাংলাদেশি নাগরিক আশকারুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন বলেন, রাতের অন্ধকারে সেউটি-২ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ৫০ গজের ভেতর দরবেশ কছিম উদ্দিনের মাজারটি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলেছে। তাছাড়াও বিএসএফ জিরো লাইনে সশস্ত্র অবস্থায় টহল জোরদার করায় সীমান্তে বসবাসকারী মানুষদের মাঝে আতংকের সৃষ্টি করেছে।
এ প্রসঙ্গে লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীন গংগারহাট ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার নুরুল হক জানান, কোন বাংলাদেশি ভক্ত যাতে ভারতে গিয়ে মাজার জিয়ারত করতে না পারে সেজন্য মঙ্গলবার ভোর রাত থেকে মাজার এলাকায় বিজিবির টহল জোড়দার করা হয়েছে। অনুষ্ঠান শেষ না হওয়ায় পর্যন্ত সার্বক্ষণিক বিজিবির টহল অব্যাহত থাকবে।
এএজেড