২ মাস বন্ধ থাকবে উত্তরাঞ্চলের চা-কারখানা
পঞ্চগড়ের চা-বাগানগুলোয় সুষ্ঠুভাবে ছাঁটাই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রবিবার (১ জানুয়ারি) থেকে ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ পর্যন্ত দুই মাস চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলো বন্ধ থাকবে। পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাাঁটাইয়ের সুপারিশমালা অনুযায়ী, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত চা-গাছ বিভিন্ন উচ্চতায় ছাঁটাই করতে হয়। টেকসই চা উৎপাদন ও গুণগত মান বাড়ানোর লক্ষ্যে পঞ্চগড় জেলার চা-বাগানগুলোতে সুষ্ঠুভাবে ছাঁটাই কার্যক্রম চালানোর স্বার্থে ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই মাস সব চা-কারখানায় কাঁচা পাতা সরবরাহ ও চা প্রক্রিয়াজাত বন্ধ থাকবে।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে সমতল ভূমিতে চা চাষ শুরু হয়। এরপর ২০০৭ সালে ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাট এবং ২০১৪ সালে দিনাজপুর ও নীলফামারীতে চা চাষ শুরু হয়। সব মিলিয়ে উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলায় বর্তমানে নিবন্ধিত ৯টি ও অনিবন্ধিত ২১টি বড় (২৫ একরের ওপরে) চা-বাগান আছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৭৪৫টি নিবন্ধিত ও ৮ হাজার ৬৭টি অনিবন্ধিত ছোট (২৫ একরের নিচে) চা-বাগান আছে।
২০২১ সালের তথ্য অনুযায়ী, উত্তরাঞ্চলে এ পর্যন্ত মোট ১১ হাজার ৪৩৩ দশমিক ৯৪ একর জমিতে চা চাষ সম্প্রসারিত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলে এ পর্যন্ত ৪৮টি চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা লাইসেন্স নিয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ে ২৪টি ও ঠাকুরগাঁওয়ে একটি কারখানা চালু আছে। কারখানাগুলো চা-চাষিদের কাছ থেকে সবুজ পাতা কিনে তৈরি চা বানায়। পঞ্চগড়ে উৎপাদিত চা চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের নিলাম বাজারে বিক্রি করেন কারখানার মালিকেরা। পঞ্চগড়ে চলতি বছরের মার্চে তৃতীয় নিলাম বাজার স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।
চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমে (২০২১) উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার (পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট) সমতল ভূমিতে কাঁচা চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার কেজি এবং সেখান থেকে তৈরি চা উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি। এবার উত্তরাঞ্চলে ১ কোটি ৭০ লাখ কেজির বেশি চা উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, সমতল ভূমিতে চা চাষের জন্য পঞ্চগড় ও আশপাশের জেলাগুলো অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এলাকা। চায়ের চাষ সম্প্রসারণে চাষিদের বিভিন্নভাবে সহায়তার মাধ্যমে তারা উদ্বুদ্ধ করছেন।
তিনি আরও বলেন, অন্যান্য অঞ্চলের চা-বাগানে তিন মাস পাতা সংগ্রহ বন্ধ থাকলেও সমতলের কাঁচা চা পাতা সংগ্রহে কিছুটা বেশি সময় লাগায় এখানে প্রুনিংয়ের বা ছাাঁটাইয়ের জন্য দুই মাস বন্ধ রাখা হচ্ছে। গত মৌসুমের তুলনায় উত্তরাঞ্চলে এবার প্রায় ২৫ লাখ কেজি বেশি চা উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া শিগগিরই পঞ্চগড়ে চায়ের নিলাম বাজার স্থাপন করবে সরকার।
এসএন