গোবিন্দগঞ্জে ধ্বংসের পথে লোহার শিকলে বাঁধা ‘ডিসপেনসারি’
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের কুঠিবাড়ীতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ভগ্নপ্রায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা লোহার শিকলে বাঁধা `ডিসপেনসারি’টিতে হরিলুট চলছে। জানালা, দরজা, টিনের চালার পর এবার লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ডিসপেনসারির ৪টি লোহার শিকল কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গেছে। শুধুমাত্র প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদাসিনতা আর সুদৃষ্টির অভাবে এটি(ডিসপেনসারি) ধ্বংশ হতে চললেও দেখার যেন কেউ নেই।
জানা যায়, নীলকরদের রাজত্ব শেষে জেলার গোবিন্দগঞ্জের এই ‘কুঠিবাড়ী’ মহারাজা স্যার প্রদোৎ কুমার ঠাকুরের অধীনস্থ হয় এবং মহারাজা প্রদোৎ কুমার ঠাকুর বাহাদুর এই কুঠিবাড়ীতেই তার জমিদারী প্রশাসনের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিণত করেন। এই কুঠিবাড়ীতে মহারাজা তার রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি বেশ কিছু উন্নয়নমূলক ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। অনেকের ধারণা, ওই সময়ই মহারাজা তার কর্মচারী ও প্রজাদের চিকিৎসা সেবার জন্য লোহার শিকলে বাঁধা এই ডিসপেনসারিটি প্রতিষ্ঠা করেন।
উপজেলা ভূমি অফিস ও অফিসার্স কোয়ার্টারের পেছনে ভগ্নপ্রায় অবস্থায় এখনও দাঁড়িয়ে আছে লোহার শিকলে বাঁধা ‘ডিসপেনসারি’টি। এতে পাওয়া যেত ছোট-খাট অসুখের জন্য বিনামূল্যে ওষুধ। এ কারণে এই ডিসপেনসারির ব্যাপক পরিচিতি ছিল।
ওই ডিসপেনসারি ঘরটিতে ৩টি কক্ষ ছিল। উত্তর-দক্ষিণে লম্বা এ ঘরটির উত্তর-দক্ষিণে ২টি ও পূর্ব-পশ্চিমে ২টি, মোট ৪টি বড় বড় মোটা শিকল দিয়ে মাটির সঙ্গে বাঁধা ছিল। ঝড়ে যাতে ডিসপেনসারি ঘরটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এ জন্য ৪টি লোহার শিকল দিয়ে মাটির সঙ্গে বাঁধা হয় এটিকে।
এরপর সরকারি ভাবে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা হলে এই ডিসপেনসারির কদর কমে যায় এবং এক সময় এর কার্যক্রম বন্ধ করে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকার পর এক সময় গঙ্গাজলি নামের এক সুইপার তার স্বামী-সন্তানদের নিয়ে এই ডিসপেনসারির বারান্দায় বসবাস শুরু করে এবং এখনও তার পরবর্তী পরিবার ডিসপেনচারীর সামনে আরেকটি টিনের ঘর তুলে বসবাস করে আসছে। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে কিছু নেশাখোর ডিসপেনসারি ঘরটির দরজা, জানালা, টিনসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র চুরি করে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে তাদের নেশার অর্থ জুগিয়েছে। এরই মধ্যে লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ৪টি লোহার শিকলও কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গেছে। শুধুমাত্র প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টির অভাবে আজ এই অবস্থা ঐতিহাসিক নিদর্শনটির। এখন এটি ধ্বংস হতে চললেও দেখার যেন কেউ নেই।
ডিসপেনসারির আঙ্গিনায় পরিবার নিয়ে বসবাসরত সুইপার গণেশ বাসফোর ও জনি বাসফোর জানান, কে বা কারা দরজা, জানালা, টিন, লোহার শিকল খুলে নিয়ে গেছে আমরা জানি না।
এ বিষয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, কিছুদিন আগেও এই ঐতিহাসিক ডিসপেনসারির দরজা, জানালা, টিনের চালা, লোহার শিকল সবই ছিল। কিন্তু এখন দেখছি অনেক কিছুই নেই। প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সামনে থেকে জমিদারী আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শনটি দিন দিন হরিলুট হয়ে যাওয়া দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম আব্দুল্লা-বিন শফিক বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। তবে আমি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এসআইএইচ