গ্রামের ক্ষেত-খামারই ইউটিউবার দয়ালের স্টুডিও
নামীদামি স্কুল বা কলেজে থেকে কখনও পড়ার সৌভাগ্য হয়নি তার। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নেই কোনো প্রশিক্ষণও। তারপরও সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছেন ইংরেজি বক্তা হিসেবে। ফেসবুক আর ইউটিউবের কল্যাণে পঞ্চগড়ের অজপাড়াগাঁয়ের এই তরুণ এখন আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে।
বলছিলাম ইংরেজিতে আলোড়ন সৃষ্টি করা পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের লক্ষ্যিদার গ্রামের কৃষক পুলিন চন্দ্র বর্মনের ছেলে ফেসবুক-ইউটিউবার দয়াল চন্দ্র বর্মনের কথা। ইংরেজি বলতে বলতে নেট দুনিয়ায় এখন ইংরেজি বালক। ইংরেজিতে অনর্গলভাবে কথা বলতে সোস্যাল মিডিয়ায় ভ্লগ তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন নেটিজেনদের। বিস্ময় জাগিয়েছেন নিজের গ্রামের মানুষদেরও।
গ্রামের ক্ষেত-খামারই তার স্টুডিও। জীবনের গল্পগুলোই কন্টেন্ট। ইংরেজিতে কথা বলে তারকা বনে গেছেন রাতারাতি। অথচ এই দয়াল তার শিক্ষাজীবনে একজন ঝরে পড়া শিক্ষার্থী ছিলেন।
অনর্গল ইংরেজি বলা দয়াল চন্দ্র বর্মণ একজন ইউটিউব সেলিব্রেটি। শিক্ষামূলক কনটেন্ট মেকার হিসেবে সামাজিক মাধ্যমে তার পরিচিতি। শুধু ফেসবুকেই ফলোয়ার লাখের অধিক। গল্পটা এ পর্যন্ত সাধারণ হতে পারতো কিন্তু দয়াল সবার চেয়ে আলাদা হয়ে উঠেছেন দারিদ্রতা আর ভীতি জয়ের নায়ক হিসেবে।
অর্থের অভাবে থেমে থেমে চলছে তার পড়ালেখা। পঞ্চগড় বিষ্ণু প্রসাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি পাস করতে পারলেও তার পাঁচ বছর পর উন্মক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দিয়েছেন এইচএসসি পরীক্ষা। এখনও রেজাল্ট প্রকাশ হয়নি। বাবার সঙ্গে খেতে কাজ করতে করতে ইংরেজিতে কথা বলার পারদর্শীতা ও সোস্যাল নেটওয়ার্কে ইংরেজিতে কনটেন্ট বানিয়ে এলাকায় হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন তিনি।
দয়াল চন্দ্র ঢাকাপ্রকাশ-কে জানায়, কঠিন সময় আমার ছিল সব-সময়। কিন্তু আমি নিজের উপর আস্থা রাখি। অনেকেই অনেক নেতিবাচক কথা আমাকে বলেছেন, কিন্তু আমি আমার মতো করে এগিয়ে গেছি। আমি একটা মেসেজ দিতে চাই যে, আমাদের বাংলাদেশের অধিকাংশ জায়গাই হচ্ছে গ্রাম্য এলাকা। অধিকাংশই আমরা গ্রাম থেকেই আসছি। গ্রাম থেকে আসছি বলে, অনেকে বিশ্বাস করে আমার দ্বারা কিছু হবে না। আর শহরে যারা থাকে, তারাই ভালো কিছু করে। এই বিশ্বাসটা আমাদের মাথায় ব্লক হয়ে আছে।
দয়াল আরও বলেন, এই ব্লকটা ভাঙার জন্যই আমি নিজের অবস্থান থেকে এই ইম্প্রুভ করার চেষ্টায় ছিলাম। আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশের যতো তরুণ রয়েছে, তাদের প্রত্যেকের মধ্যে সম্ভাবনা আছে। সবাই যদি সবার জায়গা থেকে নিজের সম্ভবটুকু কাজে লাগাতে চেষ্টা করে তাহলে আমরা কিন্তু বাংলাদেশকে পরিবর্তন করতে পারবো।
তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবাকে গৃহস্থালীর কাজে সহযোগিতা করছেন দয়াল। কাজের ফাঁকে ফাঁকে ছুটে যাচ্ছেন ফসলের মাঠে, কখনও দর্শনীয় জায়গায়। হাতে স্মার্টফোন দিয়েই ইংরেজিতে কনটেন্ট তৈরি করছেন। দয়ালের ইংরেজির পারদর্শীতা নিয়ে গর্ববোধ করছেন তার বাবা পুলিন চন্দ্র বর্মন।
তিনি বলেন, টাকার অভাবে তাকে ভালো কোনো স্কুল-কলেজে ভর্তি করতে পারিনি। কিন্তু তারপরেও আমার ছেলে এমন ইংরেজিতে পারদর্শী হয়ে উঠবে তা গর্ববোধ করছি। বছর তিনেক আগে মাটি বিক্রি করে ওকে ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন কিনে দেই। এটা দিয়ে সে আজকের অবস্থানে এসে ইন্টারনেটে সারাবিশ্ব চিনছে তাকে।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, দয়ালের ইংরেজি বক্তা হয়ে উঠা দেখে তারাও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। তারাও দয়াল চন্দ্র বর্মনের মতো হতে চাইছেন। এজন্য তারা ইংরেজি চর্চা করতে চলে আসছেন তার বাড়িতে।
এলাকাবাসীর মধ্যে গনেশ চন্দ্র, অমলেশ চন্দ্র ও গীতা রানী জানান, দয়ালের প্রতিভায় আমরা গর্বিত। সারাবিশ্ব তাকে চিনছে। সে এতো তারাতারি ভালো ইংরেজি বলতে পারে তা কল্পনাও করতে পারিনি। তার পাশাপাশি আরও ভালো গুণ রয়েছে। সে কিছুদিন আগে গ্রামবাসির মাঝে ২০০ কম্বল দিয়েছে আমাদের শীতার্ত মাঝে। তাই দয়ালের মেধার মূল্যায়নে সরকারকে এগিয়ে আসতে অনুরোধ করছি।
এএজেড